খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল

হুঁশ ফিরল শিশুমৃত্যুতে, কাজে যোগ বিশেষজ্ঞের

শিশুমৃত্যুতে টনক নড়ল। টালবাহানা শেষে অবশেষে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে কাজে যোগ দিলেন বদলি হওয়া স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতি ও নাসর্দের দুর্ব্যবহারের কারণেই বৃহস্পতিবার বিকেলে মহকুমা হাসপাতালে একটি শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে খড়্গপুরে এসে কাজে যোগ দেন এক স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৮
Share:

হাসপাতাল সুপারের কাছে মৃত শিশুর পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

শিশুমৃত্যুতে টনক নড়ল। টালবাহানা শেষে অবশেষে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে কাজে যোগ দিলেন বদলি হওয়া স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতি ও নাসর্দের দুর্ব্যবহারের কারণেই বৃহস্পতিবার বিকেলে মহকুমা হাসপাতালে একটি শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে খড়্গপুরে এসে কাজে যোগ দেন এক স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বদলি করে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তারপর গত ২১ নভেম্বর তাঁকে ফের মহকুমা হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা নানা কারণ দেখিয়ে তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যালেই থেকে গিয়েছিলেন। ফলে মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে উঠছিল নানা অভিযোগ।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর আঠাশের শাহনাজ বিবি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এর পরে বুধবার ওই প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে ফিরে শাহনাজ বিবি ও তাঁর পুত্র নানা সমস্যায় ভুগতে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে মা ও শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের তাঁদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সময় মায়ের সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সদ্যোজাত ওই শিশুকেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়। এর পরেই হাসপাতালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিশুর আত্মীয় ও পড়শিরা। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতাল চিকিৎসকেরা ওই প্রসূতির সঠিক চিকিৎসা না করেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর ফলেই শাহনাজ বিবিকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এমনকী মায়ের স্তন দুগ্ধ না পেয়ে শিশুটিরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শিশুটির দাদু শেখ সেলিমের অভিযোগ, “আমরা বারবার দায়িত্বে থাকা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে বিষয়টি বললেও তিনি গুরুত্ব দেননি। মা ও ছেলের অবস্থা ক্রমে খারাপ হলেও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে সময়ে পাওয়া যায়নি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “পাশের এক মহিলা শিশুটিকে স্তন্য পান করাতে চাইলেও নার্সরা বাধা দিয়েছে। এমনকী সাহায্য চাইতে গেলে কর্তব্যরত নার্সরা কটূক্তি ও দুর্ব্যবহার করেছেন।”

শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। পরে ওই শিশুর পরিজনেরা সুপার ও থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগে হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সৌরভ সেনাপতি, কর্তব্যরত নার্স সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য, সুতপা রায়, সুস্মিতা হালদার, পাপিয়া দে ও অমিতা পাত্রের নাম রয়েছে। অভিযোগ দায়ের হলেও হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিলেই মামলা রুজু করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার ওই শিশুর ময়না-তদন্তও করা হয়। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই মহিলা এখনও ভাল আছেন। তবে শিশু মৃত্যুর পিছনে পরিবারের লোকেরা যে অভিযোগ তুলেছে, তার জন্য নার্সিং ইন চার্জের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অভিযোগের তদন্তও হবে। অবশ্য চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগের বিষয়টি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সরাসরি দেখবেন।” শুক্রবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “আমার ঘটনাটি শুনে মনে হয়েছে, দায়িত্বে নিশ্চয় কোথাও ঘাটতি রয়েছে। আমি এই বিষয়ে সুপারকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রী নায়েককে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। ফলে বিপুল রোগীর চাপ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হয় প্রসূতি বিভাগের অপর দুই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অর্কপ্রভ গোস্বামী ও সৌরভ সেনাপতির। পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে অনেক প্রসূতিকে রেফার করা হয়। বন্ধ ছিল স্ত্রী রোগের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারও (কোল্ড অপারেশনও)। গত ২১ নভেম্বর ফের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রী নায়েককেই মহকুমা হাসপাতালে ‘ডিটেলমেন্টে’ বদলি করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি মহকুমা হাসপাতালে কাজে যোগস দেননি। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দুবাবুর কথায়, “স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ কম থাকায় একটা সমস্যা ছিলই। শুক্রবার সকালেই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রী নায়েক কাজে যোগ দিয়েছেন।” অবশ্য প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসকের অভাবের বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়েছিল, যার অধিকাংশ কাজ নার্সরাই সামলান। আর অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও সব সময় লেবার রুমে তো তাঁরা বসে থাকবেন না। তাই ওই ঘটনা প্রসঙ্গে চিকিৎসকের অভাবের কথা ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন