জটিল অথচ লঘু মেজাজের

‘কেয়ার অব একলাটি’ নাটকটি দেখে এলেন মনসিজ মজুমদার নাট্যদলের নাম ‘ইচ্ছে মতো’, নাটকের নাম ‘কেয়ার অব একলাটি’ (রচনা : সৌরভ পালোধী, পরি : তূর্ণা দাশ)। নামের এমন চমকেই দর্শক সমঝে যান যে, মঞ্চে কিছু অভিনব ঘটবে। ঘটলোও তাই, কিন্তু নগদ প্রাপ্তি কেবল প্রযোজনার অভিনবত্ব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

নাট্যদলের নাম ‘ইচ্ছে মতো’, নাটকের নাম ‘কেয়ার অব একলাটি’ (রচনা : সৌরভ পালোধী, পরি : তূর্ণা দাশ)। নামের এমন চমকেই দর্শক সমঝে যান যে, মঞ্চে কিছু অভিনব ঘটবে। ঘটলোও তাই, কিন্তু নগদ প্রাপ্তি কেবল প্রযোজনার অভিনবত্ব। উচ্চবিত্ত জীবনের আকর্ষণে দীর্ঘকাল ধনী বিদেশে থেকে স্বদেশ-স্বজন-বিচ্ছিন্ন ছিন্নমূল নায়ক আত্ম-পরিচিতি হারিয়ে আংকল নামেই পরিচিত। এখন স্বদেশ, শৈশব ও অতীত জীবনের জন্যে স্মৃতিকাতর। মনে পড়ে স্ত্রীর মুখ, পিতার অন্ত্যেষ্টি, নাট্যচর্চা, পাড়ার চায়ের দোকান, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর প্রথম প্রেমিকার পদধ্বনি, যা পুঁজিবাদী সমাজের সুখস্বাচ্ছন্দে এত দিন সে ভুলে গিয়েছিল। অভিনব মঞ্চ (অভিজিৎ নন্দী ও তূর্ণা দাশ) দিক পাল্টায় দেশকালের অতীত-বর্তমানের সাঙ্কেতিক ব্যঞ্জনায়।

Advertisement

নতুন প্রজন্মের এক তরুণ মঞ্চে আসে, পুঁজিবাদী বিদেশে নতুন অভিবাসী এবং সেও স্বদেশ, স্বজন ও নিজের সংস্কৃতির আকর্ষণে দেশে ফেরার কথা বলে, কবিতা আওড়ায়, তবে রবীন্দ্রনাথ নয়, শ্রীজাত। আংকল রবীন্দ্রনাথকেই চেনে, নতুন যুগের কবিকে চেনে না, আর তরুণের দেশে ফেরার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করে না। প্রত্যেক প্রজন্মেই এমন তরুণ মোটা মাইনে আর ভোগবিলাসী জীবনের লোভে বিদেশে গিয়ে ফিরতে পারে না আর আংকেলের মতো চিরবিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ, নিজস্ব পরিচিতিহীন একাকীত্ব থেকে পরিত্রাণের পথ খোঁজে। আংকল মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিন নিয়ে মুক্তি পেতে চায়।

খুব সিরিয়াস ও জটিল বিষয় নিয়ে লঘু মেজাজের নাটক। মঞ্চায়নের অভিনবত্বে বক্তব্যের অভিঘাত উপযুক্ত মাত্রার ব্যঞ্জনা অর্জন করে না। ধবধবে সাদা ফাঁসিকাঠের মতো একটি দরজার ফ্রেম, একটি শীতার্ত গাছ, পিতামহ ঘড়ি আর একটি বেঞ্চের মঞ্চসজ্জায় প্রতীকী ব্যঞ্জনা থাকলেও প্রযোজনা অনেক সময় নিরক্ত মনে হয়।

Advertisement

তবে স্মৃতিকাতরতা, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ছিন্নমূল একাকীত্বের বেদনায় দীর্ণ আংকেলের ভূমিকায় নীল মুখোপাধ্যায়ের সিরিও-কমিক অভিনয় ও কোরাসের মতো ভবঘুরেদের গান প্রযোজনার আবেদন ধরে রাখে।

অভিসার হল পূর্ণ

দেবলীনা কুমারের পরিচালনায় ‘লাইহারাওবা, প্রাচ্য নাচের পাঠশালা’ রবীন্দ্রসদনে মঞ্চস্থ করেছিল তাদের পঞ্চম বার্ষিক নৃত্যানুষ্ঠান। ‘অভিসার’ নৃত্যনাট্যের আকারে পরিবেশন করলেন দেবলীনা ও সহশিল্পীরা। মথুরার পথপ্রান্তে শায়িত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্তর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে সুন্দরী বাসবদত্তা তাকে গৃহে নিয়ে যেতে উদ্যত হলেন। উপগুপ্ত তাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যথাসময়ে বাসবদত্তার সম্মুখে তিনি আবির্ভূত হবেন। এরপর চৈত্রমাসে গুটিবসন্তের প্রকোপে বাসবদত্তা সমাজের চোখে অপাংক্তেয় হলে উপগুপ্ত এসে তাকে আরোগ্য দান করেন। রবিঠাকুর রচিত ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’ গানটির সঙ্গে প্রদীপ হাতে নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে নৃত্যনাট্যর সূচনা হয়। এ ছাড়া ‘এই করেছ ভাল’, ‘রোদনভরা এ বসন্ত’, ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ গানগুলির যথাযথ প্রয়োগ অভিনন্দনযোগ্য। বাসবদত্তার ভূমিকায় দেবলীনার সুললিত ভঙ্গিমা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। উপগুপ্তের ভূমিকায় অভিরূপ সেনগুপ্ত চমৎকার। সহকারী শিল্পীরাও বেশ পরিণত।

চৈতি ঘোষ

নীর ও নীরা

সম্প্রতি এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার প্রথম পর্বে ছিল ‘নীর ও নীরা’। এখানে স্বর্ণযুগের বাংলা গানকে ফিরে দেখা হয়, এই সময়ের তরুণ-তরুণীদের দৈনন্দিন জীবন, স্বপ্ন, প্রেম-এর পরিপ্রেক্ষিতে। দ্বিতীয় পর্বে ছিল লোকগীতি ও লোকনৃত্য। শেষ পর্বে ছিল নাটক ‘দ্য রিয়েলিটি শো’। নাটক ও নির্দেশনায় পিয়াল ভট্টাচার্য। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধ্রুবা’ উপন্যাস অবলম্বনে এই নাটকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে সমসাময়িক বর্তমানের চালচিত্র। রাঘব চরিত্রে মিঠুন গুপ্ত, আন্না চরিত্রে সৌরভ দাস অনবদ্য। এ ছাড়াও ভাল অভিনয় করেছেন সহেলি সাহা, সায়নী রায়চৌধুরী। আয়োজক বিদ্যাসাগর কলেজ (দিবা)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন