শহরের ধুলো-বালি, হেঁশেলের ঝুল-কালি আর উপরি পাওনা আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা! সব কিছু মিলিয়ে, ব্যস্ত তনয়ার মুখের যত্ন নেওয়ার সময় নেই। খেয়াল যদি বা হয়, তা-ও কোনও উপলক্ষকে ঘিরে। তখনকার মতো পার্লার সহায় হলেও, ওতে ত্বকের পরিচর্যা হয় না। বছরের বাকি সময়টুকু মুখের জেল্লা কী ভাবে অটুট রাখবেন, তার প্রস্তুতি সারা বছর জুড়েই নেওয়া ভাল।
ফেসিয়ালের গোড়ার কথা
মনে রাখবেন, ফেসিয়াল যেন আপনার বিউটি রেজিমের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়। বেসিক ফেসিয়ালের তিনটি পর্ব। ক্লিনিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং। বয়স আর ত্বকের টাইপের উপর নির্ভর করে মাস্ক বাছতে হবে। ভাল মাসাজ রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। ত্বকেরও পুষ্টি জোগায়। প্যাক লাগানোর ক্ষেত্রে দুটো জিনিস মনে রাখতে হবে। প্রথমত, বলিরেখাপ্রবণ যেমন ঘাড়, কপাল আর দু’ গালে প্যাক ভাল করে লাগাবেন (তবে চোখের ঠিক নীচে প্যাক লাগাবেন না, লাগালে খুব অল্প সময় রেখে তুলে দেবেন)। আর যখন প্যাক তুলবেন, তখন হাতের টান উপরের দিক বরাবর হওয়াই নিয়ম।
বয়স বুঝে
কুড়ির ঔজ্জ্বল্য: টিনএজের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে যৌবনের প্রথম ছোঁয়া লাগতে না লাগতেই, যুবক-যুবতীরা সচেতন হয়ে পড়েন নিজেদের ত্বক নিয়ে। তাই এই বয়সে মাসে এক বার ফেসিয়াল করা যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে অর্গ্যানিক আর প্রাকৃতিক প্রডাক্ট ব্যবহার করাই শ্রেয়। আদা, হলুদ, পুদিনা পাতা, মধু, শসা, লেবু জাতীয় ফলের ব্যবহারে ত্বক আরও নরম হয়। ফ্রুট ময়শ্চারাইজার ট্রিটমেন্ট এই বয়সে উপযোগী।
তিরিশের ঋতুবদল: এই সময় থেকেই ত্বকের পরিবর্তন শুরু হয়। তাই ত্বকের প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এক্সফোলিয়েশনের পর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, এমন মাস্ক ব্যবহার করুন। আর এমন ভাবে ফেসিয়াল করাবেন, যাতে মাসাজ যথাযথ হয়। এতে দুশ্চিন্তা থেকেও আরাম মেলে।
চল্লিশের জেদ: এই বয়সে কী ধরনের প্রডাক্ট ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে সতর্ক থাকবেন। বয়স্ক ত্বকে স্টিম ক্ষতিকর। বদলে ঠান্ডা দুধ, শসার রস, পেঁপে বা চটকানো কলার প্যাক ব্যবহার করুন।
•
ফেসিয়াল করার ঠিক পরেই মেকআপ করবেন না।
•
ফেসিয়ালের পরে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পারলে ভাল। এর পরই কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে যে আরাম পেয়েছেন, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
•
শরীরকে ডিটক্সিফাই করার জন্য গ্রিন টি বা ঈষদুষ্ণ মধু মেশানো লেবুর জল খাওয়া ভাল। এটি মেটাবলিজমেও সাহায্য করে।
•
ফেসিয়ালের পর খুব ঠান্ডা বা গরম জলে স্নান না করাই ভাল।
•
ফেসিয়ালের পরে খুব দূষণপ্রবণ জায়গায় না যাওয়া শ্রেয়।
ত্বকের ধরন বুঝে
তৈলাক্ত ত্বক: ডিপ ক্লেনজিং লোশন আর জেল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা বেরিয়ে যায়। মাসাজের ক্রিম যেন একটু কম তীব্র হয়। দুধ, লেবু জাতীয় ফলের নির্যাসে তৈরি ফেসিয়াল ক্রিম এই ধরনের ত্বকের পক্ষে উপযোগী। ক্লে আর পাউডারের মিশ্রণের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
শুষ্ক ত্বক: এ ক্ষেত্রে ক্লেনজার হবে কম তীব্র। স্ক্রাবিংও হবে হালকার উপর। অক্সিজেন, আর্দ্রতা ধারণকারী ক্রিম আর অয়েলের ফেসিয়াল করাই ভাল। সেরাম, ময়শ্চারাইজিং ক্রিম ভাল করে লাগাতে হবে। মাসাজ ভাল করে করতে হবে। তবে পাউডার মাস্ক ব্যবহার না করাই ভাল।
স্বাভাবিক ত্বক: এ ক্ষেত্রে স্ক্রাবিং আর মাসাজ ক্রিম হবে মাইল্ড। ময়শ্চারাইজিং মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন।
পিগমেন্টেড ত্বক: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ ক্রিমও এই ধরনের ত্বকে ভাল কাজ দেয়।
ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য ফেসিয়াল কিন্তু শুরুর পাঠমাত্র। বাকি পথটুকু আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে, হাজারো কাজের সাত-সতেরো পেরিয়ে।কী কী করবেন না