আলোচনা

ঘনবদ্ধ উপস্থাপনা

উল্লেখযোগ্য দু’টি বড় ক্যানভাসের ‘দি হিলিং’ কাজটি সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবনোপাখ্যান। চিত্রপটের উপরের এক কোণে একটু সবুজ সমুদ্রের আভাস, চড়ায় কয়েকটি নৌকো, সামনের জমিতে সেন্ট ফ্রান্সিস কৃপা বিতরণ করছেন। দূরে কোথাও কোথাও বালির চর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

আখ্যানধর্মী: মিলবার্ন চেরিয়ানের ‘দ্য হিলিং’ কাজটি সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবনের উপর

মিলবার্ন চেরিয়ান মুম্বই নিবাসী শিল্পী। খ্রিস্টজীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং বাইবেলের নানা আখ্যান নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ বর্ণনামূলক আখ্যানধর্মী কাজ করেছেন। প্রত্যেকটি ক্যানভাসই তাঁর কল্পনা অনুযায়ী রূপ পেয়েছে। চিত্রপটের এক কোণ থেকে শুরু করে অন্য কোণ অবধি বাড়িঘর-তৈজসপত্র-লোকজন একেবারে ঘনবদ্ধ ভাবে উপস্থাপিত। তবে স্থান কাল পাত্র হিসাবে সে সব অন্য রকম, অন্য কোনওখানের। যে রকমটি হুবহু দেখা যায় বিদেশি গল্পের ইলাস্ট্রেশনে। রংও তদ্রূপ।

Advertisement

আমরা জানি, চিত্রকলা বা ছবির নিজস্ব একটা বক্তব্য থাকে এবং ইলাস্ট্রেশন আখ্যান অনুযায়ী চিত্রিত হয়। কাজগুলি প্রায় সমতলধর্মী এবং মনোরম। উল্লেখযোগ্য দু’টি বড় ক্যানভাসের ‘দি হিলিং’ কাজটি সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবনোপাখ্যান। চিত্রপটের উপরের এক কোণে একটু সবুজ সমুদ্রের আভাস, চড়ায় কয়েকটি নৌকো, সামনের জমিতে সেন্ট ফ্রান্সিস কৃপা বিতরণ করছেন। দূরে কোথাও কোথাও বালির চর। ‘সুনামি’ কাজটির রচনারীতি একটু অন্য রকম, মাঝের ইমেজগুলিকে ঘিরে বাকি সমস্ত বিষয় এসেছে। উপরে অল্প আকাশ কাজটিতে পারস্পেক্টিভ বা দূরত্ববোধ তৈরি করেছে। ইয়েলো অকার একটু ব্রাউন-রেড-গ্রিন মিলিয়ে এক ধরনের বিষাদাচ্ছন্ন পরিবেশ, রাতের আলোর মতো হলদেটে লালচে আলোয় বিকেল বা সন্ধ্যার আবহ তৈরি হয়েছে। সমতলধর্মী বর্ণ, অসংখ্য ইমেজ এবং নির্দিষ্ট কোনও ফোকাল পয়েন্ট না থাকায় দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি হচ্ছে। ড্রয়িং বেশ দুর্বল।

ছোট কাজগুলিতে ‘মাদার মোস্ট পিয়োর’, ‘দি অ্যাপ্রিসিয়েশন’-এ বাইজেনটাইন পেন্টিংয়ের ছাপ খুব স্পষ্ট। বাকি বেশির ভাগ ছোট কাজগুলি খুবই পরিশ্রমসাপেক্ষ হলেও এগুলির বর্ণ বৈপরীত্য এবং তীব্র ব্রাউনের ব্যবহার এগুলিতে কাঠিন্য এনেছে। রেড, ব্লু, ব্রাউন, গ্রিনের ঔজ্জ্বল্য দৃষ্টিসুখকর নয়। সাধারণ বিষয়নির্ভর কাজগুলি যেমন—‘ট্রায়াম্ফ’, ‘আর্থ’, ‘ফিস্ট’, ‘ভিলেজ’, ‘আফটার সুনামি’ ইত্যাদি। প্রদর্শিত কাজের সংখ্যা কিছু কম হলে ভাল হত। সব সত্ত্বেও ক্যানভাসের বিস্তৃত জমি জুড়ে রং-তুলির কাজ, ধৈর্য, একাগ্রতা এবং গল্পগুলির সঙ্গে একাত্ম হওয়া— এ সবই নিঃসন্দেহে শিল্পীর সততার নিদর্শন।

Advertisement

তুলিতে নানা রঙের টেক্সচার

সম্প্রতি পেন্টার্স অরকেস্ট্রার ৪৯তম প্রদর্শনীটি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে হয়ে গেল। সদস্যদের মধ্যে একমাত্র ভাস্কর শিশির টিকাদার টেরাকোটা পদ্ধতিতে কাজ করেছেন, বৈষ্ণব সাধকদের ভাবময়তা এবং হরিনাম সংকীর্তন নিয়ে কয়েকটি সহজ ভঙ্গিমার সুন্দর ভাস্কর্য। বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ক্যানভাসে উজ্জ্বল নীল রঙের মধ্যে সবুজ বর্ণে চোখ-কান বন্ধ করা নির্বাক ভণ্ড ধার্মিকের মুখ বা মুখোশ। পার্থপ্রতিম দেবের কালো-সাদার রেখাপ্রধান ছবিগুলি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, কালো-সাদায় স্পেসবিভাজন এবং ড্রইংয়ের ওভারল্যাপিং বুদ্ধিদীপ্ত। বিমূ্র্ত ভাবের ছোট ল্যান্ডস্কেপ করেছেন চিন্ময় রায়। রঙের ঘন প্রলেপে চটজলদি করা কাজ। শ্যামল মুখোপাধ্যায় গ্লাস পেন্টিংয়ে পরিচিত নাম। লাল-নীল-সবুজ-হলুদ বর্ণের এবং বিভিন্ন রকম বুনোটে ঘনসংবদ্ধ রচনা, বাবুবিবি সিরিজের ছবিগুলি আকর্ষণীয়। উল্লম্ব ভাবে সিমেট্রিক্যাল কমপোজিশন করেছেন শুচিব্রত দেব। কালো সাদার ‘আনটাইটেলড’ ছবিটি বেশ। জহর দাশগুপ্তের ছবিতে স্বপ্নের অনুষঙ্গ, ভেসে যাওয়া লালচে মেঘ, ঘন সবুজ মাঠের মধ্যে ছুটন্ত পক্ষীরাজ ইত্যাদি।

অরুণ মজুমদার চিত্রপটে বড় স্পেস তৈরি করেছেন। অনেক কিছু জুড়ে কোলাজ— নদী, বজরা, লোকজন, ধোবিঘাট, সারি সারি শুকোতে দেওয়া কাপড়। তবে চারুশিল্পের বদলে অনেকটাই কারুশিল্প হয়ে গিয়েছে। তাপসশঙ্কর বসুর জলাশয়ের মতো একটি স্থান ঘিরে অনেকগুলি রেখার আবর্তন কালো-সাদার ডিজাইনের মতোই। ভাল লাগল।

বিরাজ পালের ক্যানভাসে রং-তুলি ও দক্ষতার ছাপ বেশ স্পষ্ট। লাল ড্রেপারির উপর বসে থাকা হলদে পোশাকের মহিলা অনেকটাই যেন স্টিল লাইফের ছবি। স্বপন সাহার গ্লাস পেন্টিংয়ের রং মার্জিত। অনেক ধরনের টেক্সচার দিয়ে ছবির আলোছায়ার গভীরতা এনেছেন, অবয়বগুলিতে আর একটু অভিব্যক্তি থাকলে ভাল হত। এ ছাড়াও ছিলেন শান্তনু ভট্টাচার্য, মানসী মিত্র, দিব্যেন্দু বসু।

শমিতা নাগ

চমৎকার সমাধান

থিয়েটার কমিউন-এর প্রযোজনায় নাটক ‘একাকিনী’। শুরুতেই চমক-সর্বনাশ, এত বিতর্কিত বিষয়। কিন্তু নাট্যকার ও নির্দেশক সুব্রতনাথ মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ, সব শেষে তিনি চমৎকার সমাধান করে দিয়েছেন। নাটকের মঞ্চ-পরিকল্পনা, আবহ ও রবীন্দ্রসংগীতের যথাযোগ্য ব্যবহার খুবই ভাল লাগে।

ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়েই নাটকের মূল বিষয়। তরুণ রবির জ্যোতিদাদার সহধর্মিণী ‘নতুন বৌঠান’কে নিয়ে নাটক। কাছাকাছি বয়স হওয়ায় দেওর-বউদির মধ্যে সম্পর্ক ভাইবোনের মতো। কিশোর রবির সব কবিতার প্রথম শ্রোতা আর সবচেয়ে উৎসাহদাত্রী তথা সমালোচক নতুন বউঠান ঠাকুরবাড়ির সকলের পছন্দের পাত্রী ছিলেন না। কিন্তু জ্যোতিদাদার কাছে এঁদের সম্পর্ক ছিল নির্মল। তাই চন্দননগরের বাড়িতে অল্পবয়সি স্ত্রীর পাহারায় রবিকে পাঠাতে তাঁর মনে দ্বিধা ছিল না। এমনকী বিয়ের পরও রবির চন্দননগর যাতায়াতে অসুবিধে হয়নি। এর পর নাটকের গতি চূড়ান্ত রূপ পায়।

অভিনয়ে প্রত্যেকেই ভাল। যেমন মুখ্যচরিত্র, তেমনই পার্শ্বচরিত্র। কিন্তু ‘টেল ড্রপ’ (অন্তত দু’জায়গায়) কানে লাগল। এ জিনিস একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। কবিতা বলার সময় এত দ্রুত লয়ের কারণ বোঝা গেল না। কবি বিহারী যেন প্রণাম নেওয়ার জন্য মঞ্চের বিপরীত কোণে চলে গেলেন, তা দৃষ্টিকটু।

পরিচালক পোশাক সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন, যা বেশ যুগোপযোগী। শুধু ‘বাবামশাই’-এর পোশাক বোধহয় সময়ের উপযোগী হয়নি। নাটকের সমাপ্তি খুব সুন্দর। তবে সার্ধ-শতবর্ষ পর্যন্ত আনার প্রয়োজন ছিল কি? সব শেষে ঘোষণা হল যে, সর্বসমক্ষে এই প্রথম এই নাটক অভিনীত হল। এই সামান্য ত্রুটিগুলি সংশোধন করা গেলে, নাটকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

সুকোমল ঘোষ

হৃদয়স্পর্শী এক সংগীতসন্ধ্যা

সুতানুটি পরিষদ (‌চোরবাগান আঞ্চলিক কমিটি) সম্প্রতি এক উচ্চাঙ্গ সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করেছিল ঐতিহ্যপূর্ণ লাহাবাটীর আঙিনায়। বৈঠকি মেজাজে ধ্রুপদী সংগীতের আসর জমালেন শাহিদ পারভেজ খান। গদি-ফরাসের উপর বসে সেতারের সুরে মগ্ন হলেন শ্রোতারা।

রাগ চারুকেশী দিয়ে শুরু করলেন শাহিদ পারভেজ। সংক্ষিপ্ত আলাপ-জোড়-ঝালার পরে শোনালেন রূপক তালের একটি চমৎকার কমপোজিশন। ছোট ছোট অলংকার-সহযোগে তাঁর দৃপ্ত সুরসঞ্চালনায় উপভোগ্য হয়ে উঠল রাগটি। কোমল ধৈবত এবং কোমল নিষাদের কৌশলী প্রয়োগ চারুকেশীর মাধুর্যকে অন্য মাত্রা এনে দিল। স্বকীয় শৈলীতে রাগটিকে চলমানতা দিলেন তিনি। তাঁর দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল কাফি ঠাঁটের রাগ গাবতী। স্বল্পশ্রুত এই রাগটি ইমদাদখানি ঘরানার সেতারবাদকদের খুব পছন্দের রাগ। শাহিদ পারভেজ শোনালেন ঝাঁপতালের একটি কমপোজিশন। গাবতীর রাগরূপবিন্যাসে কোমল নিষাদের প্রয়োগ অত্যন্ত যত্ন নিয়ে করেছেন তিনি। ষড়জ থেকে কোমল নিষাদে অবতরণের মধ্য দিয়ে রাগটির অন্তর্নিহিত ভাবকে ফুটিয়ে তুললেন শিল্পী। তবে আলাপ আর একটু বিস্তারিত হলে ভাল লাগত। তবলায় তাঁকে সহযোগিতা করেছেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের তালমেল বেশ উপভোগ্য ছিল। শাহিদ পারভেজ অনুষ্ঠান শেষ করলেন জনপ্রিয় একটি ধুন বাজিয়ে। নতুন নতুন সুরবিন্যাস পরিচিত ধুনটির উপস্থাপনাকে করে তুলেছিল হৃদয়স্পর্শী।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

অন্য মাত্রা আনে

রবীন্দ্র সদনে পঞ্চমবার্ষিক পূর্তি উৎসব পালন করল বেহালা নৃত্যম। প্রথমেই সংস্থার ছাত্রীরা পরিবেশন করলেন শাস্ত্রীয় নৃত্য গণেশবন্দনা। পরে সরস্বতীবন্দনা ত্রিতাল মধ্যলয় দিয়ে তা শেষ করে। পরে সুরঙ্গমা মজুমদার ভেদ-ঠুমরি, চলতা-আলবেলি দিয়ে তার পরিপূর্ণতা আনেন। সংগীতে ছিলেন সুদক্ষিণা মান্না চট্টোপাধ্যায়, সরোদে সুনন্দ মুখোপাধ্যায়, তবলায় সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। আলো উত্তীয় জানার।

দ্বিতীয় পর্বে অভিনয় ও নৃত্যের কোলাজ ‘ওই কি এল আকাশ পানে’ নৃত্যনাট্যে সুরঙ্গমা ও রাহুল সিংহের যৌথ পরিবেশন এক অন্য মাত্রা এনে দেয়। শেষে শিশু শিল্পীদের রবীন্দ্রগানের সঙ্গে নৃত্য মন ভরিয়ে দিয়েছে। মারিয়া, ঐশানী, সৃজা, অনুষা প্রমুখ শিশুরা নজর কেড়েছে।

পলি গুহ

অনুষ্ঠান

• সম্প্রতি বাংলা আকাদেমিতে সৃষ্টিনগর আয়োজন করেছিল একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের। উপস্থিত ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, শোভনসুন্দর বসু, নন্দন সিংহ, দেবাশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবলীনা ভট্টাচার্য।

• মিনার্ভা থিয়েটারে রবীন্দ্র নগর নাট্যায়ুধ মঞ্চস্থ করল ‘বিষ তর্পণে বিসর্জন’। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন দানী কর্মকার। অভিনয় করেছেন পান্না মণ্ডল, বর্ণালি কর্মকার, মিলন বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, প্রভাত সরকার, ঐন্দ্রিলা দত্ত প্রমুখ।

• সম্প্রতি বারাসত কাল্পিক মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ করল নাটক ‘পাতার বাঁশি’। নাটকটি লিখেছেন মুকুন্দ চক্রবর্তী। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয় করেছেন অনিরুদ্ধ মাসিদ, অজয় বিশ্বাস, সুজয় চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সুব্রত সরকার প্রমুখ।

• মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ে ‘কাকতালীয়’ নাটকটি মঞ্চস্থ করল শৌভনিক। অরূপশঙ্কর মৈত্রের এই নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন নীল কৌশিক। সম্পাদনা করেছেন
চন্দন দাশ। অভিনয়ে ছিলেন রঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায়, দেবেশ মুখোপাধ্যায়, শিবাজী দাশগুপ্ত, এনা সেনগুপ্ত, শেখ সাফায়েৎ হোসেন প্রমুখ।

• সম্প্রতি মধুসূদন মঞ্চে সংসপ্তক মঞ্চস্থ করেছিল নাটক ‘অনাগত’। নাট্যকার অনুপ চক্রবর্তীর লেখা এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রসেনজিৎ বর্ধন। অভিনয় করেছেন পলাশ কর্মকার, রাজু খাঁ, শান্তনু মুখোপাধ্যায়, রাজ্যশ্রী মালাকার, স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন