অন্দর বিলাস

অন্দরসজ্জায় যদি বিত্তের সঙ্গে রুচির মেলবন্ধন হয়, তা হলেই হয় দৃষ্টিনন্দন। ঠিক যেমন মিত্র দম্পতির নিবাস।অন্দরসজ্জায় যদি বিত্তের সঙ্গে রুচির মেলবন্ধন হয়, তা হলেই হয় দৃষ্টিনন্দন। ঠিক যেমন মিত্র দম্পতির নিবাস।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০০:০০
Share:

ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে...

Advertisement

ইট-কাঠ-পাথরের মায়াজাল বিছানো এ শহরে আছে নাকি তেমন বাগানওয়ালা বাড়ি? যেখানে কেয়ারি করা লন, সবুজ স্নিগ্ধতা, ফুলের উৎসব নিমেষে আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, এ যেন এক মরূদ্যান! পদ্মপুকুর ল্যান্সডাউনে মহেন্দ্র রোডে মিত্র পরিবারের আবাসে পৌঁছলে অবিকল এমনটাই মনে হয়। অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়ানো তাঁদের বাড়ি। এ হেন বাড়ির ইন্টিরিয়ার কেমন হবে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই কৌতূহল ছিল।

রাস্তার শেষ বাড়িটি তাঁদের ঠিকানা। তিনতলা বাড়িটির চার দিকে যেন গাছ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিরাট গেট (প্রধান ফটক বলাই বোধহয় সমীচীন) খুলতেই ঢুকে পড়লাম শহরের কলতান-মুক্ত শান্ত নিরিবিলি এক পরিবেশে। অসম্ভব সুন্দর একটা লন আমাদের স্বাগত জানাল। সেখানে বিভিন্ন আঙ্গিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুধসাদা প্রস্তরমূর্তি এবং অসংখ্য ফল ও ফুলের গাছের সমাহার। তার মাঝে বসার জায়গা। দেখে মনে হয়, এখানে বিকেলটা কী অপরূপ সাজে আসে! হাতে হাত জড়িয়ে হাঁটা, তার পর কথার ফাঁকে বসে পড়া, হাসির সঙ্গে তাল মেলায় আপন ঠিকানার উদ্দেশে উড়ে যাওয়া পাখির কলতান।

Advertisement

সে লন পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম বাড়ির অন্দরে। স্বাগত জানালেন কর্ত্রী রিনা মিত্র। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাঠকদেরও একটু পরিচয় করিয়ে দিই। রিনাদেবীর স্বামী গৌতমকুমার মিত্র নামী ব্যারিস্টার। তাঁদের দুই সন্তান গৌরব মিত্র ও রেহা মিত্র। তাঁরা থাকেন দিল্লি ও মুম্বইতে। বিবাহিত। এবং দু’জনেই সেখানে প্র্যাকটিস করছেন। সদর দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম ছন্দ মিলিয়ে রুচি ও বৈভবের চলনের প্রকাশ। দেওয়ালের এক ধার ঘেঁষে হাফ মার্বেলের টেবল, তার নীচে ইনডোর প্ল্যান্ট। ভারী সুন্দর কারুকার্য করা আয়না। তার এক পাশ দিয়ে উঠে গিয়েছে সিঁড়ি। সিঁড়ির নীচেও সাজানো টবে গাছের সারি। বোঝাই যাচ্ছে, স্নিগ্ধ সবুজে মোড়া এ বাড়ির ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয় জুড়ে...

অন্দরমহলে ঢুকতে প্রথমে স্টাডি। সেখানে রয়েছে শিল্পীর হাতে আঁকা রিনাদেবীর শ্বশুরমশাই গৌরীনাথ মিত্রের ছবি। তিনি ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। স্টাডি জুড়ে থাকে-থাকে সাজানো আইনি বই। মাঝে কাঠের টেবল। দু’ পাশে চেয়ারের সারি। উপরে ঝুলছে চোখ ধাঁধানো শ্যান্ডেলিয়ার। অপূর্ব কারুকাজে মোড়া বিরাট ভাস। স্টাডির এক দিকে গৌতমবাবুর অফিস। অন্য দিকে সুসজ্জিত বসার ঘর।

সত্যি, এ বাড়ির ছত্রে-ছত্রে রুচির ছাপ। বসার ঘরের দু’ প্রান্তে সাজানো সোফায় নরম গদির আরাম। তবে এ রুমের দেখনদারি অবশ্য পেন্টিংয়ে। দেওয়ালে পরিতোষ সেন, যামিনী রায়ের আঁকা ছবি মুগ্ধ করে। উলটো দিকে এম এফ হুসেনের ছবি শোভা বর্ধন করেছে। অতিথিদের বসানোর আয়োজন দেখে বোঝাই যায়, তাঁরা অতিথিপরায়ণ। রঙের সিলেকশন থেকে শুরু করে নিঁখুত সুন্দর শো-পিস, ল্যাম্পশেড, পোর্সেলিনের ভাস, অসংখ্য অ্যান্টিক পিস.... ‘‘বেশির ভাগ জিনিসই আমার শ্বশুরমশাইয়ের সময় থেকে কালেক্ট করা হয়েছে। তবে আমার হাজব্যান্ডও অ্যান্টিকের ব্যাপারে খুব শৌখিন। তিনিও অনেক কিছু সংগ্রহ করেছেন।’’

অপূর্ব অ্যান্টিক পিস, ভাস সব কিছুই কি কলকাতা থেকে সংগ্রহ করা, জানতে চাইলাম কর্ত্রীর কাছে। তিনি বললেন, অনেক জিনিসই কলকাতার অকশন হাউস থেকে কেনা হয়েছে। তবে গৌতমবাবু বেড়াতেও খুব ভালবাসেন। তাই বিদেশ থেকে সংগৃহীত জিনিসও আছে।

আসলে, বাড়ির অন্দরসজ্জা থেকে সেই বাড়ির বাসিন্দাদের রুচিরও পরিচয় পাওয়া যায়। এবং রুচির সঙ্গে যখন সামর্থ্য সঠিক অনুপাতে মেশে, তখন তার রূপ হয় শোভনসুন্দর। অবশ্য সকলের সংস্থান সমান নয়। তবে কোনও শিক্ষা তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন তার থেকে সারটুকু নিয়ে নিজের মতো করে প্রয়োগ করা যায়। সেই প্রয়োগের ভার রইল আপনাদের উপর ।

বাড়ির অন্দরমহল সাজাতে ছবির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেক ছবি দিয়ে একটা দেওয়াল ভারাক্রান্ত করবেন না।

কোনও কর্নারেও শো-পিস সাজাতে পারেন।

পারমিতা সাহা

ছবি: নীলোৎপল দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন