বিলম্ব হলেও এ উদ্যোগ স্বাগত

প্রদর্শনীতে পেন্সিল, কালি-তুলি, জলরং, কোলাজ, শুকনো তেলরং, ছাপচিত্র, কাপড়ের উপর প্রিন্ট, রঙিন সুতোর সেলাই, সরায় আঁকা ছবি—এ রকম বহু মাধ্যমের কাজ ছিল। এমনকি, প্লাস্টার অব প্যারিসের রং-করা ভাস্কর্যও।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে: ‘উল্লাসে’-র চিত্রপ্রদর্শনীর একটি কাজ

গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন আর্ট গ্যালারিতে উল্লাসে-র চিত্র ও ভাস্কর্য প্রদর্শনী শেষ হল সম্প্রতি। এ সংস্থায় ‘অ্যাপ্রিসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ান আর্ট’ কোর্সটি পড়ানো হয়। এদের বিদায়ী ছাত্রছাত্রীদের শিল্পকর্মের ধারাটিকে দর্শকদের দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন। থিয়োরি-প্রধান কোর্স, প্র্যাকটিকাল নামমাত্র। সেই হিসেবে কমবেশি অনেকেই শিল্পচর্চা করেন। কেউ বা শিল্পশিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও কোর্সটি করতে আসেন। ফলে ভাল কাজের পাশাপাশি যথেষ্ট দুর্বল কাজও ছিল। বাছাই পর্ব, ছবি বাঁধাই, ডিসপ্লে ইত্যাদি যদিও মান রক্ষা করতে পারেনি, তবুও প্রথম প্রদর্শনী হিসেবে এটি উতরে গিয়েছে এবং নবীনদের চেষ্টাটুকুও সাধুবাদ পাবে। তবে ক্যাটালগ বা ফোল্ডার কিছুই মুদ্রিত না হওয়ায়—বিষয় ও সালতামামি অজানাই রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রদর্শনীতে পেন্সিল, কালি-তুলি, জলরং, কোলাজ, শুকনো তেলরং, ছাপচিত্র, কাপড়ের উপর প্রিন্ট, রঙিন সুতোর সেলাই, সরায় আঁকা ছবি—এ রকম বহু মাধ্যমের কাজ ছিল। এমনকি, প্লাস্টার অব প্যারিসের রং-করা ভাস্কর্যও।

মাথায় বিরাট এক মাছ নিয়ে চলা একটি মেয়ে, মধুবনী স্টাইলকে কিছুটা অনুকরণ করে কাপড়ের উপর রঙিন সুতোর এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় সেলাই। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করা কাজটির শিল্পী কে? উল্লেখ নেই!

Advertisement

স্পেস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ভুল থাকলেও অপূর্ব নিসর্গদৃশ্য এঁকেছেন তপন অধিকারী। এক নিজস্বতা তৈরি হয়েছে ছবিতে। ফাইবার গ্লাসে করা রবীন্দ্রনাথও মন্দ নয়, যদিও লম্বা করে ফেলেছেন। ছবি, ভাস্কর্য উল্লম্ব মাপের গড়তে পছন্দ করেন, মনে হয়। তপনের মধ্যে সম্ভাবনা আছে। তবে থিতু হতে হবে মাধ্যমটি নিয়ে। পেন্টিংয়ের মতো অতটা স্বাচ্ছন্দ্য কিন্তু ভাস্কর্যে পাবেন না।

প্রদর্শনীর অনেক কাজ ছিল কপি-ওয়র্ক, বড় বেশি শিশুসুলভ। পেন্সিলে করা এমন কিছু কাজ ঝোলানো হয়েছিল, যা প্রদর্শনীর সঙ্গে কোনও ভাবেই যায় না।

কালো পটভূমিতে রঙিন কাগজ নানা ভাবে সেঁটে যে কোলাজ-সদৃশ কাজটি করেছেন সৌম্য সেনগুপ্ত, তা দৃষ্টিনন্দন। অতি-আধুনিকতার নিদর্শন বলাই যায়। তবে এমন রচনায় রূপ বা ফর্মের চরিত্র বুঝে স্পেস অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে কম্পোজ়িশন সম্পর্কে ধারণাটি জোরদার হয়। লাল কাগজ ও সুতো ক্যানভাসে ব্যবহার করে যে কাজটি করেছেন, তার কম্পোজ়িশনের ভারসাম্য রক্ষা হয়নি।

মিন্টু বসু নানা রকম ছোট কাজ করেছেন। কাপড়ের উপর প্রিন্টের কয়েকটি বড় কাজও উপর থেকে ঝুলিয়েছেন। তবে পশম, চামড়া ও পাট ব্যবহার করে মিন্টু চমকপ্রদ যে দুটি কাজ করেছেন, সেগুলিকে হঠাৎ দেখলে ট্যাপেস্ট্রির বিভ্রম জাগে। যেন মিশ্র মাধ্যমে ক্ষুদ্র কাচে বাঁধানো দুটি কার্পেট! কিংবা আলঙ্কারিক নকশা বা ডিজ়াইনধর্মী শো-পিসও বলা যায়। র’ সিল্কের উপর দারুণ সব কাজ! দু’ধরনের হাতের কাজ। রেশম সুতোর অরি— যেখানে নানা কিছু ব্যবহৃত হয়েছে। সুচের কাজ, ফ্রেঞ্চ নট স্টিচ। ব্যবহৃত দ্রব্যের মধ্যে দোপকা, কোরা, সলমা, মুফেস, চির, কাশাব তথা সোনালি দড়ি, পাথর, কাথদানা ইত্যাদি। হাতের কাজ দারুণ সুন্দর, সুযোগ পেলে মিন্টু বহু দূর যাবেন, বুঝতে অসুবিধে হয় না!

অপর্ণা সেনগুপ্তর ড্রয়িংয়ে দুর্বলতা থাকলেও চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। তবে কোলে থাকা বাচ্চার অত বড় হাত? পায়েল দাসের ছোট্ট এমব্রয়ডারি বেশ রংচঙে, দৃষ্টিনন্দন। চটের উপর করা গাঢ় গোলাপি ডিজ়াইনের কাজটিও চমৎকার। সুদেষ্ণা সাহার বহু ধরনের কাজ। যদিও একটি স্টাইলে কাজ করলেই ভাল হত। মহুয়া চৌধুরীরও কাজ ভাল।

প্রদর্শনীতে সৌমেন ঘোষ, পিয়ালী বসু, মধুরা মিত্র, সায়নী রায়, পুষ্পা দাস, চন্দ্রাণী ঘোষ, গার্গী বিশ্বাস, দেবস্মিতা সরকার, দেবশ্রী ভকত, প্রজিত বিশ্বাস প্রমুখের কাজও ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন