Art exhibition

‘আই অ্যাম জাস্ট আ পার্টিকল অব দিস ল্যান্ড’

কাত্যায়ুন সাকলাত ভারতে স্টেনড গ্লাস শিল্পের ক্ষেত্রে এক বহু পরিচিত নাম।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:৩৪
Share:

কাত্যায়ুন সাকলাতের প্রদর্শনীর একটি চিত্র।

কলকাতার শিল্পীমহলে ‘কেটিদি’ নামেই তিনি বহুকাল ধরে জনপ্রিয়। ৮৩ বছরে এখনও কর্মঠ, সাবলীল উদ্যমে এঁকে চলেছেন ছবি। তাঁর প্রায় ৮০টি পেন্টিংয়ে এত বৈচিত্রের স্ফুলিঙ্গ তিনি আড়াল করেছিলেন এত কাল! ‘দেবভাষা’ শিল্পরসিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিল কাত্যায়ুন সাকলাতের চিত্রমালা। তাঁর এই নির্বাচিত পেন্টিংগুলি ‘জাস্ট কাত্যায়ুন’ নামে প্রদর্শিত হল। কলকাতায় তাঁর নিজস্ব গ্যালারি ‘কে টু’-তে ২০১২-য় একক প্রদর্শনীর পরে আরও বেশি কাজ সদ্যসমাপ্ত এই প্রদর্শনীতে দেখা গেল। প্রদর্শনীতে স্টেনড গ্লাসের কোনও কাজ ছিল না।

Advertisement

কাত্যায়ুন সাকলাত ভারতে স্টেনড গ্লাস শিল্পের ক্ষেত্রে এক বহু পরিচিত নাম। ১৯৭৩-এ ব্রিটিশ কাউন্সিল বৃত্তি পেয়ে তিনি প্রখ্যাত ‘মেডিয়েভ্যাল স্টেনড গ্লাস’ শিল্পী প্যাট্রিক রেইনতিয়েন্সের অধীনে বাকিংহ্যামশায়ারে বেশ কিছুকাল কাজ শিখেছিলেন। ফলিতকলা বিভাগে কিছুকাল মুম্বইয়ের জে জে স্কুল অফ আর্ট-এ পড়াশোনার পরে কলকাতায় ফিরে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে, তার আগে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন। দেশ-বিদেশের শিল্পকলার গভীর খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আত্মস্থ করেছেন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী আঙ্গিক থেকে আধুনিক বিমূর্ত শিল্পকলার নাড়িনক্ষত্র। যা তাঁর বর্তমান চিত্র প্রদর্শনী অনুধাবন করলে স্পষ্ট হয় আলাদা ভাবে। বহু ছবিতে সেই সব সূক্ষ্মতার প্রভাব লক্ষণীয়।

কাত্যায়ুন এ ভাবে দীর্ঘকাল আগেই নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাঁর টেকনিকে কত রকম মণিমুক্তোর ছন্দোময় উদাহরণ! স্টাইলাইজ়েশনে বারবার নাটকীয়তা এনে, স্পেস ও নৈঃশব্দ্যের এক রঙিন বাতাবরণ তৈরি করেছেন। অবয়ব বা কুশীলবেরা সেখানে অন্যান্য রূপ বা আলঙ্কারিক অরূপরতনের মধ্যে অবস্থান করেও কম্পোজ়িশনে এক গভীর ছন্দের অনুরণন বা ছন্দহীনতাকেও আশ্চর্য ভাবে উপলব্ধি করাচ্ছে।

Advertisement

বেশির ভাগ কাজই অয়েলের। তবে জলরং, অ্যাক্রিলিক, সাদা-কালো ড্রয়িং, পেন-ইঙ্ক, তুলির গভীর ও আন্দোলনরত চলন একই সঙ্গে নৈঃশব্দ্য ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। বর্ণ অপেক্ষাকৃত শুকনো। অবয়বপ্রধান চিত্রমালাই বেশি। তবু একটি জমজমাট আবহ ও অদ্ভুত নির্জনতার ছবি। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি গল্প, সঙ্গীত, স্বপ্ন, কবিতা এসব কিছুই নই...’ অথচ আশ্চর্য, তাঁর প্রতিটি চিত্রেই গল্প, সঙ্গীত, স্বপ্ন, কবিতা নিবিড় ভাবে চোখ টেনে নেয়। কিছু বা সুররিয়াল ঘ্রাণ পাওয়া যায়।

তাঁর ছবি অবয়বপ্রধান, পশুপাখি সংবলিত, সংযত উচ্ছ্বাস, স্থিরচিত্রের ভিন্ন সজ্জা, কথোপকথন, আড্ডা, ধাঁধা, প্যাটার্ন-প্রধান, আলঙ্কারিক বাস্তবতা-অবাস্তবতা, অন্দরমহল, বহির্বিশ্ব, বিষণ্ণতা, নাটকীয় বিষণ্ণতা, বিমূর্ত ছন্দের মায়াজাল, রূপবন্ধ ও তার বৈপরীত্যের ডিজ়াইনসদৃশ অঙ্কন, রেখা ও তার সূক্ষ্ম-স্থূল প্রকাশ, বর্ণের বিপুল, মিশ্র ও অতি চাপা-সংযত কথোপকথন। রূপ ও রূপবন্ধকে তিনি নিজের কায়দায় গড়েপিটে নিয়েছেন। তৈরি করেছেন অপরিচিত নির্মোহ স্বল্পবর্ণের এক-একটি স্টেজ। সেখানে স্টাইল পেয়ে যাচ্ছে অন্য মাত্রা। অতি অল্প কাজেও গভীর পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা যায়। রং ও রেখায় যার আশ্চর্য সরলীকরণ ঘটে। কখনও মনদ্রিয়ানের উলম্ব, আনুভূমিক, সমান্তরাল, রঙিন লাইনের কম্পোজ়িশনকে মনে পড়ায়। কোথাও হয়তো মিরো বা ক্লী থাকেন আড়ালে। রূপকথার মানবের সঙ্গে যেন পশু, জন্তু, সরীসৃপের একটি সংলাপ তৈরি হয়। অথচ সেখানে একফোঁটা সচিত্রকরণের বার্তা থাকে না। আবার সাদা-কালোর ব্রাশিং তাঁকে কালীঘাট ড্রয়িংয়ের মতো কাজ করতেও উদ্বুদ্ধ করেছিল। রিয়্যালিজ়মেও অসাধারণ।

রূপবন্ধ তৈরি করেছেন, অচেনা ডিজাইনসদৃশ ফর্মেশনে তারা মনুষ্যদেহের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে একটা মজার রচনায় ঢুকে যাচ্ছে। কিছুটা পৌত্তলিক, বাকিটা প্রখর বাস্তবের নির্দিষ্ট কিছু চেনা ফর্ম, যা স্বপ্ন ও অলীক কল্পনাতেও ছবিতে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। স্থিরচিত্রেরই কত না সাজসজ্জা, ভাবনা। স্টেনড গ্লাসের মতো রঙিন বিচ্ছুরণ গভীর ভাবে না থেকেও, একটা কোথাও যেন সেই আলোকচ্ছটাকে উপলব্ধি করায়। যেমন সেরামিকসের মতোও কিছুটা। খুব ফিনিশিং নেই, ওটাই স্টাইল। হালকা, গাঢ়, নিষ্প্রভ বর্ণ, সমতলীয় ঘষামাজা বর্ণ, বৈচিত্রের মধ্যে এই ঐক্যও নিপুণ ভাবে বিশ্লেষিত। ইউরোপীয় ও প্রাচ্য একটা ফ্লেভারও পাওয়া যায়। অনেক ছবিতেই শিশুসুলভ সরল স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে মিশে থাকা শিল্পের নিবিড় পাঠকে কুর্নিশ করতেই হয়। আবার বিমূর্ততা যেখানে তৈরি হচ্ছে, আলঙ্কারিক অনুপুঙ্খময়তায় বিবর্তিত হয়ে তা-ই চমৎকারিত্বের নিশানায় পর্যবসিত হচ্ছে। ডাইমেনশনাল এক চরম নাটকীয় রঙিন আলোর রূপকথা তাঁর ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন