ট্র্যাজিক ‘নিরো’

বহুরূপীর প্রযোজনায় চমৎকার ভাবনা। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ।উচ্চাকাঙ্খা, ক্ষমতা, হিংসা, হত্যা। যুগের পর যুগ অতিক্রম করে আজও তা নতুন চেহারায় জন্ম নিচ্ছে। ‘বহুরূপী’র সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘নিরো’ আবারও প্রমাণ করল নৃশংসতা ও আগ্রাসনের পারদ আরও ঊর্ধ্বমুখী। খ্রিষ্টাব্দ ৬২, রোম। সেই রোম যে উপহার দিয়েছিল সভ্যতার শ্রেষ্ঠ কিছু নিদর্শন। কিন্তু তার পর? বহুরূপীর এই প্রযোজনায় প্রতিটি দৃশ্যেই উত্তেজনার পারদ বেড়েছে, সেই সঙ্গে কৌতূহলও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

উচ্চাকাঙ্খা, ক্ষমতা, হিংসা, হত্যা। যুগের পর যুগ অতিক্রম করে আজও তা নতুন চেহারায় জন্ম নিচ্ছে। ‘বহুরূপী’র সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘নিরো’ আবারও প্রমাণ করল নৃশংসতা ও আগ্রাসনের পারদ আরও ঊর্ধ্বমুখী। খ্রিষ্টাব্দ ৬২, রোম। সেই রোম যে উপহার দিয়েছিল সভ্যতার শ্রেষ্ঠ কিছু নিদর্শন। কিন্তু তার পর?
বহুরূপীর এই প্রযোজনায় প্রতিটি দৃশ্যেই উত্তেজনার পারদ বেড়েছে, সেই সঙ্গে কৌতূহলও।
আট বছর হল রোমের সিংহাসনে বসেছেন সম্রাট নিরো। ক্ষমতাকাঙ্খী মা অ্যাগ্রিপ্পিনাই নিরোর অভিভাবক। তাঁরই ইচ্ছায় নিরোর শিক্ষক ও পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় রোমের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক প্রাজ্ঞ সেনেকাকে। প্রথম পাঁচ-বছর নিরো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন সুশাসক হিসেবে, জনপ্রিয়ও হয়ে উঠলেন দ্রুত।
কিন্তু নাটকের শুরু অত্যাচারী বিধ্বংসী, জনমানুষের বিপরীত মেরুতে থাকা নিরোকে দিয়ে। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে সুশাসক নিরো, সংগীত, কাব্য, থিয়েটারের গুণগ্রাহীও। কিন্তু নিরো কী করে হয়ে উঠলেন অহঙ্কারী, অত্যাচারী, হত্যাকারী? সেই যাত্রাপথের ইতিবৃত্ত উপস্থাপন না করেও নাট্যকার রতন কুমার দাস অন্য ‘নিরো’কে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। নিরো যখন তাঁর বর্তমান স্ত্রী সৎবোন অকটেভিয়াকে বলেন – ‘যেদিন ক্লডিয়াস, তোমার মা মেসালিনাকে হত্যা করে বিবাহ করেছিল আমার মা অ্যাগ্রিপ্পিনাকে, তার চতুর্থ স্ত্রী হিসাবে, সেদিন অনেক অসম্মানের সঙ্গে বরণ করতে হয়েছিল সম্মানকে।’ অসাধারণ সংলাপ। অসাধারণ অনুভূতি।
তখন দর্শক মানসিক টানাপড়েনে বিধ্বস্ত সত্যিই এক অন্য নিরোকে দেখতে পায়। জনপ্রতিরোধে আক্রান্ত নিরোর আত্মহননে ছড়িয়ে পড়ে এক ট্র্যাজিক আবহ।
ইতিহাসের পাতা থেকে এই নিরোকে তুলে আনেন নির্দেশিকা তুলিকা দাস।
তাঁর পরিচালনায় ‘বহুরূপীর’ই একঝাঁক নবীন শিল্পী অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। আটষট্টি বছরের দলটির সাংগঠনিক ভিত কত মজবুত তা আর দ্বিতীয় বার বলার অপেক্ষা রাখে না।
নিরোর ভূমিকায় নতুন মুখ ঋষভ বসু। তাঁর অভিনয় দক্ষতা ভবিষ্যতের দিশা দেখায়। বিচক্ষণ, প্রাজ্ঞ সেনেকার চরিত্রে দেবেশ রায়চৌধুরী অনবদ্য। ধমনী ছিন্ন হবার পর তাঁর সংলাপ ও মৃত্যু দৃশ্যটি ভোলবার নয়। বহু দিন মনে থাকবে সেই দৃশ্য।

Advertisement

ভাল লাগে অ্যাগ্রিপ্পিনা (সুমিতা বসু), অকটেভিয়া (ঝিনুক সরকার), অ্যানালুস (প্রবাল মুখোপাধ্যায়) এবং জননেতা পিসো (ময়ূখ দত্ত) কে। নাটকের শুরুতেই সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের নেপথ্য ভাষ্যের সঙ্গে দৃশ্যায়ন এবং ‘কার্টেন কল’ চমৎকার ভাবনা।

অসাধারণ আলো (সুদীপ সান্যাল) ও আবহ (দেবজ্যোতি মিশ্র)। দুইয়ের সংমিশ্রণে নাটকটি অন্য মাত্রা পেয়েছে।

Advertisement

মঞ্চসজ্জায় সৌমিক-পিয়ালি। পোশাক পরিকল্পনা চমকে দেয়। তবে একটি কথা বলতেই হয়, মদ্যপ জনতার দৃশ্যটি অভিনব।

কোরাস বা জনতার ভূমিকা, খ্রিষ্ট সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মারা ও পাশাপাশি চলতে থাকা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার দৃশ্যগুলি আরও জোরদার হতে পারত।

লাইয়র বাদ্যে নিমগ্ন নিরো – একই সঙ্গে মাতৃ হন্তারক, ধ্বংসের মাতনে উন্মত্ত ‘নিরো’ এক দহনকালের ইতিবৃত্ত তৈরি করে – যা সমসময়ে সত্যিই এক জরুরি প্রযোজনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন