এক অফিসে কর্তা-গিন্নি

কর্মস্থলে স্বামী বা স্ত্রীর উপস্থিতি সম্পর্ক মজবুত করে, না সম্পর্কের অন্তরায়? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল পত্রিকাকর্মস্থলে স্বামী বা স্ত্রীর উপস্থিতি সম্পর্ক মজবুত করে, না সম্পর্কের অন্তরায়? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল পত্রিকা

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০০:২২
Share:

ব্যস্ত জীবন। কেরিয়ারে ওঠা-নামা, বাড়তে থাকা দায়িত্বের হিসেবনিকেশ সামলে সংসারে থিতু হওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। তার উপর দিনকাল এমন যে, বিয়ের পরেও স্বামী-স্ত্রী এক শহরে থাকবেন, সেই নিশ্চয়তাটুকু নেই। কেরিয়ারের ডাকে সাড়া দিতে এখনকার অনেক যুগলই ল‌ং-ডিসট্যান্স ম্যারেজে আটকে। এমন পরিস্থিতিতে কর্তা-গিন্নির যদি একই অফিসে কাজ করার সুযোগ হয়, ক্ষতি কী! এক মুহূর্তের জন্য মনে হতেই পারে, এর চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার আছে! আসা-যাওয়ার মাঝের সময়টুকুও যদি এক ছাদের নীচে কাটে, সম্পর্ককেও একটু সময় দেওয়া হয়। না-ই বা হল এক বিভাগের কাজ, এক ধরনের কাজ। তবু কর্মস্থলে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য কাজে মোটিভেশন বাড়ায় বইকী। মনও ভাল রাখে।

Advertisement

তবে প্রত্যাশার স্বভাব বেশ খামখেয়ালি। যেমনটা ভাবা হয়, তেমনটা হয় না। তাই বেশি নৈকট্য সম্পর্কে দূরত্বের কারণও হয়ে উঠতে পারে। মনোবিদদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে এক অফিসে কাজ করা বেশ স্বাস্থ্যকর বিকল্প মনে হলেও, অসুবিধে আছে অনেক। তবে সবটাই নির্ভর করছে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়়া, মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার উপর।

Advertisement

বিষয়টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেখা যেতে পারে...

যুক্তিগত: অফিসের অশান্তি অনেক সময়েই ব্যক্তিজীবনের সুখ কেড়ে নেয়। সে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী এক-অফিসে থাকলে, দু’জনেই সেই সংগঠনের কাজের পরিবেশ, কাজের ধারা, মানুষজন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন। তাই কাজ নিয়ে যে কোনও রকম আলোচনা, পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত নিতে বা দিতে একে অপরকে পাশে পাবেন। তবে এর একটি ক্ষতিকর দিকও আছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথনের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে কাজ ও কর্মস্থল। বাড়ি যেন অফিসেরই একটা প্রলম্বিত অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ি ও কাজের মধ্যে এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা কিন্তু ভীষণ জরুরি।

আবেগ: কর্মস্থলে প্রিয়জনের উপস্থিতি মোটিভেশন না কি ডিসট্র্যাকশন, সেটা কিন্তু নির্ভর করবে কর্তা-গিন্নির নিজস্ব মানসিক গঠনের উপর।

পাশাপাশি একে অপরের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে, না কি তা অহংয়ের (ইগো) দ্বন্দ্বে পরিণত হবে, সেটা নির্ভর করছে মিঞা-বিবির বাস্তববোধ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার উপর। স্ত্রী যদি কাজের ময়দানে স্বামীর চেয়ে এগিয়ে যান, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে। ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। তবে পিতৃতন্ত্রে বেড়ে ওঠা বেশির ভাগ পুরুষেরই পিছিয়ে পড়ায় আপত্তি। স্ত্রীর পাশে অথবা তাঁর চেয়ে দু’কদম এগিয়ে থাকতেই তাঁরা বেশি অভ্যস্ত।

মানিয়ে নেওয়া: কর্তা-গিন্নি এক অফিসে থাকলে ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন সুবিধে রয়েছে, অসুবিধেও আছে। বিশেষত, স্ত্রী যদি মাতৃত্বকালীন দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে থাকেন, তখন যে কোনও কারণেই স্বামীর পক্ষে ছুটি নেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ‘স্পেস’ একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন। এখনকার স্বাধীনচেতা যুবক-যুবতী কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের স্পেস ছাড়তে রাজি নন। সেখানে কর্মস্থলের বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মী একে অপরের চেনা হওয়ায় গোপন কথা সুরক্ষিত না থাকার ভয় কাজ করে।

কাজে নিরাপত্তার অভাব: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কর্মী ছাঁটাইয়ের রোষে স্বামী-স্ত্রী একই সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন। আর্থিক ও মানসিক, দু’দিক দিয়েই এই পরিস্থিতি কঠিন।

কেউ কেউ আবার মনে করেন, এক অফিসে চাকরি করার চেয়ে দম্পতিদের একসঙ্গে ব্যবসা করার জন্য উৎসাহ দেওয়া ভাল। কারণ অনেক সময়ই চাকরিজীবনের নানা ফ্যাক্টর সম্পকর্কে আরও মধুর করার চেয়ে তিক্ত করে তোলে। তবে যে কোন সম্পর্কেরই যা গোড়ার কথা, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কেও তা অবশ্যই খাটে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সাহচর্যের ভিত টলমল হলেই বাইরের ঝড় অনুভূত হয়।

অন্য দম্পতিদের চেয়ে বাড়তি পাওয়া সুবিধেটুকু আপনার সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করবে কি না, তার সবটাই আপনার হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন