পরীক্ষা-বিভীষিকায় অভিভাবকের আশ্বাস

পরীক্ষা শুধু সন্তানের নয়, বাবা-মায়েরও। এই ভীতি কাটাতে এগিয়ে আসতে হবে দু’পক্ষকেই পরীক্ষা শুধু সন্তানের নয়, বাবা-মায়েরও। এই ভীতি কাটাতে এগিয়ে আসতে হবে দু’পক্ষকেই

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share:

পরীক্ষার মরসুম। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়েরও যেন পরীক্ষা। সন্তানকে চাপমুক্ত রাখার, সুস্থ রাখার ও ভয় কাটিয়ে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাপর্ব শেষ করানোর। যে কোনও বয়সের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ কাজ করে। তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব, সেই চাপ কমাতে না পারলেও তা যেন বেড়ে না যায়— সে দিকে নজর রাখা। তার জন্য বাবা-মায়ের নিজেদের দুশ্চিন্তা অনেক কমিয়ে ফেলতে হবে। তাঁদের দুশ্চিন্তা যেন সন্তানের উপর প্রভাব না ফেলে, সে দিকে নজর দেওয়া আগে জরুরি।

Advertisement

ক্লাসে ওঠার পরীক্ষা বা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষায় পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়ম করে বিশ্রাম নেওয়াও খুব জরুরি। একটানা পড়ে গেলেই ভাল রেজাল্ট হবে— এই ধারণা ভুল। বরং গবেষণা বলছে, ঠিক মতো বিশ্রাম নিলেই মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।

লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়ার চেয়েও লেখার অভ্যেস বেশি রাখা জরুরি। সেই জন্য বাড়িতে মক-টেস্ট দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। এমন নয়, অনেক টাকা খরচ করে কোনও নামী প্রতিষ্ঠানে গিয়েই মক-টেস্ট দিতে হবে। বাড়িতে বন্ধুরা মিলেও সেটা করতে পারে।

Advertisement

বাবা-মায়েদের একটা ধারণা আছে যে, আওয়াজ করে পড়লেই ভাল পড়া হয়। এই ধারণার কোনও যৌক্তিকতা নেই। কী ভাবে পড়লে মনে থাকবে, এটা ব্যক্তিনির্ভর। নিঃশব্দে চোখ দিয়ে পড়েও অনেকের ভাল পড়া হয়। আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি কাজ করছে, সেটাকেই গুরুত্ব দিন। অযথা তার উপর চাপ সৃষ্টি করবেন না।

পরীক্ষার আগের দিন বেশি রাত পর্যন্ত না পড়াই ভাল। কিছু বিষয় যদি তৈরি না-ও হয়ে থাকে, তা আগের রাতে গলদঘর্ম হয়ে পড়তে না বসাই ভাল। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাবা-মায়ের বলা উচিত, যতটুকু শেখা হয়েছে, সেটায় যেন ভুল না থাকে।

পরীক্ষায় নম্বরের গুরুত্ব থাকলেও সেটাই যেন সামগ্রিক লক্ষ্য না হয়ে ওঠে, তার দিকে নজর রাখুন। বেশি নম্বর পাওয়ার চেয়ে নির্ভুল শেখাই যেন সন্তানের লক্ষ্য হয়, তার জন্য বাবা-মাকেই সচেষ্ট হতে হবে। নম্বর কম পেলেই যে পিছিয়ে পড়া নয়, সেই বিশ্বাসও তৈরি করতে হবে সন্তানের মধ্যে।

পরীক্ষার সময়ে সন্তানের আগের সাফল্য বা ব্যর্থতার কোনও দৃষ্টান্তই তুলে ধরা সমীচীন নয়। ব্যর্থতার উদাহরণ আত্মবিশ্বাস টলাতে পারে। আবার সাফল্যের গল্প প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পারে। এমনকী দুশ্চিন্তাও আসতে পারে। পরীক্ষার্থী সে ক্ষেত্রে আগের মাইলস্টোনকে অতিক্রম করার চেষ্টা করবে। সার্বিক ভাবে ভাল ফল করার চেষ্টা তার কাছে গৌণ হয়ে যাবে।

ভাই-বোন বা প্রতিবেশীর সন্তানের সঙ্গে আপনার সন্তানের পারফরম্যান্সের তুলনা করা যেমন ক্ষতিকর, সন্তানের নিজের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব তৈরি করে দেওয়াও কিন্তু ঠিক নয়।

পরীক্ষার সময়ে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকলেই অনেক পরীক্ষার্থী আশ্বস্ত হয়। কিন্তু বাবা-মা হিসেবে আপনার দায়িত্ব তাদের মনোরঞ্জনের দিকটাও নজরে রাখা। না চাইলেও ছেলে-মেয়ের পছন্দের অনুষ্ঠান থাকলে কিছুটা সময় তাকে তা দেখতে দিন। কিছু খাবারের ফরমায়েশ করলে সেটাও রেঁধে দিন। শরীর সুস্থ রাখার জন্য বেশি করে জল খেতে বলুন।

স্কুল-কলেজে‌র পরীক্ষা বড় হয়ে ওঠার একটা অংশমাত্র। সেই পরীক্ষায় ভাল করার জন্য সন্তানকে সব সময় মোটিভেট করুন। কিন্তু ফল আশানুরূপ না হলে সেটা মেনে নেওয়ার সাহস ও মানসিক জোরও যেন সন্তানের থাকে, সে দিকে নজর দিন। জীবন যে পরীক্ষা-সর্বস্ব নয়, সেই বোধ তাদের মধ্যে গড়ে তুলুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন