গ্যাসের ব্যথা ভেবে হার্টের রোগীকে ফেলে রাখবেন না

দেরি হলেই বিপদ। সতর্ক করলেন ডা. শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়বয়সের কোনও বাছবিচার নেই। ৩৫-৪৫ বয়সেই বুকে ব্যথা। তা-ও আবার রাতবিরেতে। সেই মুহূর্তে কী করব? বুকে ব্যথা মানেই সব সময় যে খুব খারাপ, তা নয়। আবার হতেও পারে ব্যথার কারণ হার্ট। এমনটা হলে বাড়িতে ডাক্তারি না করে রোগীকে তড়িঘড়ি কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share:

প্র: বয়সের কোনও বাছবিচার নেই। ৩৫-৪৫ বয়সেই বুকে ব্যথা। তা-ও আবার রাতবিরেতে। সেই মুহূর্তে কী করব?
উ: বুকে ব্যথা মানেই সব সময় যে খুব খারাপ, তা নয়। আবার হতেও পারে ব্যথার কারণ হার্ট। এমনটা হলে বাড়িতে ডাক্তারি না করে রোগীকে তড়িঘড়ি কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
প্র: গ্যাস-অম্বলের জন্যও তো বুকে ব্যথা হয়। খামখা হাসপাতালে যাব কেন?
উ: তেমন মারাত্মক কিছু না হলে বাড়ি চলে আসবেন। একবার দেখিয়ে নিলে নিশ্চিন্ত।
প্র: হাসপাতালে যে সব সময় ডাক্তার পাব, তেমন নিশ্চয়তাও তো নেই...
উ: জরুরি বিভাগ আছে, এমন হাসপাতালে যাবেন। আগে থেকেই খোঁজ রাখবেন আপনার বাড়ির আশপাশে কোন হাসপাতালে এই সুবিধে আছে।
প্র: অ্যাসিডিটি থেকেও তো গলা-বুক জ্বালা করে। সমস্যাটা হার্টের না গ্যাস-অম্বলের, সেটা বুঝব কী করে?
উ: আপনি কেন, ডাক্তাররাও অনেক সময় বুঝতে পারেন না।
হার্টের সমস্যা হলে অনেকে অনেক রকম বলেন। কেউ কেউ বলেন বুকে জ্বালা করছে। বুকের মাঝে চাপ ধরা ব্যথা। আবার বুকে ব্যথা না হয়ে ঘাড়ে, পিঠে বা চোয়ালেও ব্যথা হতে পারে। ব্যথা বাঁ হাতের দিকেও নেমে আসতে পারে। ডায়বেটিস রোগীরা আবার এ সব কিছুই টের পান না। হঠাৎ করে ঘামতে শুরু করলে বা শ্বাসকষ্ট হলে একটা আভাস পাওয়া যায়। ব্যথার ধরন দেখে নিশ্চিত ভাবে কিছু বোঝা যায় না। তবে অ্যাসিডিটি সন্দেহ করে প্রথমে কিছু ওষুধ খেতে পারেন।

Advertisement

প্র: লিক্যুইড অ্যান্টাসিড?

উ: লিক্যুই়ডও খেতে পারেন। আবার ট্যাবলেটও চিবিয়ে খেতে পারেন। নিছক অ্যাসিডিটি হলে মিনিট পনেরো-কুড়ির মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু যদি দেখেন আবার ব্যথা বা জ্বালা ফিরে আসছে, কালবিলম্ব না করে হাসপাতালে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন। বাড়িতে ডাক্তার ডাকবেন না।

Advertisement

প্র: ডাক্তারই তো বুঝতে পারবেন হাসপাতালে যাওয়ার দরকার আছে কি না...

উ: ডাক্তার আসার জন্য অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করবেন না। এ ক্ষেত্রে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বড় বিপদ হতে পারে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছে একটা ইসিজি আর ট্রপোনিন টি টেস্ট করলে বোঝা যাবে সমস্যাটা হার্টের কি না।

প্র: ট্রপোনিন টি কী ব্যাপার?

উ: এক রকমের রক্ত পরীক্ষা। ওষুধের দোকানে এক রকমের কিট পাওয়া যায়। সেটা দিয়েই চটজলদি এই পরীক্ষা করে নিলে বোঝা যায় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে কি না। অনেকটা বাড়িতে সুগার পরীক্ষা করার মতো।

প্র: ওষুধের দোকানে পাওয়া গেলে তো বাড়িতেই এই পরীক্ষা করা যাবে?

উ: হ্যাঁ। করতে পারেন। কিন্তু ঠিক মতো না করতে পারলে ফলাফল ঠিক না-ও আসতে পারে। আর বাড়িতে এত সব তোড়জোড় করতে করতে সময়ও অনেক নষ্ট হয়ে যায়।

প্র: কাছাকাছি হাসপাতাল না থাকলে বা পৌঁছতে দেরি হলে কী করব?

উ: জিভের তলায় একটা সরবিট্রেট দিলে ব্যথাটা খানিক ধরবে। আর ২০০ মিলিগ্রামের একটা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট জিভের তলায় দিয়ে দেবেন। অ্যাসিডিটি হলে অ্যাসপিরিন উল্টে সেটা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু সমস্যা হার্টের জন্য হলে এটাই কাজে দেবে। রোগীর ঘাম হলে জামাকাপড় আলগা করে দেবেন। বমি হলে এক দিকে কাত করে শুইয়ে দেবেন।

প্র: আগে হার্ট অ্যাটাক মানেই ছিল বয়স্কদের সমস্যা। এখন তো কমবয়সিদের আকছার শোনা যাচ্ছে...

উ: হ্যাঁ। এখনকার লাইফস্টাইল এর জন্য অনেকটা দায়ী। তার ওপর অফিস-বাড়ি সবেতেই বিশাল চাপ। সব মিলিয়ে খুব কম বয়স থেকেই প্রেশার-সুগার সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে। তা হার্টের আর দোষ কী বলুন!

প্র: চাপ তো থাকবেই। তাই বলে এক্কেবারে হার্ট অ্যাটাক?

উ: চাপ একটা রিক্স ফ্যাক্টর। সেটাকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে অন্য রিক্স ফ্যাক্টরগুলোকেও কাছে ঘেঁসতে দেবেন না। একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু পারবেন।

প্র: মানে ধূমপান আর অ্যালকোহল বন্ধ। তার ওপর এটা খাবেন না, সেটা খাবেন না, এটাই তো বলছেন?

উ: অ্যালকোহল খুব কম মাত্রায় চলতে পারে। তাতে হার্টের খুব একটা ক্ষতি হয় না। তাই বলে কোনও ডাক্তারই আপনাকে অ্যালকোহল খেতে বলবেন না। খাওয়াদাওয়ার মধ্যে মিষ্টি আর রেড মিট যতটা সম্ভব কম। আর ধূমপান এক্কেবারে বন্ধ।

প্র: মিষ্টিও হার্টের জন্য ক্ষতিকর?

উ: দেখা গেছে, রেড মিট আর মিষ্টি একই রকম ক্ষতিকারক। মিষ্টি ক্যালোরি ভীষণ রকম বাড়িয়ে দেয়। মাঝে মধ্যে এক-আধটা চলতে পারে। তার বেশি নয়। আর যেটুকু খাবেন, মাথায় রাখবেন সেই ক্যালোরি এক্সারসাইজ করে ঝরিয়ে ফেলতে হবে।

প্র: ওটাই যে মুশকিল। করব করব করেও এক্সারসাইজ করা হয় না। বিরক্ত লাগে...

উ: এ ব্যাপারে কোনও ছাড় নেই। আর কিছু না করুন রোজ আধ ঘণ্টা ব্রিস্ক ওয়াকিং করবেন। হাঁটার সময় ঘাম হবে। পালস দ্রুত চলবে। হাঁপিয়ে যাবেন। তবে পাশের লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। যদি দেখেন পাশের লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না, তবে বুঝবেন গণ্ডগোল। আধ ঘণ্টা একবারে করতে না পারলে পনেরো মিনিট করে দুই বারে করবেন। সপ্তাহে কম পক্ষে পাঁচ দিন করতে হবে। তার কম করলে কাজ নাও হতে পারে। আসলে এগুলো মেনে চলাও জরুরি। অনেকে নিয়মের তোয়াক্কা করেন না।

প্র: ধূমপান অনেকেই একেবারে ছাড়তে পারেন না। কিন্ত তুলনামূলক ভাবে কম খেলে কোনও সুরাহা হবে?

উ: সিগারেট কম খেলে ফুসফুসের ক্ষতি খানিকটা কম হতে পারে। কিন্তু হার্টের দিক থেকে বেশি সিগারেট খেলেও যা ক্ষতি হতে পারে, কম সিগারেট খেলেও একই রকম ক্ষতি হতে পারে।

যোগাযোগ-৯৭৪৮৮১৬৪০৭

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন