আপনার সন্তান কি অবসাদগ্রস্ত?

অবসাদ থেকে অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও পিছপা হচ্ছে না তরুণ প্রাণ। কী কারণে তারা বেছে নিচ্ছে এমন করুণ পরিণতি? উত্তর খুঁজল পত্রিকাঅবসাদ থেকে অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও পিছপা হচ্ছে না তরুণ প্রাণ। কী কারণে তারা বেছে নিচ্ছে এমন করুণ পরিণতি? উত্তর খুঁজল পত্রিকা

Advertisement

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share:

বারো বছরের প্রাণবন্ত মেয়েটি দিন কয়েক হল কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আগে ভাইয়ের সঙ্গে কত খেলা করত, সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। স্কুল থেকে ফিরে আগে টিভিতে কার্টুন নেটওয়র্ক চালিয়ে বসে যেত। টিভির জায়গা এখন করে নিয়েছে আইপ্যাড। কখনও কখনও মাঝরাত হয়ে গেলেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকে। স্কুলে মারপিট করার মেয়ে সে নয়। তবুও হাতে-পায়ে কেমন যেন কেটে যাওয়ার দাগ!

Advertisement

ঘটনাগুলো কি আপনার ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রেও মিলে যাচ্ছে? তা হলে, সাবধান! হতে পারে আপনার সন্তান অবসাদগ্রস্ত! আর তা থেকেই হয়তো মেতে উঠতে পারে ব্লু হোয়েলের মতো মারণখেলায়।

Advertisement

সময়টাই গোলমেলে

অবসাদ বা ডিপ্রেশন কথাটা শুনলেই মনে হয়, এ তো বড়দের ব্যাপার। মনোবিদরা কিন্তু তেমনটা মেনে নিতে চাইছেন না। বরং এর উল্টো কথাটাই বলছেন। প্রাপ্তবয়স্ক নয়, শিশুদের মধ্যেই আসলে অবসাদের প্রবণতা অনেক বেশি। এক রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি কুড়ি জন শিশুর মধ্যে একজন অবসাদের শিকার। ‘‘অ্যাডোলেসেন্ট ডিপ্রেশন খুব কমন। এই বয়সটা বেশ ভালনারেবল হয়, তাই অবসাদ আরও বেশি করে চেপে ধরে। এই বয়সের অবসাদ প্রায় পুরোটাই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যেমন, লো গ্রেড বা যোগ্যতার তুলনায় কম নম্বর পাওয়া থেকেও তৈরি হতে পারে অবসাদ,’’ বলছিলেন মনোবিদ ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়।

আর এই অবসাদের মধ্যেই অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা আটকে পড়ে ব্লু হোয়েলের মতো গেমের ফাঁদে। ডা. মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘অবসাদ তো একটা কারণ বটেই। তবে আর একটা অ্যাঙ্গলও কিন্তু আছে। সেটা হল অ্যাডিকশন। অনলাইন গেমগুলো নেশার মতো ধরে যায় শিশুমনে।’’

বুঝবেন কী করে

এ ধরনের মারণ খেলায় মেতে ওঠা তো অনেক পরের ধাপ। অভিভাবক থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা চেষ্টা করলেই কিন্তু শিশুমনের অবসাদের হদিশ অনেক আগেই পেয়ে যেতে পারেন। প্রাণোচ্ছ্বল বাচ্চা যদি হঠাৎ নিজের মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকে, তা হলে তৎক্ষণাৎ সাবধান হয়ে যান। লক্ষ রাখুন, দেহের কোনও অংশে কাটাছড়ার কোনও চিহ্ন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কি না।

যে অভিভাবকরা দু’জনেই কর্মরত, তাঁরা বিশেষ করে মনোযোগী হন। এমন নয় যে, বাচ্চাকে চব্বিশ ঘণ্টা চোখে চোখে রাখতে হবে।

ইউনেস্কোর এক গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাচ্চাদের ঘুমের দিকে নজর রাখলেও অনেক কিছু ধরা পড়বে। এ ধরনের গেমে অনেক সময় এমন অনেক টাস্ক থাকে, যেগুলো হয়তো রাত দুটো-তিনটের সময় করতে হয়। তাই বাচ্চা যদি হঠাৎ গভীর রাতে প্রতিদিন উঠে পড়তে থাকে,
সেটাও কিন্তু এই অনলাইন গেমের দিকে ঝুঁকে পড়ারই একটা লক্ষণ হতে পারে।

মনোবিদদের ভাষায়, এই সব ‘সাইন অব ডিপ্রেশন’ শিশুদের আচার-আচরণে দেখতে পেলেই সাবধান হয়ে যান।

কী করবেন

‘‘প্রথমে যেটা মনে রাখতে হবে, সেটা হল বাচ্চাদের স্ট্রেস কমানো। শিশুদের জীবন থেকে যেন আনন্দ উবে না যায়। ‘ইউ আর নট আপ টু ইট’, ‘তোমার দ্বারা হবে না’... এমন ধরনের কথাবার্তা বাচ্চাদের সামনে একদম বলা যাবে না,’’ পরামর্শ ডা. মুখোপাধ্যায়ের। প্রতিনিয়ত বাচ্চাদের সামনে তাদের না-পারার কথাগুলো বলতে থাকলে, তারা অন্য রাস্তা নেয়। এখানেই ঢুকে পড়ে অনলাইন গেম। সেখানে বাচ্চারা এক ধরনের মেকি সেন্স অব ফুলফিলমেন্ট বা ‘কিছু করতে পেরেছি’র আত্মতুষ্টি পায়।

কম্পিউটারের সঙ্গে আসলে যোগাযোগটা একমুখী। বাস্তবে কয়েক জন মিলে আড্ডা দিলে একটা ধারণার আদান-প্রদান হয়, অনলাইন গেমের ক্ষেত্রে সেটার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ‘‘পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরে ছেলে-মেয়ের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু ভিডিয়ো গেমে মনে হয়, সে-ই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে,’’ যোগ করেন ডা. মুখোপাধ্যায়। তবে অভিভাবকদের একটা ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। অনলাইনে একবার আসক্ত হয়ে পড়লে, হঠাৎ করে সেই আসক্তি ছাড়াতে যাওয়াটা ঠিক নয়। সময় নিয়ে, দরকার হলে কাউন্সেলিং করে তার পর নেট দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করবেন। না হলে উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম দেখা দেবে। যত দিন না নিজে থেকে অনলাইনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করছে, তত দিন বাড়ির নেটে ব্লকার ব্যবহার করুন। মোবাইল বা ট্যাবের জন্যও নেট ব্লকার অ্যাপ আছে, সেগুলো ইনস্টল করে দিন।

তথ্য সহায়তা:ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন