প্র: হঠাৎ ইউরিনে রক্ত। চক্ষু চড়কগাছ। কী হবে এখন?উ: ইউরিনের সঙ্গে রক্ত পড়াকে আমরা হিমাচুরিয়া বলি। এ রকম যখন তখন সবারই হতে পারে। হিমাচুরিয়ায় ইউরিনের রং কখনও হালকা লাল কখনও বা গাঢ় লাল হতে পারে।প্র: ভয় পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তাই না?উ: আসলে এটা উপসর্গ। নানা রোগের কারণেই ইউরিনে রক্ত আসতে পারে।প্র: তাহলে তো এটা এক ধরনের সতর্কতা ...উ: অবশ্যই। আমরা বলি শারীরিক বিশৃঙ্খলা হলেও হিমাচুরিয়া পরোক্ষে মঙ্গলজনক। কারণ শরীরে লুকনো রোগ থাকার কারণে ইউরিনে রক্ত আসে। রক্ত বেরিয়ে না এলে সেই রোগ ধামা-চাপা থাকত। পরে তা চূড়ান্ত আকার নিত। আগাম জানতে পারায় সতর্ক তো হওয়া গেল।প্র: তা হলে তো অতটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাই না?উ: তাই বলে এই সমস্যাকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। বড় ও জটিল রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও এমনভাবে রক্ত পড়তে পারে। তাই একে সতর্কতামূলক সংকেত বলে ধরে নেওয়াই ভালো।
প্র: কখন ও কাদের হিমাচুরিয়া হতে পারে?
উ: শৈশব থেকে বার্ধক্য যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে এটা হতে পারে। নারী কিংবা পুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হয়।
প্র: সাধারণত দেখেছি যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই এই সমস্যাটা বেশি হয়। কেন?
উ: কারণ তিনটি। প্রথমত, মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ। দ্বিতীয়ত, কিডনিতে পাথর। তৃতীয়ত, ক্যানসার।
প্র: কিন্তু ঠিক কী কারণে ইউরিনের সঙ্গে রক্ত পড়ছে তা বোঝা যাবে কী করে?
উ: ব্লাড কাউন্ট করে রক্তের হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা দেখে নেওয়া হয়। দুই, ইউরিন কালচার করা হয়। কখনও বা মূত্রথলির আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। অর্থাৎ দেখা হয় হিমাচুরিয়ার মূলে শুধুই সংক্রমণ, না কি সঙ্গে কিডনি স্টোন বা ক্যানসার আছে।
প্র: অনেকেরই শুনি ইউরিন হলেই জ্বালা করছে, গায়ে জ্বর জ্বর থাকছে। তার মানে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)?
উ: হ্যাঁ। তবে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদেরই এটা বেশি হয়। বি-কোলাই জীবাণুর আক্রমণে এই সংক্রমণ হয়। মহিলাদের এই রোগ দুটি বিশেষ বয়সে বেশি হয়। প্রথমত, যারা সদ্য বিবাহিত জীবন শুরু করেছেন। আর দ্বিতীয়ত, যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে।
প্র: তাহলে পুরুষদের হিমাচুরিয়া কেন হয়?
উ: প্রস্টেট গ্রন্থির জন্য।
প্র: কিডনি স্টোন হলেও কি এমন হবে?
উ: নানা কারণে কিডনি স্টোন হতে পারে। এই স্টোন থেকে দু’ ভাবে হিমাচুরিয়া হতে পারে। ঘষা লেগে কিংবা সংক্রমণ হওয়ার কারণে।
প্র: কিডনি স্টোন কী ভাবে সরানো হবে?
উ: প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কারও কারও এর পরেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
প্র: তা হলে উপায়?
উ: লিথোটিপসি ও পিসিএনএল (পারকিউটেনাস নেফ্রোলিথোটমি) এর সাহায্যে শরীর থেকে তা বের করে দেওয়া হয়। খুব ছোট স্টোনের ক্ষেত্রে লিথোট্রিপসি করা হয় অর্থাৎ একটি যন্ত্রের সাহায্যে সেই স্টোনকে গুঁড়ো গুঁড়ো করে বের করে দেওয়া হয়। এতে অ্যানাস্থেসিয়া লাগে না, ক্ষত হয় না, ব্যথা লাগে না, সংক্রমণও হয় না।
প্র: আর পিসিএনএল?
উ: একে ‘কি হোল সার্জারি’ও বলে। চামড়া ফুটো করে কিডনি থেকে স্টোন অপসারণের পদ্ধতি। জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া করা এই সার্জারির জন্য মাত্র এক থেকে দু’ ঘণ্টা সময় লাগে। লিথোটিপসিতে যখন কাজ হয় না কিংবা টুকরো হয়ে যাওয়া পাথর ইউরিনারি সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না, তখন এই সার্জারির প্রয়োজন হয়।
প্র: ইউরিন থেকে রক্ত পড়লে অনেকে তো ক্যানসারের পূর্বাভাস বলেও ভয় পান। তাই না?
উ: হ্যাঁ, ক্যানসারের কারণেও হিমাচুরিয়া হয়। ঘুরিয়ে বলা যায় হিমাচুরিয়া হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ক্যানসার। মূত্র তন্ত্রের যে কোনও জায়গায় এই ক্যানসার হতে পারে। যেমন: কিডনি, প্রস্টেট, মূত্রথলি ইত্যাদি।
প্র: কিন্তু এটা ক্যানসারের কারণেই হচ্ছে তা বুঝব কী করে?
উ: সে জন্যেই তো আলট্রাসাউন্ড ও কিডনিতে কোনও টিউমার হয়েছে কি না তা দেখা হয়। বায়োপসিও করা হয়।
প্র: এর চিকিৎসা কী?
উ: টিউমারের চরিত্র ম্যালিগন্যান্ট পর্যায়ের হলে কিডনি কেটে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে সম্পূর্ণ আরোগ্যের সম্ভাবনা থাকে। অন্য দিকে মূত্র থলিতে টিউমার থাকলে প্রয়োজনমতো কেমোথেরাপি করা হয়। আশার কথা, ক্যানসারের কারণে যদি ইউরিনের সঙ্গে রক্ত পড়ে তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে সেটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
যোগাযোগ-৯৮৩০০১০০০৪