আলোচনা

নগরজীবনের জটিলতা

শিল্পী স্বপন মল্লিক অ্যাকাডেমিতে একক প্রদর্শনী করলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ডিসেকশন অব ভয়েড’। ড্রয়িং পেন্টিং মিক্সড মিডিয়ার ছবি। অসংখ্য রেখাচিত্র নিয়ে একটি দেওয়াল। সুতোর মতো নমনীয় বেয়ে চলা রেখাগুলি কোনও আকার তৈরির চেষ্টা করেনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:৩০
Share:

প্রতিফলন: অ্যাকাডেমিতে স্বপন মল্লিকের একক প্রদর্শনীর একটি পেন্টিং

শিল্পী স্বপন মল্লিক অ্যাকাডেমিতে একক প্রদর্শনী করলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ডিসেকশন অব ভয়েড’। ড্রয়িং পেন্টিং মিক্সড মিডিয়ার ছবি। অসংখ্য রেখাচিত্র নিয়ে একটি দেওয়াল। সুতোর মতো নমনীয় বেয়ে চলা রেখাগুলি কোনও আকার তৈরির চেষ্টা করেনি। ফলে এগুলির চলমানতাই কেবল দৃষ্টিগোচর হয়।

Advertisement

চিত্রপটের কালো জমিতে নগরজীবনের অন্ধকার দিক, জটিলতা, ক্রূরতা এমনকী সৌন্দর্য ও যৌনতা—এ সব নিয়েই তাঁর শিল্পভাবনা। ক্যানভাস উপস্থাপনা। তবে চিত্রপট আলপিন টু এলিফ্যান্ট ইমেজারিতে একেবারে ঠাসা। সাপ বা সাপের মতো প্যাঁচানো আকৃতি সর্বত্র বিদ্যমান। প্রায় সব ছবিতেই শূন্যতা বা অন্ধকার বোঝাতে কালো রং ব্যবহার করা হয়েছে। যা আবার নঞর্থক ভাবেরও দ্যোতক। ছবির বিষয়বস্তু বা অবয়বগুলি অন্ধকার মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। কখনও সামনে এগিয়ে আসছে। ‘দ্য অ্যানাটমি অব হসটিলিটি অ্যান্ড হেট্রেড’ এই গ্রুপের ছবিগুলিতে তাৎক্ষণিক আবেগ ও অস্থিরতা ধরা পড়েছে, যেমন মুখবন্ধ টাকার থলি, ভেতরে করোটি পিস্তল। কালো আকাশে খণ্ড চাঁদ, তারা, ভেসে আসা হাতে চাবি, লাল রঙের কাটা পাইপ, ঝরে পড়া রক্ত, মালার মতো সাজানো কাটা হাত। এমনকী লাল হরফে লেখা অশ্লীল বাংলা শব্দ—ছবির ভাব ও রসের পরিপন্থী। তুলনায় ‘নাইট অব দ্য মুন’ কাজগুলি অনেক গোছানো, সুস্থির। জ্যোৎস্নাহীন আকাশে সঞ্চরণশীল চাঁদের টুকরো। সেখানেই গোটা চাঁদের মধ্যে নর-নারী। সবুজ সুতোর প্যাঁচে করোটি, কোথাও কৃষ্ণ, ইতস্তত ছড়ানো নানা ইমেজ, যা সিন্থেটিক টেম্পারায় করেছেন। তবে পিকটোরিয়াল কম্পোজিশন। একই ভাবে আরও একটি বড় ছবি, লাল নমনীয় দড়ির মতো মোটা লাইনের মধ্যে দুটি বড় চোখ, কপালের উপরে একটি সাপ, একটি মণি ক্ষুর দিয়ে চেরা ইত্যাদি। ছবিটি আকর্ষণীয়। এতে পশ্চাদপটের আবছা ইমেজগুলি দ্বিমাত্রিক নিরেট অন্ধকার পটের একঘেয়েমি কমিয়েছে। অন্য রকম কম্পোজিশন, কুশলী সম্পাদনা। ‘মিথ অব ওয়াননেস’ও এ রকম একটি উজ্জ্বল বর্ণের ছবি।

আবার কালোর বিপরীতে একটি করে ইমেজ...যেমন একটি বড় চোখ, কোথাও কাঁসার মাছ—এগুলিতে শিল্পীর করণকৌশলের মুনশিয়ানা, ধৈর্য, পরিচ্ছন্ন সম্পাদনা লক্ষণীয়। এই শিল্পীর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল ‘রিয়ালিটি অ্যান্ড রিয়ালাইজেশন’, ‘এমব্রেস মি ইন দাইসেল্ফ’, ‘ফোর লেগস’, ‘হাংরি ফর লাভ’। যেগুলিতে প্যাস্টেল কন্টি ও ইঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছে। ইমেজ তৈরির ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকলেও তুলিচালনা যথেষ্ট হিসেবি। সার্বিক ভাবে বলা যায়, চিত্রপটে এক বিচিত্র মনস্ত্বত্ত্বের উপস্থাপনা।

Advertisement

শমিতা নাগ

প্রতিবাদ প্রতিরোধে

বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর

প্রায় এক দশক ধরে কলকাতার মেনস্ট্রিম থিয়েটারের পাশাপাশি সমান্তরাল এক ধরনের অভিনয় নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে দমদমের ঊহিনী কলকাতা। অদ্রিজা দাশগুপ্ত যে থিয়েটারে বিশ্বাস করেন, চলতি থিয়েটারের থেকে অনেকটাই আলাদা। সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদ প্রতিরোধের নাট্যভাষা ‘বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর’। ১৮৯০ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় ও বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে বিশ্ব জুড়ে ঘটে চলা অন্যায়, শোষণ, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রভৃতির বিরুদ্ধে যে সব বক্তব্য রেখেছেন, কিংবা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন—তা নিয়েই নাট্যনির্মাণ করেছেন অদ্রিজা দাশগুপ্ত ও সেঁজুতি বাগচী। কখনও ‘বিসর্জন’-এর হত্যা- রাজনীতির বিপরীতে জয়সিংহ-অপর্ণার প্রেম। কখনও ‘মুক্তধারা’য় যন্ত্রের প্রতাপ ও জাতীয়তাবাদের দম্ভের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান। কখনও ‘রক্তকরবী’ রাজার বিশ্বজোড়া শোষণের জাল, প্রাণের সংকট এবং তা থেকে প্রতিবাদে গর্জে ওঠা নন্দিনীর লড়াই, ফাগুলালের নেতৃত্বে বন্দিশালা ভেঙে ফেলা জনতার লড়াইয়ে নামা। আবার সেখান থেকেই ‘রথের রশি’তে শূদ্রদের উত্থান ও ছোটদের বড় হয়ে ওঠা, দিনবদলের বাস্তবতায় উত্তরণ। এই নাট্যনির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অনেক গদ্যের কোটেশন। অদ্রিজার কাজের ধরনে আছে ইমপ্রোভাইজেশনের দক্ষতা। একক চরিত্রাভিনয় নয়, চরিত্র থেকে চরিত্রে, সংলাপ থেকে গানে, কখনও নৃত্যে, সেখান থেকে পাঠে—প্রতি মুহূর্তে তৈরি হতে থাকা বিমূর্ত সব নাট্য-ইমেজে দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন। থিয়েটার এখন আর বিশেষ ছাঁদের আইডেনটিটিতে বাঁচে না। অদ্রিজার মতো থিয়েটারকর্মীরা তাই অচিরেই খুঁজে নেবেন এক নতুন পরিসর।

মলয় রক্ষিত

প্রাণবন্ত তবলাবাদন

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল বর্ষীয়ান তবলিয়া বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কলাশ্রী’র শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। বর্ণময় এই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনা এবং তবলাবাদনের পাশাপাশি আবৃত্তি ও নৃত্যও পরিবেশিত হয়েছে। রমা মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। পরে ছড়া আবৃত্তি শোনালেন পারমিতা, সৌম্যশ্রী প্রমুখ। খেয়াল, রাগপ্রধান, ভজন পরিবেশন করলেন অমিতাভ ঘোষ, তাপস রানা, পাপিয়া রানা, সোমনাথ দাস। তবলায় শিবনাথ মুখোপাধ্যায়, অমিয় চৌধুরী, অমল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করলেন লুম্বিনী, ঐশী, সংসৃতি। মধু বর্মন এবং গোপাল বর্মনের তবলা ও শ্রীখোলের যুগলবন্দি শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। অনুষ্ঠান শেষ হয় তবলা-তরঙ্গে। অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর ছাত্রবৃন্দ— সুমন কাঁড়ার, অমিয় চৌধুরী, জয়দীপ চক্রবর্তী, সুমন দাস, তাপস রানা প্রমুখ। ঝাঁপতাল, রূপক এবং তিনতালের ঠেকা দিয়ে শুরু করে একে একে তবলায় ফুটে ওঠে উঠান, পেশকার, কায়দা, টুকড়া, রেলা, গৎ। প্রাণবন্ত পরিবেশনাটি মনে দাগ কাটে।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

পথের পূর্ণতা

রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক গানের অনুষ্ঠান ‘নিদারুণ পথ’। শিল্পী ছিলেন রাহুল মিত্র। আয়োজক উৎসাহ উদ্ভাস। সুন্দর আমন্ত্রণপত্র থেকেই শিল্পীর রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। অনুষ্ঠানকে দু’টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। ‘প্রথম আলো’ (পথ, গতি, নিঠুর ও শান্তি) ও ‘শেষের আলো’ (প্রার্থনা, করুণা, মর্ম ও ভিক্ষা)। প্রথম পর্বের মূল বক্তব্য ‘চলা’। তাই তো শিল্পী শুরুই করলেন ‘কান্নাহাসির দোল-দোলানো’ গানটি দিয়ে। ‘সংশয় তিমির মাঝে’ গানের পথ বেয়ে আসে ‘গতি’। কখন যে সেই পথ নিঠুর হয়ে প্রকাশ পায় ‘ও নিঠুর, আরও কী বাণ’ গানের ভাবে ও মননে। আবার এই চলার পথেই কখন যেন নেমে আসে শান্তি। শিল্পীর কণ্ঠে দৃঢতা পায় ‘শান্তি কর বরিষণ’ গানে। এক গান থেকে অন্য গানে রাহুল সযত্ন, স্বমহিমায় প্রবেশ করলেন।

দ্বিতীয়ার্ধে আসে ‘শেষের আলো’। যেখানে ‘ফিরে চলা’র সুর বেজে ওঠে। ‘আজি প্রণমি তোমারে’ গানের মধ্যে প্রকাশ পায় প্রার্থনা। এই ভাবেই একের পর এক গান কখনও করুণার হাত ধরে, কখনও বা মর্ম বা ভিক্ষার পথ ধরে। ‘ওগো কাঙাল আমারে’ গানটি এক পূর্ণতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। সেই পথ যেন বলে ওঠে, ‘আমার শুরু গানে, আমার বাঁচা গানে, আমার শেষও গানে।’

শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়

অনুষ্ঠান

বেহালা শরৎ সদনে অনুষ্ঠিত হল তিন দিনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসব সাবর্ণ সঙ্গীত সম্মেলন। প্রথম দিনেই মাতিয়ে দিলেন উজ্জ্বল ভারতী, জয়িতা চৌধুরী ভট্টাচার্য, শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দিনে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন মিতা নাগ, ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ দিনের উৎসবে অন্য মাত্রা এনে দিলেন ঐন্দ্রিলা সরকার, ইন্দ্রজিৎ বসু, ওমকার দাদরকর। হারমোনিয়ামে সঙ্গত করেছেন হিরন্ময় মিত্র, দেবপ্রসাদ দে, দেবাশিস অধিকারী, জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী, নিত্যানন্দ মুখোপাধ্যায়। তবলায় ছিলেন রূপক ভট্টাচার্য, শুভজ্যোতি গুহ, সৌমেন নন্দী, সৌমেন সরকার, অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ও গৌরিশঙ্কর কর্মকার।

নটীর মঞ্চে উজানিয়ার গান। সম্প্রতি স্টার থিয়েটারে উজানিয়া আয়োজন করেছিল গল্প ও গানের অনুষ্ঠান। গান ও পাঠে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন শিল্পীরা। উজানিয়ার গান অন্য মাত্রা এনে দেয়।

সুজাতা সদনে অনুষ্ঠিত হল শৌনক মিউজিক্যাল ট্রুপ এর ত্রয়োবিংশতিতম বার্ষিক অনুষ্ঠান। গাইলেন দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, নন্দিনী ভট্টাচার্য, আশিস দাশগুপ্ত প্রমুখ শিল্পী। এ দিন মিতালী ভট্টাচার্যের পরিচালনায় সমবেত নৃত্যে অংশ নিয়েছিল নৃত্যকলা অ্যাকাডেমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন