২৪ ঘণ্টায় সাতটি শিশুর মৃত্যু হল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সদ্যোজাত থেকে ২০ দিন বয়সের ওই শিশুগুলি মারা যায়।
হাসপাতালের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অত্যধিক কম ওজন ও শ্বাসকষ্টের কারণে ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সেপ্টিসেমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে আর একটি শিশুর। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জ্যোতিষ দাস বলেন, “কালিয়াচক, মানিকচক, বৈষ্ণবনগর, পুরাতন মালদহ থেকে শিশুগুলিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে পাঠানো হয়েছিল।” কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তির সময় শিশুগুলির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। শনিবার ব্লগে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়ানও মন্তব্য করেন, “মালদহে যে শিশুগুলি রেফার হয়ে এসেছিল তাদের অবস্থা আগে থেকেই সঙ্কটজনক ছিল। তাই তাদের বাঁচানো যায়নি।”
শুক্রবার মানিকচকের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৌপ্রিয়া সরকার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সদ্যোজাতের ওজন ১ কেজি হওয়ায় তাকে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। রাতে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির চার ঘণ্টা পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়। মানিকচকের রাখি মণ্ডলের সদ্যোজাত সন্তানের শ্বাসকষ্ট শুরু হতেই তাকে রেফার করা হয়। ভর্তির পাঁচ ঘণ্টা পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলেই কালিয়াচক ও মোলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দু’টি শিশুকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। তাদেরও বাঁচানো যায়নি।
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কি সদ্যোজাতদের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই? পুরাতন মালদহের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পার্থসারথি রায় বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। শিশু জন্মানোর পর যদি সুস্থ থাকে, তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই রাখা হয়। কিন্তু শারীরিক জটিলতা থাকলে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করতে হয়। সেখানে সেই পরিকাঠামো রয়েছে।” একই কথা জানান মানিকচকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দীপ মজুমদারও। তিনি বলেন, “মানিকচক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসএনসিইউ থাকলেও শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। সঙ্কট কাটাতে প্রাথমিক ভাবে কিছু ক্ষণ এসএনসিইউতে রাখা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।”
এসএনসিউ এবং নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করানো হলেও, কেন শিশুদের বাঁচানো সম্ভব হল না? মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, কম ওজন, শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকায় শিশুদের বিশেষ ঘেরাটোপে রাখা হয়েছিল। তবু তাদের বাঁচানো যায়নি। ডেরেক জানান, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে রাজ্যে এসএনসিইউ ছিল ছ’টি। এখন সংখ্যাটা ৪০ হয়েছে। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের শেষে সংখ্যাটি ৫০-এ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে প্রাথমিক স্তর থেকেই সদ্যোজাতদের চিকিৎসার যাবতীয় পরিকাঠামো দেওয়া সম্ভব হবে।
রোগী মৃত্যুতে উত্তেজনা
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতের আত্মীয়রা। এই ঘটনায় শনিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। জানা গিয়েছে শুক্রবার রাত দু’টো নাগাদ মুর্শিদাবাদ থানার চন্দ্রপুর গ্রামের অমিত মণ্ডলকে (২৪) পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। ওই যুবকের মামা গৌতম মণ্ডল বলেন, “রাতে কোনও চিকিৎসক আসেননি। কার্যত বিনা চিকিৎসায় শনিবার সকালে মারা যায় অমিত।” হাসপাতাল সুপার দেবকুমার দে বলেন, “চিকিৎসক কিছুটা দেরি করে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু তার জন্য মৃত্যু হয়নি। অত্যধিক মদ্যপানের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।”