চেনা-অচেনায় আকৃতি

পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা উত্তরবঙ্গের এই শিল্পী তাঁর পরিপার্শ্ব থেকে শিল্পকার্যের রসদ সংগ্রহ করেন। জয়ন্তী-রায়ডাক-তিস্তা নদীর জলে ভেসে আসা গাছ, নদীর স্রোতে আটকে থাকা শুকনো ডাল সংগ্রহ করেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রকৃতি: অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শিত উৎপল চক্রবর্তীর ‘কাটুম কুটুম’-এর একটি নমুনা

পোশায় শিক্ষক উৎপল চক্রবর্তী অনেকের মতো জলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা উত্তরবঙ্গের এই শিল্পী তাঁর পরিপার্শ্ব থেকে শিল্পকার্যের রসদ সংগ্রহ করেন। জয়ন্তী-রায়ডাক-তিস্তা নদীর জলে ভেসে আসা গাছ, নদীর স্রোতে আটকে থাকা শুকনো ডাল সংগ্রহ করেন। আবার কখনও কখনও চলে যান লাটাগুড়ির জঙ্গলে, অদ্ভুত-দর্শন সব শেকড় ডাল-মূল ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য।

Advertisement

সম্প্রতি এ রকম বেশ কিছু সংগ্রহ নিয়ে তিনি একটি একক প্রদর্শনী করলেন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। অন্য রকম দেখতে এ সব কাষ্ঠখণ্ড, শেকড়-মূলগুলি যেন চেনা চেনা কিছু। এই চেনা-অচেনা আকৃতিগুলিকে তিনি তাঁর পরিবেশ জগতের সব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে একটা সাদৃশাত্মক আকারের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সেই রূপ ক্রমে একটা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে এ সব সংগ্রহ সুন্দর পেডেস্টালে বসানো। অনেকগুলি আবার নাচের ভঙ্গিমার আকার, একতারা হাতে বাউল, কলসি মাথায় সাঁওতালি মেয়ে, মা ও ছেলে, গাছের কোটর থেকে বেরোনো সরীসৃপ, হংসমিথুন, ধূর্ত শেয়াল এ রকম অসংখ্য নমুনা। আবার বাঁশের গোড়া দিয়ে তৈরি হাতির মাথা, পাকানো শিকড়ে হরিণের মাথা, ফাঁক-ফোঁকরওয়ালা একটি কাষ্ঠখণ্ড যেন ছাগলবাচ্চা সামনের দিকে মুখ বাড়িয়ে চলেছে। ঘোড়ায় সওয়ারি, ঘোড়া নেই কিন্তু ভাবখানা রয়েছে।

কয়েকটি কাজ আবার অন্য রকম। রবীন্দ্রনাথের পেন্টিং বা ড্রইংয়ের কালো কালো রহস্যময় অবয়বগুলির মতো। কিছু পাথুরে শেকড়ের কাজ রয়েছে। পাথর শেকড় একসঙ্গে মিলেমিশে অন্য রকম বুনোটের কিছু নিদর্শন।

Advertisement

শিল্পী যত্ন করে এগুলি বার্নিশ করেছেন, ফলে চাকচিক্য তৈরি হয়েছে। কিছু অনুজ্জ্বল। প্রত্যেকটিই এক-একটি বিমূর্ত ভাস্কর্য, ছোট আকারে। এই ভাস্কর্যগুলি অনেকটাই প্রকৃতির তৈরি সন্দেহ নেই, আমরা শুধু সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করি। তবে কার চোখে কতটা ধরা পড়ে, এই যা। শিল্পী প্রদর্শনীর নাম দিয়েছেন ‘কাটুম কুটুম’। এই শব্দদ্বয়ের সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটিই মনে পড়ে। তিনিই উদ্ভাবক। তাই তো অবনীন্দ্রনাথ একটু অন্য রকম বলেছিলেন, পোকায় খাওয়া গাছের ডাল, তালের আঁটি তুচ্ছ। কত কথাই না লুকিয়ে আছে এগুলিতে। কুটুম কাটাম দুজনেই খুব অভিমানী। কুটুম আত্মীয়, কাটাম কাঠামো। ওদের গায়ে রং চড়ানো যাবে না। বার্নিশ তো নয়ই। তবেই ঐতিহ্য বজায় থাকবে, আবার প্রকৃতিও খুশি হবে। যেমন রং তেমনই থাকবে। ফর্মটাকে স্টাডি করে খেলতে খেলতে কিছু করে ফেলা, অভিব্যক্তির একটি রাস্তা তৈরি হওয়া। প্রকৃতি-শিল্প-শিল্পী সব মিলিয়ে নান্দনিকতার চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা। অর্থাৎ সবটাই হতে হবে ন্যাচারালি ন্যাচারাল।

অবন ঠাকুরের একজন ভাবশিষ্যের ছড়াটি এ রকম:

কুটমকাটাম জিনিসটাকে দেখতে যদি চাও/ ৭ই পৌষ বিকেলবেলা মেলার মাঠে যাও। এর কুটুমকাটাম নাম/ পছন্দতেই দাম।

শমিতা নাগ

যেন এক অনন্য সন্ধ্যা

প্রমিতা মল্লিক

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন নিবেদন করল সুন্দর এক গীতি-আলেখ্য। মানবতাবাদের উপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন রচনা অবলম্বনে এই গীতি-আলেখ্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল ‘ভারততীর্থ’। অত্যন্ত সময়োপযোগী এ গীতি-আলেখ্যটির সংকলনে চূড়ান্ত মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালিকা প্রমিতা মল্লিক। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কৃষ্ণা বসু রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ সম্পর্কে একটি সুন্দর চিত্র প্রতিটি শ্রোতার মনেই যেন গেঁথে দিলেন। এর পরে ১৭টি সমবেত গানের ডালি নিয়ে উপস্থিত হলেন বৈকালীর শিল্পীরা। প্রায় দুশো জন শিল্পীর ১২টি দলে বিভক্ত হয়ে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে তাঁদের পরিবেশিত গানের মধ্য দিয়ে প্রকৃত বিষয় ও ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলা শুধু সহজ নয়, এক সুন্দর দৃষ্টান্তও বলা যায়। প্রতিটি গানই সুগীত। তবু তারই মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ‘হে মোর চিত্ত’, ‘প্রচণ্ড গর্জনে’, ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃত্থী’, ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’ গানগুলি। এই নিখুঁত গীতি-আলেখ্যটির জন্য শ্রোতারা প্রাণোত্থিত ধন্যবাদ জানান প্রমিতাকে।

পাঠে সুবীর মিত্র এবং সৌগতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলেখ্যটির মূল ভাব ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস সাহা, প্রদ্যোত বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, দেবাশিস হালদার এবং অমল সরকার। সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মঞ্চসজ্জা উল্লেখযোগ্য।

কাশীনাথ রায়

বেদগানে শুরু

নীলা মজুমদার

সম্প্রতি ইন্দুমতী সভাগৃহে সপ্তদশ বার্ষিক লাবণ্যমঞ্জরী দাস স্মারক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন প্রবীণ শিল্পী নীলা মজুমদার। অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল ‘ব্রহ্মসঙ্গীত: রামমোহন থেকে অতুলপ্রসাদ’। এ দিন শিল্পীর প্রথম নিবেদনেই ছিল বেদগান। যা অনুষ্ঠানে এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে।
শিল্পী এ দিন যতগুলি গান গাইলেন, একই সঙ্গে তিনি ব্রহ্মসঙ্গীতের ইতিহাসও বিশ্লেষণ করলেন। ‘ভাব সেই একে’ গানটিতে শিল্পীর মগ্নতা প্রকাশ পায়।

সমবেত কণ্ঠে গীত ‘মন চল নিজ নিকেতনে’ বা ‘দেহজ্ঞান দিব্য জ্ঞান’ সুগীত, সুচর্চিত। ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ’ গানে শিল্পী স্বমহিমায় প্রকাশ পেলেন। গানটি সে দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবেশন। যন্ত্রানুষঙ্গ যথাযথ। শিল্পীর এই গবেষণামূলক কাজ প্রশংসনীয়।

শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়

গান ও পাঠে

সম্প্রতি আনন্দীর অনুষ্ঠানের ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন অভিজিৎ নস্কর ও রুনা নস্কর। মাতৃবন্দনা দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। পরে গান ও কবিতার কোলাজে অংশ নিয়েছিলেন সুজয় ও সর্বাণী রায়চৌধুরী। তাঁদের পরিবেশনায় ‘প্রথম ফুলের’ ও ‘অমল ধবল’ মনে দাগ কাটে।

এ দিন শুরু হয় আনন্দীর শিল্পীদের গণেশবন্দনা দিয়ে। ভাল লেগেছে যৌথ শঙ্খবাদন। অনুষ্ঠানের সংগীত পরিচালক ছিলেন অন্নপূর্ণা ঘোষ রায়। শেষে বেশ কয়েকটি কবিতা পাঠ করলেন অভিজিৎ নস্কর।

সুন্দর প্রয়াস

শিখা ভট্টাচার্য

সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে অনুষ্ঠিত হল শিখা ভট্টাচার্যের পরিচালনায় নৃত্যাঙ্গন কলাশ্রমের নৃত্য উৎসব। প্রথম নিবেদনে ছিল সংস্থার ছাত্রীদের সৃজনশীল শিববন্দনা, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ভরতনাট্যমের তিলানা ও কত্থক নৃত্যের সুন্দর প্রয়াস। আধুনিক গানের সঙ্গে শিশুশিল্পীদের নৃত্য প্রশংসার দাবি রাখে। সব শেষে ছিল শিখা ভট্টাচার্যের একক নৃত্য। তাঁর পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘শাপমোচন’ পরিবেশিত হয়।

পলি গুহ

অনুষ্ঠান

• যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল তিন দিনের ঊনচল্লিশতম মূকাভিনয় উৎসব। রাজশীর্ষ দাস ও রূপশীর্ষ দাসের মাঙ্গলিক সঙ্গীত দিয়ে উৎসবের শুরু। মহুয়া মুখোপাধ্যায় ও সহশিল্পীদের গৌড়ীয় নৃত্যের পরে তিনটি মূকাভিনয় অভিনীত হয়। যোগেশ দত্তের পরিচালনায় ‘আর রক্ত নয়’, ‘আমাকে বাঁচতে দাও’ ও ‘অভিব্যক্তি’। দ্বিতীয় দিনে নজর কাড়ে মূক অ্যাকাডেমির ‘পুরাতন ভৃত্য’, মৌন মুখরের ‘হা-ডু-ডু’ ও কাগজের নৌকোর ‘জোকার’। শেষ দিনে ছিল যোগেশ মাইমের ‘শিক্ষাই জীবন’, বর্ধমান নির্বাকের ‘সম্প্রীতি’ ও উন্মীলন থিয়েটার গ্রুপের ‘সার্কাস’। শিবিরে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের নিয়ে মূকাভিনয় শেষ দিনেও দর্শকদের মনে দাগ কাটে।

• ঐন্দ্রিলা জাতীয় সংগীত অ্যাকাডেমি আয়োজন করেছিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক উৎসব। গানে অংশ নিয়েছিলেন স্বপন বসু, সৈকত মিত্র, সুরজিৎ (ভূমি), জয়তী চক্রবর্তী, দীপঙ্কর পাল, ইমন চক্রবর্তী প্রমুখ। নৃত্যে ছিলেন প্রাঞ্জলিকা চাকী। আবৃত্তিতে দেবাশিস কুমার বসু।

• মুক্ত অঙ্গনে অনুষ্ঠিত হল চেতলা কৃষ্টি সংসদ আয়োজিত পাঁচ দিনের ‘শিশু নাট্যোৎসব ২০১৭’। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল চেতলা কৃষ্টি সংসদের ‘রাজার অসুখ’, ‘স্টোরি অব লোরি’, ‘লোভী কল’, ‘অবতার’ ও ‘রাজগুরু’। এ ছাড়াও ছিল গোবরডাঙা রবীন্দ্র নাট্য সংস্থার ‘কংসবধ পালা’, বিজয়ভূমি ছাত্রী আবাসের ‘এ বার হবে নতুন পড়া’।

• মোহিত মৈত্র মঞ্চে সুরঙ্গমা কলাকেন্দ্র আয়োজন করেছিল ‘শীতের পরশ’। গান ও পাঠে ছিলেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুচিন সিংহ, বেলা সাধুখাঁ, সন্ধ্যাশ্রী দত্ত, তাপস নাগ, কেশবরঞ্জন প্রমুখ।

• রবীন্দ্রসদনে ঋতম আয়োজন করেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য ‘সতী’ অবলম্বনে কাব্যসংগীত ও নৃত্যের মেলবন্ধনে ‘অভয়া’। পরিচালনায় ছিলেন অনুভা ঘোষ। গান ও পাঠে ছিলেন প্রবুদ্ধ রাহা, অদিতি গুপ্ত, সৌমিত্র মিত্র, অনুভা ঘোষ প্রমুখ। নৃত্যে শুভাশিস ভট্টাচার্য ও সুস্মিতা ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন