এ বার হেঁশেল হবে আরও স্মার্ট

বাজারচলতি নিত্যনতুন গ্যাজেট ব্যবহারে রান্না করার সময় এবং ঝক্কি, কমবে দুই-ইএই ব্যস্ততার যুগে কোন কোন গ্যাজেট আপনার কাজ সহজ করে দেবে, দেখা যাক এক ঝলকে।

Advertisement

রূম্পা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রিয়জনের জন্য হোক বা সপ্তাহান্তের অনুষ্ঠান— বিশেষ রান্না করতে মন কার না চায়! কিন্তু সারা দিন ঘরের কাজ অথবা অফিসের ঝক্কি পেরিয়ে শরীরে আর এনার্জি কোথায় থাকে? তবু এখন স্মার্ট হওয়ার পালা। যেমন স্মার্টফোনেই মেসেজ, ইমেল, ছবি তোলা, ভিডিয়ো দেখা থেকে শুরু করে কল-চ্যাটিং হয়ে যায়, তেমনই এমন অনেক ধরনের গ্যাজেট রয়েছে, যা রান্নার ঝক্কি কমিয়ে দেবে বহু গুণ। রান্নাশেষে দেখবেন যে, আপনার রাঁধা পদ দেখতে ও স্বাদে হয়েছে একেবারে রেস্তরাঁর মতো। তা হলে এই ব্যস্ততার যুগে কোন কোন গ্যাজেট আপনার কাজ সহজ করে দেবে, দেখা যাক এক ঝলকে।

Advertisement

চপার কাম স্ম্যাশার: যে কোনও রান্নার আগেই আনাজপাতি কাটতে সময় লাগে ঢের। অনেক ধরনের চপার এখন বাজারে সহজলভ্য, যার সাহায্যে খুব কম সময়ে মনের মতো আনাজ কাটতে পারবেন। আবার এক ধরনের চপার কাম স্ম্যাশার পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে আনাজ কাটা ও বাটার কাজ দুটোই হয়। একটি ছোট বাটিতে আনাজের টুকরো দিয়ে ঢাকনা আটকে দিতে হয়। বাটির সঙ্গে স্প্রিংয়ের সাহায্যে লাগানো রয়েছে হাতল, যা আসলে ব্লেডের সঙ্গে যুক্ত। এ বার হাতল দিয়ে বারবার টানলে বাটির ভিতরে থাকা ব্লেড ঘুরে কেটে ফেলবে সব আনাজ। মোটা, ছোট, মিহি কুচি নানা ধরনের কাটা থেকে পেঁয়াজ-রসুন-আদা বাটে এই চপার কাম স্ম্যাশার।

Advertisement

শেফস নাইফ: আনাজ থেকে শুরু করে মাছ-মাংস কাটার জন্য নানা ধরনের ছুরির কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু রান্নাঘরে যদি একটি মাত্র শেফস নাইফ রাখা যায়, তা হলে বাকি ছুরির কাজ মিটে যায় অনেকাংশেই। বেশ বড় ব্লেডের প্রফেশনাল এই ছুরির দাম বেশি। কিন্তু ধনে পাতা কুচোনো থেকে শুরু করে মাংস কাটা... সব কাজই অনায়াসে করতে পারে এই ছুরি।

ফিঙ্গার গার্ড: কাটাকুটি করতে গিয়েই হাত কেটে বিপত্তি ঘটে। কিন্তু সেই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে ফিঙ্গার গার্ড। ফাইবার, মেটাল, সিলিকনের তৈরি ফিঙ্গার গার্ডের দামও খুব বেশি নয়। আনাজপাতি কাটার আগে আঙুলে গার্ড পরে নিলেই হল। দ্রুত ছুরি চালালেও আঙুল কাটার ভয় থাকবে না!

ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার: কেকের ক্রিম হুইপ করার জন্য বা ব্যাটার তৈরির জন্য ব্লেন্ডার ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু রোজকার আটা-ময়দা মাখতেও ব্লেন্ডারের জুড়ি মেলা ভার। ব্লেন্ডারের অ্যাটাচমেন্ট বদলে যদি মাঝারি স্পিডে আটা মাখেন, তা হলে সময় লাগবে সর্বসাকুল্যে মিনিট পাঁচেক। অথচ হাত দিয়ে এ কাজ করা কিন্তু বেশ সময়সাপেক্ষ।

ননস্টিক গ্রিলার: ওটিজি এবং মাইক্রোওয়েভ আভেন এখন প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে পাওয়া গেলেও, সেগুলোতে রান্না করার সমস্ত পদ্ধতি ঠিক ভাবে আয়ত্ত না-ই হতে পারে। যেমন গ্রিল করা। অথচ ননস্টিক গ্রিলারে গ্রিল করলে কিন্তু কাজটা সহজ হয়। ননস্টিক প্যানের মধ্যেই গ্রিলার থাকে বলে, গ্যাস বা ইনডাকশনে সেটি বসিয়ে তার উপরে মাছ-মাংস রাঁধতে পারেন সব কিছুই।

স্যান্ডউইচ মেকার কাম গ্রিলার: অনেকেই গ্রিলড স্যান্ডউইচ বানানোর জন্য টোস্টার কাম গ্রিলার ব্যবহার করেন। তবে শুধু পাউরুটি কেন, এই মেশিন কাজে লাগিয়ে মাংসও গ্রিল করতে পারেন। মাংসের টুকরো নানা মশলায় বেশ কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করে রেখে টোস্টার কাম গ্রিলারের মধ্যে ভরে চাপা দিয়ে দিতে পারেন। রান্নাশেষে সময় মতো লাল আলো জ্বলে উঠলেই বুঝবেন মাংস গ্রিল করা হয়ে গিয়েছে!

থার্মোমিটার ও ভলিউমেট্রিক স্পুন স্কেল: নামগুলো শুনলে একটু অবাক হতে হয় বইকি! কিন্তু এগুলোও এখন হেঁশেলেরই অংশ। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে বিশেষত তাপমাত্রা মাপার প্রয়োজন হয়। তার জন্য মেটাল থার্মোমিটার ভাল কাজে দেয়। আবার কোনও পদের গ্রেভি অথবা ব্যাটারের ঘনত্ব কেমন হবে, তা আপনার ঠিক জানা নেই। অথচ আপনি ঘনত্বের মাপটা জানেন। তখন আপনার কাজ সহজ করে দেবে ভলিউমেট্রিক স্পুন স্কেল। স্কেলটি ওই গ্রেভি বা ব্যাটারে রাখলেই বোঝা যাবে ঘনত্বের মাপ।

ওয়াল মাউন্টেড স্টোভ: রান্নার জন্য গ্যাস, আভেন, ইনডাকশনের দরকার নেই। বড় কোনও স্ল্যাবও রাখার দরকার নেই। দেওয়ালের ফাঁকা জায়গায় স্টোভ লাগিয়ে নিলেই হল। ওয়াল মাউন্টেড স্টোভে সব রান্নাই করা যায়। তবে এটি সাধারণত স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট বা এক-দু’ জনের রান্নার জন্যই ভাল।

এগ কুকার: রান্নাঘরে দুই বা ততোধিক বার্নারের গ্যাস থাকলেও অনেক সময়ে তাড়াহুড়োয় বার্নারের অভাব বোধ হয়। তখনই কাজে লাগতে পারে এগ কুকার। এটি ইলেকট্রিকে চলে বলে ডিম রান্না করতে বার্নার বা গ্যাসের প্রয়োজন হয় না। কুকারে ডিম ভরে পছন্দ মতো মোড সেট করলেই হল। হাফ বয়েল, ফুল বয়েল, হার্ড বয়েল... যে কোনও রকম ভাবেই ডিম সিদ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত এই কুকার।

স্লাইসার: ফাইবার, প্লাস্টিকের তৈরি স্লাইসার কোনও কিছু একই মাপে গোল গোল টুকরো করতে কাজে লাগে। টম্যাটো, ডিম সিদ্ধ, পেঁয়াজ... সব কিছুই সহজে টুকরো করা যায় স্লাইসার দিয়ে।

কিচেন সেন্সর অ্যালার্ম: ছোট ফ্ল্যাটে রান্নাঘরের জন্য বড় পরিসর থাকে না। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে হেঁশেলে সেন্সর অ্যালার্ম লাগিয়ে রাখতে পারেন। এগজ়স্ট ফ্যান বা কিচেন চিমনি রান্নার ধোঁয়া টেনে নিলেও, রান্নাঘরের তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে। কিন্তু সেন্সর অ্যালার্ম আগে প্রয়োজন মতো বেজে উঠে বুঝিয়ে দেবে রান্নাঘরের তাপমাত্রা বিপদসীমা ছাড়াল কি না।

এই ধরনের গ্যাজেট ছাড়াও এখন ব্লুটুথ ও ইন্টারনেট দিয়ে চালানোর মতো হরেক গ্যাজেট ছেয়ে যাচ্ছে বাজারে। তবে তাতে রান্না করা সহজ হলেও, রান্নার মজা যাচ্ছে হারিয়ে। তাই নিজের হেঁশেল স্মার্ট করে তুলতে কোনটা বাছবেন আর কী বাদ দেবেন, সেটা কিন্তু আপনাকেই ঠিক করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন