অভিজ্ঞ চোখে বুঝতে পেরেছিলেন, চিকিৎসা শুরু না হলে মৃত্যু অনিবার্য রোগীর। দেরি না করে শরীর থেকে বাঁ হাত আলাদা হতে বসা রোগীকে দ্রুত ওটিতে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য কর্মীদের। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় জখম যুবকের প্রাণ বাঁচিয়ে হাতটিও জুড়ে দেন আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রলয় পণ্ডিত। তাঁর তৎপরতাতেই যে ওই জখম যুবককে বাঁচানো গিয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার সুজয় বিষ্ণু। তিনি বলেন, “প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হওয়ায় ওই যুবকের প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। নিজেই ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করেছেন প্রলয়বাবু। তবে সঠিক সময় হাসপাতালে না আনলে বিপদ ছিল।”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের চেষ্টায় বেঁচে যান শামুকতলার বোরাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁচিশের দীপঙ্কর দাস। তৃণমূল কর্মী দীপঙ্করের সঙ্গে পাম্পসেটের ভাড়া নিয়ে প্রতিবেশী আরএসপি কর্মীদের গোলমাল হয়। বচসার সময় তাঁর বাঁ কাঁধে খানিকটা নীচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। কার্যত ঝুলে পড়ে তাঁর ওই হাতটি। সামান্য অংশই জুড়ে ছিল। আত্মীয়েরা তা গামছা, বিছানার চাদর দিয়ে ধরে কোনওক্রমে দীপঙ্করকে ঘটনার দুই ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার সময়ে রক্তে ভেসে যায় গাড়ি। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রক্তে ভাসতে থাকে শল্য বিভাগের মেঝেও। বিষয়টি দেখে উদ্যোগী হন চিকিৎসক প্রলয়বাবু।
প্রলয়বাবু জানান, যুবকের শরীর থেকে যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তাতে অন্যত্র কোথাও রেফার করলে রাস্তায় মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল। তাই সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় দশ ইঞ্চি লম্বা ও ছয় ইঞ্চি গভীর ক্ষত হয়েছিল। কাটা পড়েছিল কাধের হাড়। হাতকে ধরে রাখার ট্রপিজিয়াস, রম্বোয়েড মেজর, রম্বোয়েড মাইনর ও লিভেরটর ক্যাপুলি নামে গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশিগু আলাদা হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ৬০টির বেশি সেলাই করতে হয়েছে। আশা করছি, ওই যুবক ধীরে ধীরে সুস্থ হবেন। জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমল কংগ্রেস নেতা সৌরভ চক্রবর্তী জানান, চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করে ওই যুবকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ওই যুবক আমাদের দলের কর্মী। মহকুমা হাসপাতালের সীমিত পরিকাঠামোতে চিকিসকরা যে ভাবে পরিষেবা দিচ্ছেন তা প্রশংসাযোগ্য। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।”