একুশ শতকের পুলকিত বিষাদ

নাটকের মুখ্য চরিত্র বেদান্ত একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। সঙ্গে আরও তিন জন— মধ্যবয়সি মায়া ও রাজকুমার এবং তাদের সঙ্গে এক যুবতী তিসি।

Advertisement

সুকোমল ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০০:০৩
Share:

নাটকের একটি দৃশ্য

একুশ শতক-এর অতি সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘পুলকিত বিষাদ’ নাটকটির প্রথম দিকে গতি নেই, কিন্তু চমক আছে। কোনও চরিত্র দরজা ভেদ করে বাইরে যাচ্ছে— এ তো রীতিমতো এক চমকই! আস্তে আস্তে এর পরে নাটকটি গতিময় হয়ে ওঠে।

Advertisement

নাটকের মুখ্য চরিত্র বেদান্ত একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। সঙ্গে আরও তিন জন— মধ্যবয়সি মায়া ও রাজকুমার এবং তাদের সঙ্গে এক যুবতী তিসি। বাড়িওয়ালা সাধনবাবু ভাড়ার জন্য তাগাদায় এলেও ওই তিন জনকে দেখতে পান না, কারণ তারা বেদান্তর কল্পনার সৃষ্টি। তাদের সঙ্গে বেদান্তর ঝগড়া হয়, তারা বেদান্তকে শাসন করে, উপদেশও দেয়। বাক্যহীনা মায়া সবটাই ইশারায় জানায়।

তাদের নতুন প্রতিবেশী পুলিশ অফিসার গগন আর তার স্ত্রী সৃজনী। একদিন সৃজনী তাদের ফ্ল্যাটে আলাপ করতে এলে বেদান্ত খুশি হয়। কারণ এক জন ‘আসল’ মানুষের সঙ্গে ঘরে বসে কথা বলা যাবে। কিন্তু ঘরের অন্যান্যরা তাকে নানা ভাবে সতর্ক করে, মেলামেশায় বাধা দেয়। বেদান্ত যদিও তা শোনে না। এমনকি যখন সৃজনী তার মদ্যপ স্বামীর মার খাওয়া থেকে বাঁচতে বেদান্তের ঘরে এসে আশ্রয় চায়, বেদান্ত তাকে ভিতরের ঘরে লুকিয়ে রাখে। গগনের প্রশ্নের উত্তরে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, সে কিছু জানে না।

Advertisement

বেদান্ত মুখে মুখে ক্যালকুলাসের কঠিন অঙ্ক সমাধান করতে পারে। যদিও প্রকৃতপক্ষে সে হল অটিস্টিক। সৃজনীর ভাইয়েরও একই রোগ ছিল। যা দু’জনকে আরও কাছে আনে।

একদিন গগনের অত্যাচার চরম পর্যায়ে যায়। রক্তাক্ত সৃজনী বেদান্তর কাছে পালিয়ে এসে, তার পাশে সোফায় বসে। তার পরে কথা বলতে বলতে বেদান্তের কোলে মাথা রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। স্বাভাবিক ভাবেই গ্রেফতার হয় বেদান্ত। তার বাসার অন্যান্যরা প্রত্যক্ষদর্শী হলেও পুলিশের কাছে তাদের অস্তিত্বই নেই। থানার বড়বাবু ‘অটিস্টিক’ বেদান্তকে মারধর করার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।

যদিও মেজবাবুর কাছে সেটাই একমাত্র পথ। এই জটিল পরিস্থিতির সমাধান হয় মঞ্চে...

প্রথম দিকে গতি বেশ কম হলেও, সৃজনীর আবির্ভাব থেকেই নাটক তার গতি খুঁজে পায়। আলোর ব্যবহার চমৎকার। হাতের ছবির ফ্রেম আর শেষে তাকে ফেলে দেওয়ার সুন্দর ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিচালক লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বেদান্ত চরিত্রে গম্ভীরা ভট্টাচার্য, তিসি চরিত্রে উজ্জয়িনী ঘোষ ও সৃজনী চরিত্রে মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় অসাধারণ।

শুধু একটিই প্রশ্ন। নাটকের শেষে কোনও সমাধান না দিয়ে, পরিচালক পুলকের পরিবর্তে বিষাদকেই কি অগ্রাধিকার দিলেন?

অনুষ্ঠান

• সেন্ট্রাল ক্যালকাটা সায়েন্স অ্যান্ড কালচার অর্গানাইজ়েশন ফর ইয়ুথ সম্প্রতি আয়োজন করেছিল ২২তম বাচিক কর্মশালা। শিশির মঞ্চে আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন জহর সরকার। উপস্থিত ছিলেন ঊর্মিমালা বসু, সোহাগ সেন, কাজল সুর প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন নিমাইচন্দ্র প্রামাণিক এবং রীতা পাল। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অনুপম চট্টোপাধ্যায়।

• আশুতোষ মেমোরিয়াল হলে সম্প্রতি শৌনক মিউজ়িক্যাল ট্রুপ আয়োজন করেছিল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শ্যামল মিত্রের স্মরণে ‘সে দিনের সোনাঝরা সন্ধ্যায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, মালবিকা ভট্টাচার্য, প্রশান্ত ধাড়া, মানসী ভট্টাচার্য, তরুণ মণ্ডল, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমা বসু, প্রদীপ সিদ্ধা, চৈতালি মিত্র, সুদীপ বসু, অজন্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিতকুমার দাস, সুবর্ণা ঘোষাল এবং রমা রায়চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন মলয় রায় এবং শম্ভু আশ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গোপালচন্দ্র দত্ত।

• অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে কালিন্দী নাট্যসৃজন সম্প্রতি আয়োজন করেছিল ‘গল্পগাথায় নাট্যমেলা— দ্বিতীয় পর্ব’। এই সন্ধ্যায় ‘নাটকের গান’ পরিবেশন করেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী, সৌমিত্র বসু প্রমুখ। এ দিন মঞ্চস্থ হয় কালিন্দী নাট্যসৃজনের নাটক ‘সম্পর্ক’। শ্যামাকান্ত দাসের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়।

• সম্প্রতি কলা মন্দিরে জ্যাজ় ও ব্যালে শোয়ের আয়োজন করেছিল সঙ্গীত কলা মন্দির। এই সাংস্কৃিতক সন্ধ্যায় অস্কার জ্যাজ় ব্যান্ড এবং রাশিয়ার দোলচে ভিতা ব্যালে শোয়ের দল অংশগ্রহণ করে। ছিল জ্যাজ় রক, জ্যাজ় পপ এবং স্মুথ জ্যাজ়ের উপস্থাপনা। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আন্দ্রে কাপুস্তিন, ভিয়াকেস্লাভ কিরুখিন, ভিক্টর কিপকাইভ, ভাদিম গুরবলিকভ, সার্গেই পাইজ়ভ, আইরিনা গ্রাচেভা, লিডিয়া চেগোদেভা, নাতালি কুচিয়েরিয়াভিখ প্রমুখ। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইটালি, তাইল্যান্ড,
মায়ানমার, নেপাল, ভুটানের কনসাল জেনারেল। এ ছাড়াও ছিলেন জার্মানি ও রাশিয়ার ডেপুটি কনসাল জেনারেল এবং লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও চিলির কনসাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন