আলোচনা
photography exhibition

Photography Exhibition: আলোকচিত্রের আলোকিত আলোড়ন

রোমানিয়ার আলোকচিত্রীদের রঙিন কাজের সঙ্গে সাদাকালো কয়েকটি কাজ ছিল অত্যন্ত উচ্চ মানের।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৭:১৬
Share:

চিত্র-ভাস্কর্য, ছাপাই ছবি (গ্রাফিক্স প্রিন্টমেকিং), ইনস্টলেশন, নিউ মিডিয়া আর্ট ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও, আলোকচিত্র বরাবরই বেশ কিছুটা ব্যবধানে। কলকাতাতেই গত তিন-চার দশকে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। সংস্থাগত, দলীয় ও একক। প্রযুক্তি, যান্ত্রিক মাধ্যমের ব্যবহারিক ও কৌশলগত দিক ছাড়াও আলোকচিত্রের শৈল্পিক একটি দিকও তো উপলব্ধি করা যায়। অনেকটাই এই ধরনের শৈল্পিক প্রয়োগ ও বহুবিধ ব্যবহার আলোকচিত্রের ক্ষেত্রেও যে আছে বা ঘটানো যায়, সে সম্পর্কে সমাজের এক বিরাট অংশের কোনও ধারণাই নেই— এমনটাই মনে করেন বিপিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী সঞ্জয় ভট্টাচার্য। বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউটের অষ্টম প্রদর্শনী ‘লেন্সভিশন ২০২১’ সম্প্রতি গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় শেষ হল। যথেষ্ট ভাল মানের প্রদর্শনী বলা যায়। দ্বিতীয় বছর থেকে এই প্রদর্শনী হচ্ছে ‘ফোকাস দেশ’ হিসেবে অন্য কোনও দেশকে যুক্ত করে। এ বছরের ‘ফোকাস দেশ’ রোমানিয়া। এই প্রদর্শনীই রোমানিয়ার ওরাডি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রদর্শনীতে রোমানিয়ার কুড়ি জন শিল্পীর চল্লিশটি এবং সংস্থার চল্লিশ জনের ষাটটি আলোকচিত্র ছিল।

Advertisement

রোমানিয়ার আলোকচিত্রীদের রঙিন কাজের সঙ্গে সাদাকালো কয়েকটি কাজ ছিল অত্যন্ত উচ্চ মানের। শৈল্পিক ভাবনার সঙ্গে কোথাও প্রযুক্তির চরম রূপ ও ডার্করুম-টেকনিককে বিস্ময়কর ভাবে কাজে লাগিয়ে ছবি তৈরি করেছেন তাঁরা। এ সব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যই থাকে দর্শককে যতটা সম্ভব বিস্ময়াবিষ্ট করা যায়। রোমানিয়ার আলোকচিত্রীদের সকলের ক্ষেত্রে অবশ্য এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তাঁরা অধিকাংশই বরং এমন সব পরীক্ষা ছাড়াই বাস্তবকে এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে শৈল্পিক রূপে প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আলোছায়ার ভূমিকা, দূরাগত পার্থক্য, নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গ বা প্রাকৃতিক আলো-আঁধারির বাস্তবতাকে নিজের স্টাইলে, কখনও রিয়্যালিজ়মের সৌন্দর্যকে, কখনও ক্ষুদ্র ও বৃহদাকারের অনুপুঙ্খময়তাকে প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। এখানে লেন্সের কারসাজি, ফিল্টারের ব্যবহার, ডার্করুম-টেকনিককে ছাপিয়েও শিল্প উন্নীত হয়েছে আলোকচিত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ও কম্পোজ়িশনের নৈপুণ্যে।

এই প্রদর্শনীর সাদাকালোর কয়েকটি ছবির মধ্যে ওভিডি পপের ‘সিক্স চেয়ার্স’-এর ছ’জন নগ্নিকার দু’হাতের ভারসাম্যে ক্রমশ মাথা ও শরীর যেভাবে পিছনে হেলে যাচ্ছে, তা অসাধারণ। প্রথম জনের বুকে প্রায় সদ্যোজাত এক শিশু। রাজভাঁ নিহাই নিকোলের ‘বার্থ’, বোথ ঘুলার ‘ক্রাফটস’, ন্যাগি লাজোর ‘রানিং উইথ দ্য উইন্ড’-এর দু’টি ছুটন্ত ঘোড়া, পিছনে বাতাসে আন্দোলিত মেঘ যথেষ্ট প্রাণবন্ত। এ ছাড়া নিহাই বোগদাঁ, প্লেনো মারিয়ার ‘ব্যালেরিনা’ অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি। এই গ্রুপে সংস্থার অনিরুদ্ধ দাস, অনুপ সাহা, সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়, সায়ন মণ্ডলের কাজ উল্লেখযোগ্য। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের ‘সেভ আস’, ‘স্যাটিসফ্যাকশন’, সোহম দাশগুপ্তের ‘আ ডার্কার রিয়্যালিটি’ মনে থাকবে। রঙিন ছবিতে মহুয়া সরকারের ‘ওয়ার্কলোড’, সাগরিকা দত্তের ‘দ্য জার্নি’ অনবদ্য।

Advertisement

শৈল্পিক: বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ইনস্টিটিউটের প্রদর্শনীর কাজ

রোমানিয়ার রঙিন ছবিতে ইস্তভাঁ মাগদোর ‘দ্য আর্লি বার্ড গেটস দ্য ওয়র্ম’, যোজসেফ বানের ‘দ্য রোড’, বোদিয়া মারিয়াসের ‘ফোকসিঙ্গার’, বাথোরি সিগমন্ডের ‘কমিউনিকে’, লাজা কনস্টানটাইনের ‘গোল্ডেন হ্যান্ডস’-এর আলোকচিত্র গভীর বাস্তবকে স্পর্শ করে থাকে, যেন একটি অনুরণনের অনুভূতি। কর্নেল পোপার ‘মাই সন’ তো ইউরোপীয় অবয়বী ফিনিশড পেন্টিংয়ের অনুভূতি আনে। বোদিয়া মারিয়াসের ‘মেডিয়াভ্যাল কাফে’র আলোর বিচ্ছুরণ ক্রমশ সংক্ষিপ্ত হতে হতে অন্ধকারের মধ্যেও স্ট্রিট লাইটের আলোকচ্ছটার নাটকীয়তায় চোখ আটকে যায়। কম্পোজ়িশন, দূরত্ব, আলো-আঁধার সব মিলেমিশে নিটোল আধুনিক কবিতার রূপ দিয়েছেন তিনি। যেমন দুর্দান্ত ছবি আয়োনেল ওনোফ্রার ‘লকডাউন’। একাকী ঘরবন্দি বালিকার নিরীক্ষণ, সামনে বসা একটি কোকিল। স্কাবলি মারিয়ানার ‘প্রে’, সামনে পেতে রাখা ভাঁজ করা বস্ত্রের উপরে আপেল ও অন্যান্য আনাজ রেখে চারটি বালিকার অভিব্যক্তি ও সমগ্র আবহ— নৈঃশব্দ্য ও আলো তুলনারহিত যেন! তাদের সূক্ষ্ম ডিজ়াইনের ফ্রক ও দেওয়ালের ছবি চোখ টেনে নেয়। লিভিউ পাসকালাউয়ের ‘ওভারপাস’-ও নিরীক্ষামূলক চমৎকার কাজ। ক্লাদিউ গুরালিয়াকের ‘অ্যাডোরেশন টু’ নগ্ন নরনারীর স্টাইলিস্টিক মুহূর্তের নাটকীয়তার মঞ্চায়ন যেন। শুভ্র রায়চৌধুরীর ‘ফ্রিডম’, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘টাস্ক অব লাইফ’, পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের ‘গিভ মি মোর’ (প্রায় পঁচিশটি অঙ্গুরী পরিহিত দু’টি হাত), সুতীর্থ গায়েনের ‘টপ টু বটম’, সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘ডেলি রুটিন’ বহু দিন মনে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন