Govt Art College

‘ধূসর কিশোর সব সহপাঠী কোথায় যে করেছে প্রস্থান...’

‘শূন্য দুই’ দলের সদস্যদের প্রায় সকলেই বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হলেও, সকলেই এই প্রদর্শনীতে পেন্টিংই দিয়েছেন।

Advertisement

অতনু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৯
Share:

মৃণ্ময়ী: গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ২০০২ সালের ব্যাচের সমবেত প্রদর্শনীর কাজ

গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ২০০২ সালের ব্যাচ। ‘ব্যাচ জ়িরো টু’। ‘শূন্য দুই’। তাঁরা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সমবেত প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আঠেরো জনের প্রায় পঞ্চাশটি কাজ নিয়ে অ্যাকাডেমিতে তাঁদের প্রথম প্রদর্শনীটি শেষ হল।

Advertisement

‘শূন্য দুই’ দলের সদস্যদের প্রায় সকলেই বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হলেও, সকলেই এই প্রদর্শনীতে পেন্টিংই দিয়েছেন। অথচ আশ্চর্য যে ইন্ডিয়ান পেন্টিং, স্কাল্পচার, অ্যাপ্লায়েড আর্ট, গ্রাফিক ডিজ়াইন, সেরামিক, টেক্সটাইল, উডক্রাফ্টের বর্তমান আঠেরো জনের মধ্যে ‘ওয়েস্টার্ন পেন্টিং’-এর কোনও সদস্যই নেই। এই প্রদর্শনীতে নেই কোনও ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, সেরামিক, টেক্সটাইল, উডক্রাফ্ট বা কমার্শিয়াল আর্টের কোনও কাজ। অন্য বিষয়ের মধ্য থেকেও ডিজিটাল পেন্টিং ও পেন্টিংকেই তাঁরা প্রদর্শনীর জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন। তবে ভাল, দুর্বল, মন্দ সব রকম কাজই ছিল।

সজল কর্মকারের জলরঙের হাত বেশ পাকাপোক্ত। রচনার অনুপুঙ্খময়তা, দূরত্ব, বিশেষ করে অ্যারেঞ্জমেন্ট ও ছবির আলো-অন্ধকারের বাস্তবানুগ প্রয়োগের দিকটি তাঁর কাজে যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। কতটা কাজ ও কোথায় থামতে হবে, এ বোধও তাঁর প্রখর। তাঁর ‘ক্রিয়েশন অব ক্রিয়েটর’ এবং ‘হেরিটেজ অন হুইলস’ কাজ দু’টি প্রধানত মোনোক্রোম ঘরানায় কালো ও যৎসামান্য অন্য বর্ণের মিশেলে চমৎকার কাজ। ধোঁয়া ওড়ানো রেল ইঞ্জিন, পোস্ট, শ্রমিক, পার্সপেক্টিভ, আলো, আকাশ কিংবা তৈরি হওয়া অসম্পূর্ণ দুর্গাপ্রতিমা, রাস্তাঘাট, মানুষ, আলোছায়ার বিশ্লেষণে দু’টিই বেশ প্রাণবন্ত কাজ।

Advertisement

শৌভিক দে-র মিশ্রমাধ্যমে কালো পটভূমিতে সাদা মানবদেহ, পক্ষী, লাল ত্রিনয়ন, পুষ্পপল্লবের বর্ণ-ঔজ্জ্বল্যতে গ্র্যাফিক কোয়ালিটি স্পষ্ট। কাগজে পেন-ইঙ্কে বিপ্লব করের সাদাকালো কাজগুলি কিছুটা উডকাটের ছাপচিত্র ঘরানার। রচনা নিয়ে ভাবতে হবে। সব জায়গায় কাজ হলে জড়িয়ে যায়। রিলিফ দরকার। অনেকটা স্পেস ছেড়ে কন্টিতে ক্যানভাসে করা ‘কৃষ্ণ’রূপী নগ্ন-গা প্রৌঢ়ের বাঁশি-বাদনরত মুহূর্তটি সামান্য ডিটেলিং রেখে, বাকিটা ছেড়ে দেওয়া ড্রয়িংয়ে ধরেছেন ধীরাজ চক্রবর্তী। ইমেজটি মন্দ নয়। তবে প্রায় হালকা পিছনের ডান হাতের তালু হঠাৎ অমন বেড়ে যাওয়াতে সমগ্র ড্রয়িংয়ে ঈষৎ দুর্বলতা চোখে পড়ে। সিদ্ধার্থ বসুর সাদাকালো ড্রয়িং-বেসড ডিজিটাল পেন্টিং দু’টি বেশ লাগল। সন্দীপশেখর সিংহের অ্যাক্রিলিকে ক্যানভাসের কাজ দু’টি বড্ড বেশি রিজিড হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত ফিনিশিংয়ে কিছু জায়গা মার খেলেও, ‘ইল্যুমিনেটেড ওয়ে’ মন্দের ভাল। সুস্মিতা চক্রবর্তী মাধ্যম, স্টাইল ও টেকনিকে যেন ধীরাজ চক্রবর্তীকেই অনুসরণ করেছেন। মানসী কর্মকারের ডিজিটাল পেন্টিং দু’টি বড্ড ইলাস্ট্রেটিভ।

রচনা ও স্টাইলাইজ়েশনে টেম্পারার ‘ফার্টাইল’ ও ‘স্কারলেট মেলাঙ্কলি’ কাজ দু’টির টেম্পারামেন্ট, মডার্নিজ়ম, কম্পোজ়িশন ও টোটালিটি, বিশেষ করে কালার খুবই দৃষ্টিনন্দন দেবনাথ রায়ের কাজ দু’টিতে। তাঁর কাজে পেন্টিং কোয়ালিটি ও অ্যারেঞ্জমেন্ট চমৎকার। অনিন্দ্য বড়ুয়ার চিত্রগুণ আহামরি নয়। রচনা, অনুষঙ্গ ও স্পেস নিয়ে ভাবতে হবে।

কাগজে দু’টি ভাল মিশ্রমাধ্যম করেছেন উমাকান্ত দাস। পটজোড়া রচনায় আলো-আঁধারি ও রহস্যময়তার ঘেরাটোপে বন্দি ভিন্ন রূপারোপের অবস্থানগত অত্যাধুনিক স্টাইলাইজ়েশন ছবিকে মহার্ঘ করেছে। কাগজের টেক্সচারের উচ্চাবচ সূক্ষ্মতার আবহে বর্ণের ব্যবহার ও আলোর অনুরণন একটি আশ্চর্য প্যাটার্ন তৈরি করেছে। কালোর আধিক্য সত্ত্বেও সেখানে কিছু তৈরি হওয়া রূপ যেন স্বচ্ছ বর্ণের অভ্যন্তর থেকে গহন অন্ধকারে চলে যাচ্ছে এক অজানা, কৌতূহলী অরূপের আহ্বানে। সমগ্র ছবির মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছে এক বর্ণময় আশ্চর্য সিম্ফনি। ‘মোনোলগ থার্টিফোর’ ও ‘মোনোলগ থার্টিফাইভ’ দু’টি কাজই অনেক প্রশ্ন রেখে যায়। অ্যাক্রিলিক, চারকোলে করা সুব্রত ঘোষের বড় কাজটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন। ঘণ্টা বা ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে তো তাঁর অ্যাক্রিলিকের কাজ দু’টির কোনও মিল নেই, তাহলে কি মহুয়া সিংহের ‘চাইম অব নেচার-ওয়ান ও টু’ কাজ দু’টিতে তিনি কোনও ঐকতানের কথা বলতে চেয়েছেন? অতি স্বল্পবর্ণের সঙ্গে প্রায় স্বচ্ছতা রাখা হালকা ছাইবর্ণের নম্রতার মধ্যে গুচ্ছ পুষ্পপল্লব, গাছের ডাল, অপেক্ষাকৃত বৃহৎ পুষ্প ও নীলচে ফড়িংয়ের কাজ দু’টি অন্য রকম। এছাড়া দীপরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিমোহন হালদার, শান্তনু চক্রবর্তী, সুভাষচন্দ্র দাস যথাযথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন