প্র: সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনা। সব কসমেটিক-ই কি তা হলে বিপজ্জনক? মানে ক্যানসারও হতে পারে?
উ: সাধারণত শুধু কসমেটিক থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও বলছি বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের কসমেটিক ব্যবহার করাই ভাল। মুখে বা শরীরে কসমেটিক ব্যবহার করার পরে যদি কালো স্পট, ঘা বা ব্রণ বেরোয় তা হলে কোনও গাফিলতি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
প্র: তা হলে আর দুশ্চিন্তার কী আছে?
উ: একদম নেই তা নয়। ইস্ট্রোজেন জাতীয় কোনও কোনও কসমেটিক দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে।
প্র: অনেকেই তো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেন। চটজলদি সৌন্দর্য ফিরবে। জৌলুস বাড়বে।
উ: তার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। সবার সব কিছু সহ্য না-ও হতে পারে। তিনি-ই বিকল্প বলে দেবেন।
প্র: এখন ঢালাও ‘বক্ষ’ সৌন্দর্যের নানা সামগ্রী বাজারে ছেয়ে গেছে। সেগুলো সব নিরাপদ নয় বলছেন?
উ: সে জন্যই তো বলছি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুই করা উচিত নয়।
প্র: সব রকম পরামর্শ না হয় নিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও তো শহরের মেয়েদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। কেন?
উ: এটা বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার জন্য। স্ট্রেস, মানসিক চাপ, অনিদ্রা এখন অনেক বেড়ে গেছে মহিলাদের মধ্যে। বিশেষ করে কর্মরতা মহিলাদের মধ্যে তা আরও বেশি। তবে সবচেয়ে বড় কারণ, ফাস্ট-ফুড ও চর্বি-জাতীয় খাবার। মুখরোচক ও চটজলদি এ সব খাবারে এখন বিপদই বেশি ডেকে আনছে।
প্র: ওবেসিটিও তো বড় কারণ?
উ: বড় নয়, প্রধান কারণ। শুরু থেকেই সতর্ক থাকলে ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু ক’জন আর সেই সতর্ক বার্তা মেনে চলেন?
প্র: ওবেসিটি তো শুধু ক্যানসার নয়, অন্য বিপদও ডেকে আনে। তাই না?
উ: দুঃখের বিষয় মহিলারা যতটা নিজেদের সৌন্দর্য বাড়াবার কসরত করেন তার এক অংশও ওবেসিটি রোখার পরামর্শ গ্রহণ করেন না। বিপদসীমা পেরোলেই চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। ওবেসিটির হাত থেকে বাঁচতে অনেক পন্থাই যে কোনও মহিলারই হাতের কাছে। কিন্তু সময়ে কেউ তা কাজে লাগান না। স্রেফ গাফিলতি বলতে পারেন।
প্র: ব্রেস্ট ক্যানসার বাড়ার পেছনে নাকি মদ্যপান ও ধূমপানের বড় ভূমিকা আছে শোনা যায়। তাই কী?
উ: টেনশন কাটাতে বা স্ট্রেস থেকে যে সব মহিলা প্রায় নিয়মিত মদ্যপান করেন ও সঙ্গে ধূমপান, তাদের ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মদ্যপান ও ধূমপান এই দুইই নারী শরীরের কিছু অরগ্যানকে অস্বাভাবিক প্রভাবিত করে।
প্র: সৌন্দর্য ধরে রাখা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য তাহলে তো অনেক খাদ্যাভাসেরও পরিবর্তন করতে হয়।
উ: তা তো বটেই। সৌন্দর্য বাড়াব অথচ যা খুশি খাব তা তো হয় না। যেমন ধরুন কাবাব জাতীয় জিনিস নিয়মিত খাবেন না। কারণ এর সঙ্গে খাদ্যনালীর ক্যানসারের সরাসরি যোগ আছে। আবার রেড মিটের সঙ্গে কোলোন ও রেক্টাল ক্যানসারের বড় মিল পাওয়া যায়।
প্র: হঠাৎ-হঠাৎ অনেক মহিলাকে দেখি বেশ মোটা হতে শুরু করেছেন। এতে কি ঝুঁকি আছে?
উ: অবশ্যই। ওবেসিটির সঙ্গে শুধু ব্রেস্ট ক্যানসার নয় ওভারি এবং ইউটেরাস ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।
প্র: কিন্তু করণীয় কী?
উ: যেখানে যে যেই কাজই করুন না কেন, তাদের উচিত প্রতিদিন আধ ঘণ্টা ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করা। দিনে বা রাতে-যখনই সময় হোক।
প্র: তা হলে তো অনেক সমস্যাই কেটে যায় ...
উ: সে আর বলতে! সত্যি কথা বলতে কী এক এক জন সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য প্রতি বছর যে টাকা খরচ করেন তার এক আনাও যদি নিজের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করতেন তা হলে পরিসংখ্যানটাই বদলে যেত।