সঙ্গীতসন্ধ্যা। সম্প্রতি রোটারি সদনে
ব্যাস পরম্পরার উদ্যোগে সম্প্রতি রোটারি ক্লাবে আয়োজিত হল সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘পরম্পরা’। কণ্ঠসঙ্গীত, তালবাদ্যের পাশাপাশি পরিবেশিত হল গীতিভাষ্য ‘মীরার কথা’। অনুষ্ঠান সূচিত হল ‘ব্যাস পরম্পরা’র ছাত্রছাত্রীবৃন্দের যৌথ উপস্থাপনায়। তাঁদের যৌথ কণ্ঠে গীত ‘আরো আলো আরো প্রাণ’ গানটির কম্পোজ়িশনে ছিল বিভিন্ন ধারার সঙ্গীতকে একসূত্রে মেলানোর প্রচেষ্টা। গানের মাঝে মাঝে হিন্দুস্থানি রাগসঙ্গীত এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আভাস পাওয়া গেল। এই ধরনের কম্পোজ়িশন আপাত ভাবে শুনতে ভাল লাগলেও, গভীর আবেদন তৈরি করতে পারে না শ্রোতার হৃদয়ে। এর রেশ ক্ষণস্থায়ী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল শুভাশিস ভট্টাচার্যের তবলাবাদন। ত্রিতাল বাজিয়ে শোনালেন তিনি। উঠান, পেশকর, কায়দা, টুকরা, রেলা ছাড়াও লখনউ ঘরানার বিশেষ বাদনশৈলী ‘ফরসানা’র কিছু ঝলক দেখালেন শিল্পী। তাঁর তবলাবাদন চলনসই।
‘মীরার কথা’ গীতিভাষ্যে গান গেয়েছেন রেশমি চক্রবর্তী এবং ভাষ্যপাঠে ছিলেন রিনি বিশ্বাস। মীরার জীবনকথাকে গানের সঙ্গে গেঁথে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরলেন দুই শিল্পী। ‘মিথ’ হয়ে যাওয়া মীরাবাইয়ের জীবন-সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক প্রশ্নও উঠে এল তাঁদের এই পরিবেশনায়। রেশমির কণ্ঠে শোনা গেল ‘চলো মন গঙ্গা যমুনা তীর’, ‘ও রামাইয়া বিনা নিন্দ না আওয়ে’, ‘তুম শুনো দয়াল’-এর মতো বেশ কিছু ভজন। রেশমির কণ্ঠ দরাজ। গানের ভাবকে যে তিনি হৃদয়ঙ্গম করেছেন, তা তাঁর উপস্থাপনায় সুস্পষ্ট ছিল। কিন্তু এক এক সময়ে তাঁর কণ্ঠ খুব বেশি মাত্রায় চড়া শোনাচ্ছিল। স্কেল নির্বাচনে সচেতনতা কাম্য ছিল। মিউজ়িক অ্যারেঞ্জমেন্টে আর একটু যত্নশীল হলে ভাল হত। বেশ কিছু গানে অতিরিক্ত ষন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার পীড়াদায়ক হয়ে উঠছিল। রিনি বিশ্বাসের ভাষ্যপাঠ মন্দ নয়।
অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী। তিনি শোনালেন তিলক কামোদ রাগে প্রকৃত ঠুমরি। শিল্পীকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেছেন জ্যোতি গোহো, তবলায় শুভাশিস ভট্টাচার্য। ঠুমরি সাধারণত খুবই উপভোগ্য একটি প্রকরণ। খেয়াল বা ধ্রুপদের তুলনায় তা অনেক বেশি নমনীয়। রাগের মুক্ত এবং বিচিত্রগামী চলনকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন ভাবে সুরবিন্যাসের সুযোগ থাকে ঠুমরি গায়নে। শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় সেই সুযোগের যথাযথ ব্যবহার দেখা গেল না। সঙ্গীত পরিবেশনার সময়ে অতিরিক্ত কথোপকথনে রসাস্বাদন বিঘ্নিত হয়েছে।