কেমন আছে মধুর সাগরদাঁড়ি আর সেই কপোতাক্ষ

বাংলাদেশের যশোরের সার্কিট হাউস পাড়া একটি অভিজাত অঞ্চল, এখানেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ, এখন যা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত। বিশ্ববিদ্যালয় আর যশোর জেলা স্কুলের মাঝখানে বেনজিন খানের ‘প্রাচ্যসংঘ’, যে প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশে সাড়া জাগিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

এখন কপোতাক্ষ

বাংলাদেশের যশোরের সার্কিট হাউস পাড়া একটি অভিজাত অঞ্চল, এখানেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ, এখন যা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত। বিশ্ববিদ্যালয় আর যশোর জেলা স্কুলের মাঝখানে বেনজিন খানের ‘প্রাচ্যসংঘ’, যে প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশে সাড়া জাগিয়েছে।

Advertisement

সাতসকালে রওনা দেওয়া গেল সাগরদাঁড়ির উদ্দেশে। যশোর থেকে চল্লিশ মিনিটের পথ। যতদূর চোখ যায় সবুজ ধানখেত, খোলা আকাশ।

গাড়ি থামল একটা বিশাল প্রবেশদ্বারের সামনে। বাঁ দিকে একটা স্মৃতি স্তম্ভে বড়-বড় করে লেখা— স্বাগতম: মধুপল্লী। এর ঠিক পিছনেই চোখ যাবে একটা বিশাল পুকুরের দিকে। স্বচ্ছ, মালিন্যহীন জল, বাঁধানো ঘাট। চারপাশে কোথায়ও আগাছা নেই।

Advertisement

সঙ্গী একজন বললেন, ‘‘যতদূরে পাঁচিল দেখছেন বাঁদিক, ডান দিকে, পুরো এলাকা জুড়েই মধুসূদনের বসতভিটার সীমানা।’’

পুকুরটিকে পাশে রেখে ডান দিকে চোখে পড়েবে ১৮১৫ সাল নাগাদ তৈরি পাশাপাশি দুটো বাড়ি। সংস্কার করা হয়েছে বলে ঝকঝকে নতুন-এর মতো তাদের বহিরঙ্গ।

ঘরের ভিতরে মিউজিয়াম। আছে খাট, পালঙ্ক, বাড়িতে ব্যবহৃত শিলনোড়া, সিন্দুক, কাটারি, টুপি রাখার বাক্স, আয়নার ফ্রেম আর প্রচুর ছবি।

লম্বা দুটো ঘর পেরিয়ে এসে চোখে পড়বে তুলসীমঞ্চের মতো একটি বেদি। তাতে লেখা আছে ঠিক ওই স্থানেই ছিল আঁতুড়ঘর, যেখানে দত্তকুলোদ্ভব কবি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।

এর পর মস্ত উঠোন। উঠোনের ডান দিকে ছোট ছোট কয়েকটা ঘর আর বাঁ দিকে বিশাল পূজা মণ্ডপ। শোনা যায়, এই মণ্ডপেই একবার ১০৮ কালীপুজো হয়েছিল। তাতে ১০৮টি মোষ, ১০৮টি ছাগল, ১০৮টি ভেড়া বলি দেওয়া হয়। আর অঞ্জলি দেওয়া হয়েছিল ১০৮টি সোনার তৈরি জবা ফুল।

এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে যদি ভিতর দিকে যাওয়া যায় তবে দেখা যাবে আর একটা পুকুর, তবে এটি বেশ ছোট। খুব সম্ভবত বাড়ির মেয়েদের জন্য ছিল এই পুকুরটি। তার পাশ কাটিয়ে আর কয়েক পা গেলে আর একটা দালান। এটা অতিথিশালা। সংস্কার করায় এটাও নতুনের মতো।

দত্তবাড়ির এই বিশাল বসতসীমার মাঝে যে বাড়িটা ছিল ভৃত্যদের থাকার জায়গা, এখন সেখানে একটা প্রাইমারি স্কুল বসছে।

এ বার মধুপল্লী থেকে বেরিয়ে যেতে হবে উল্টোদিকে। যেখানে আছে মাইকেল মধুসূদন একাডেমি। যার বড় কক্ষটিতে আছে প্রদর্শনশালা, মধুসূদনের গ্রন্থরাজির প্রথম সংস্করণ, তাঁকে নিয়ে লেখা বইপত্রের প্রদর্শনী ছাড়াও আছে অনেক ফটোগ্রাফ।

এর সঙ্গে সংযুক্ত একটি লাইব্রেরি, একাডেমির লাগোয়া বিশাল মাঠটি এখন ছেলেপুলেদের খেলার জায়গা। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে সেখানে বসে মধু মেলা। লক্ষ লোকের সমাগমে জমে ওঠে মাইকেলের জন্মমাসের সেই মিলনোৎসব।

আর কপোতাক্ষ নদী?

সে আছে কেমন?

সেই প্রসূতি স্থল

তাকে দেখতে হলে মধুপল্লী থেকে পায়ে হেঁটে ডান দিকের পথ ধরতে হবে। দু’পাশে ছোট ছোট দোকান। মধুসূদনের বাঁধানো ছবি, পোস্টার, এক হাত সমান মধু-পুতুল প্রায় সব দোকানেই। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগেও মধুর কবিতা বা মুখ।

একটু এগিয়ে চোখে পড়ল সামনে কপোতাক্ষ। কচুরিপানায় ভরা। পচা জলের তীব্র গন্ধ।

একটু দূরে একটা স্মৃতিস্তম্ভ। ভাঙাচোরা। সাদা পাথরটার গায়ে লেখাটুকু তবু পড়া যায়— ‘বিদায়ী ঘাট’।

খ্রিস্টান হবার পর মাইকেল নাকি নৌকো করে এই ঘাটে তিন দিন ছিলেন। মা-র সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

রাজনারায়ণ নাকি জাহ্নবীকে বলেছিলেন, ছেলের সঙ্গে দেখা করলে তিনি স্বামীর মরা মুখ দেখবেন। তাই মা-এর সঙ্গে দেথা হয়নি কবির।

এই ঘাট থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন কবি।

আর কোনও দিন ফিরে আসেননি।

যদিও এ কাহিনির সত্যতা কতটুকু জানা নেই। তবু সাগরদাঁড়ির এটাই ‘মিথ’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন