গোপন ছবিটি থাকুক না গোপনে

নিজের না-দেখতে চাওয়া তথ্য হঠাৎ ‘পাবলিক’! বিব্রত? সাহায্যে আইন আসবে কি? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী নিজের না-দেখতে চাওয়া তথ্য হঠাৎ ‘পাবলিক’! বিব্রত? সাহায্যে আইন আসবে কি? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

সকালে ফেসবুকটা খুলতেই মাথা গরম হয়ে গেল একুশ বছরের সমদত্তার।

Advertisement

কালকের পার্টির ছবি। নিজের পোস্ট না, অন্য কারও আপলোড করা! সব ক’টা ছবিতে তাঁকে ‘ট্যাগ’ করা। একরাশ বিরক্তি নিয়ে আনট্যাগ করলেও খুঁতখুঁতানিটা গেল না। সার্চ করলে তো ছবিগুলো দেখাই যাবে!

সমস্যা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়। কারও সম্বন্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ— এমন খবর নিমেষে ছড়িয়ে যায় অনলাইনে। কোর্টে ছাড়া পেলেও, ইন্টারনেটে তো প্রথম খবরটা থেকেই গেল!

Advertisement

এখানেই দরকার ‘রাইট টু বি ফরগটন’। এ হল এমনই এক অধিকার, যাতে কোনও ব্যক্তি ঠিক করতে পারেন, তাঁর সম্বন্ধে কোন তথ্য অনলাইনে থাকবে, কোনটা নয়।

অনেক দেশে এ অধিকার বহাল থাকলেও, ভারতীয় আইনে সুনির্দিষ্ট ভাবে এর কোনও উল্লেখ নেই।

তবে গত মাসে কর্ণাটক হাইকোর্টের এক রায়-কে অনেকেই মনে করছেন, এমন অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে এক বড়সড় পদক্ষেপ! এক মহিলার বাবা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, যাতে ডিজিটাল রেকর্ডে তাঁর মেয়ের আগের এক ক্রিমিনাল রেকর্ড মুছে দেওয়া হয়। কোর্ট তাঁর পক্ষেই রায় দেয়।

আইন কী বলছে

ভারতীয় আইনে ‘রাইট টু বি ফরগটন’‌য়ের সে অর্থে কোনও স্বীকৃতি নেই।

রাজ্য সরকারের সাইবার সংক্রান্ত বিষয়ের সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এ সমস্যা কিন্তু আজকের নয়। ১৯৩১ সালে মেলভিন ভার্সেস রিড-এও রাইট টু বি ফরগটনের পক্ষেই রায় দেওয়া হয়েছিল। যদিও এটা নিয়ে ভারতে কোনও আইন নেই। আসলে আমাদের দেশে তো ‘ইনডিভিজুয়াল প্রাইভেসি অ্যাক্ট’ও নেই। আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কোনও একটা তথ্য শেয়ার হতে হতে কোথায় গিয়ে যে পৌঁছয়, সেটা তো আর বলা যায় না। অনলাইনে কোনও তথ্য মুছে দেওয়া মানে তো সেই ইউআরএল-টাকেই ব্লক করা। সেটা করা সম্ভব কোর্ট বা কোনও যথোপযুক্ত সংস্থার অনুমতি পেলে। আমার মতে, তাই রাইট টু বি ফরগটেন আর বাক স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে এক ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। সাইবার দুনিয়ায় সেটা খুব জরুরি।’’

লোকে কী বলছেন

‘‘আমার সম্বন্ধে কোনও তথ্য অনলাইনে থাকবে কি থাকবে না, সেটা তো আমি ঠিক করব। কোনও তথ্য যদি আমার সেন্টিমেন্টকে আঘাত দেয়, এমন কিছু আমি রাখতে চাইবই বা কেন?,’’ বলছিলেন চব্বিশ বছরের রোশনি বসু।

‘‘অনেক সময় কলেজবেলার ছবি দেখি ফেসবুকে। অন্য কারও আপলোড করা। মোটেই ভাল লাগে না। কত আনট্যাগ করব! এর থেকে ছবিগুলোকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়াই ভাল,’’ মত বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধূ মালবিকা সেনের।

অন্য কথা শোনালেন বাষট্টি বছরের অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘‘আমার সম্বন্ধে কোন তথ্য থাকবে, আর কোনটা থাকবে না— তার সিদ্ধান্ত আমি নেব কেন! সেটাও তো এক ধরনের সেন্সরশিপ। আমার ভাল লাগা, না-লাগা তো সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না।’’

বিদেশের আইনে

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এমন আইন আছে। আমেরিকাতেও কিছু ক্ষেত্রে স্বীকৃত এই ‘রাইট টু বি ফরগটন’।

আর এ দেশে? কর্ণাটক হাইকোর্টের মতোই এক আবেদন ঝুলে আছে দিল্লি হাইকোর্টে। অনেকেই তাকিয়ে সে দিকে।

তবে যত দিন না আইন হয়, ‘ট্যাগ করলেই ত্যাগ করব’ নীতিই চলুক না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন