ভালবাসার বিকল্প নেই

ব্রাত্য বসুর ‘আনন্দীবাঈ’ নাটকে। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ।ব্রাত্য বসুর নাটক ‘আনন্দীবাঈ’। পরশুরামের গল্পকে অবলম্বন করে এ নাটক রচিত হলেও মূল গল্পগুলোর সঙ্গে হুবহু এই উপস্থাপনার মিল খুঁজতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। পরশুরাম থেকে আজকের প্রজন্ম। ভাললাগার রসদ তাই নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি। দর্শকদেরও ভাবিয়েছে, হাসিয়েছে, নির্ভেজাল আনন্দ দিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০১:০৮
Share:

ব্রাত্য বসুর নাটক ‘আনন্দীবাঈ’। পরশুরামের গল্পকে অবলম্বন করে এ নাটক রচিত হলেও মূল গল্পগুলোর সঙ্গে হুবহু এই উপস্থাপনার মিল খুঁজতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। পরশুরাম থেকে আজকের প্রজন্ম। ভাললাগার রসদ তাই নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি। দর্শকদেরও ভাবিয়েছে, হাসিয়েছে, নির্ভেজাল আনন্দ দিয়েছে। এই চিন্তা-ভাবনা এবং সমসাময়িকতাই নাট্যজগতে নতুন দিগন্ত আনছে যা অস্বীকার করা যায় না। নির্দেশক দেবাশিস বিশ্বাস তাই বলতেই পারেন, ‘‘এই নাটক তৈরির শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম প্রসেনিয়ামে করলেও ফর্ম নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষারও অবকাশ রয়েছে।’’ আর তাতেই এসেছে সাফল্য।

Advertisement

কেমন করে?

নাটকের স্থান সময় দ্রুত বদলে যায় বিভিন্ন মজার উপকরণের মধ্য দিয়ে। তাই গল্পের বাঁধুনি কখনও আলগা হতে দেননি নির্দেশক। বৃদ্ধ হওয়ার মুখে এক ধনী ব্যবসায়ী তাঁর মুখরা অহংকারী স্ত্রী থেকে মুক্তি পেতে চান। আর তাই দু দু’টি অসমবয়সী বিয়ে সেরে ফেলতে পিছপা হলেন না। এদিকে আই.বি.-র লোক এসে তাকে ভয় দেখায়, ‘হিন্দুবিবাহ আইন’ অনুযায়ী তিনটি বিবাহ আইন বিরুদ্ধ। অগত্যা তিনি উকিলের শরণাপন্ন হলেন। কিন্ত তিনজনের মধ্যে স্ত্রী হিসেবে কাকে রাখবেন আর কাকেই বা বাদ দেবেন এ নিয়ে ধন্ধে পড়ে যান ওই ধুরন্ধর ব্যবসায়ী। কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য বুঝে গেলেন তাঁর অল্পবয়সী দুই স্ত্রী তাঁকে ভালবাসেননি, ভালবেসেছে অর্থ ও যশকে। তিনি বেছে নিলেন প্রথমা স্ত্রী ‘আনন্দীবাঈ’-কেই। কারণ তাঁর মধ্যেই যে রয়েছে প্রকৃত ভালবাসা।

Advertisement

খোলা মঞ্চ। এক দঙ্গল মানুষের নাচা-গানা হই হুল্লো়ড় দিয়ে নাটকের শুরু। তরুণীদের পোশাক আশাকেও উপচে পড়ছে ভরা যৌবন। কখনও মুন্নি বদনাম হুয়ি, কখনও তুনে মারি এন্ট্রিয়া গানের তালে তালে কুশী-লবদের নেচে ওঠা।

বর্তমান সমাজের অবক্ষয়িত রূপ তুলে ধরতে এবং চরিত্রের দাবি অনুযায়ী নাটকের গতি আনতে, কোনও ক্ষেত্রে শব্দ চয়নে শালীনতা থাকেনি। এসব অবশ্য নিছকই প্রয়োজনের তাগিদেই।

ব্যবসায়ীর চরিত্রে দেবাশিস বিশ্বাসের অভিনয় প্রশংসনীয়। আনন্দীবাঈ-এর চরিত্রে কল্যাণী বিশ্বাস, বলাকা তানিয়া বিশ্বাস এবং রাজহংসী আম্রপালি মিত্র অনবদ্য। অন্যান্যদের অভিনয়ও এ নাটকের বড় সম্পদ। তার মধ্যে অভিরূপ ঘটক, সোনালিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক চৌধুরীও আছেন। নাটকের কয়েকটি দৃশ্যে যে মজার ঘটনা দেখা গেছে তা দর্শকদের বাড়তি পাওনা। রিদমে মধু ও গোপাল বর্মনের কৃত্বিত্ব, আবহে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও নৃত্যে সঞ্জয় রায়ের সাফল্য অনস্বীকার্য। আয়োজক-হাওড়া ব্রাত্যজন।

পঞ্চকবি মিলেছে যেখানে

রবীন্দ্রনাথ থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল। শুনে এলেন বারীন মজুমদার।

মঞ্জু গুপ্ত, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, সুশীল চট্টোপাধ্যায়, অর্ঘ সেন প্রমুখ একসময়ে রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক আরও চার কবির গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বর্তমানে সেইসব গানে ভাঁটা পড়েছে। পুনরায় সেই অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল ও নজরুলের গান নিয়ে ইদানীং যে কয়েকজন শিল্পী গানগুলিকে শ্রোতাদের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তাঁদের মধ্যে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন। সেই কারণেই একটি আলাদা সংগঠন গড়ে তুলে ‘পঞ্চ কবির গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান করছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানের মতো অন্য গীতিকবিদের গানগুলি বর্তমান সময়ে সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠবে কিনা তা সময়ই বলবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাদশা মৈত্রের সঙ্গে নন্দিনী ভট্টাচার্য কয়েকটি গান শোনালেন। সঙ্গীতশিল্পীর সর্বপ্রথম নিজের স্কেল সম্বন্ধে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নন্দিনী যদি ভবিষ্যতে সর্বপ্রথম এই কাজটি করেন তবেই তাঁর গান, গান হয়ে উঠবে। না হলে নয়। যে অনুষ্ঠানে আবৃত্তিতে অংশ নেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী সেখানে তিনিই যে মাধ্যম হয়ে ওঠেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল এদিন।

এদিনের প্রধান শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাঠে ছিলেন তিনি। ঋদ্ধি রবীন্দ্রনাথের ‘ও যে মানে না মানা’ দিয়ে শুরু করলেন। তারপর ব্রততী বললেন ‘ওগো বাঁশিওয়ালা’। পরে ঋদ্ধি গাইলেন ‘আজি বিজন ঘরে’। অনুষ্ঠান এগিয়ে চলল দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্তদের গানে। মাঝে মাঝে পাঠ করছিলেন ব্রততী। কোনও আলেখ্য নয়- শুধু পাঠ ও গান। প্রত্যেক গীতিকবির যে আলাদা গায়কি বা ঢং তা ঋদ্ধির আয়ত্তের মধ্যে এবং তিনি গেয়েছেনও ভালো। তবে দ্বিজেন্দ্রলালের গান নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। উদাহরণ বলা যেতে পারে অতুলপ্রসাদের ‘একা মোর গানের’ বা দ্বিজেন্দ্রলালের ‘আজি নূতন’ বা ‘সারা সকালটি’ ছাড়াও আরও অনেক গান আছে যেগুলি নির্বাচনে থাকা উচিত।

তোমায় গান শোনাবো

দু’দিন রবিমল্লার-এর অনুষ্ঠানে

পিনাকী চৌধুরী

সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল রবিমল্লার আয়োজিত ‘তোমায় গান শোনাবো’ সঙ্গীতানুষ্ঠান। শিল্পী অনেক। তবুও কেউ কেউ গায়কি ও উপস্থাপনায় নজর কেড়েছেন শ্রোতাদের। প্রথম দিনে মধুছন্দা ঘটক গাইলেন ‘এতদিন যে বসে ছিলেম’। পরে সুচরিতা ঘোষ গাইলেন ‘ওলো সই’। শেখর বিশ্বাসের কন্ঠে ‘কে যাবি পাড়ে’ গানটি মধ্যমমানের।

প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডুর ‘এই উদাসী হাওয়ার’ সুখশ্রাব্য। তবে সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মনে কি দ্বিধা’ এবং সংযুক্তা ভট্টাচার্যের ‘যে ছিলো আমার’ শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণ করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শর্মিষ্ঠা নন্দীর ‘আমি তোমার প্রেমে’ ভালো লাগে। দু’দিনের এই সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন রাজেশ্বর ভট্টাচার্য। তবে তিনি নিজে কোনও গান করেননি।

রূপক রবি

শ্রাবণী সেনের পরিচালনায় ‘রূপক রবি’ সঙ্গীতানুষ্ঠানে গাইলেন এই প্রজন্মের বেশ কয়েকজন শিল্পী। দেবাদৃত ও সুস্মিতা গাইলেন ‘বনে যদি ফুটলো কুসুম’। শুভময়ের ‘আমার এ পথ’ শুনতে ভাল লাগে। সিসপিয়া ‘পাখি আমার’ ও কৌস্তভ ও মেঘাতিথির উপস্থাপনা যথাযথ। অনুষ্ঠানে রাজার ভাষ্য অন্য মাত্রা পায়। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন বাঁশিতে সৌম্যজ্যোতি, তবলায় স্বপন, পারকাশনে তপন ও কিবোর্ডে অয়ন। আয়োজক বৈতানিক।

ভাল-মন্দে

সম্প্রতি শিশির মঞ্চে সুরঙ্গমা কলাকেন্দ্র-র অনুষ্ঠানে প্রিয়ংকর মজুমদারের ‘শাওন গগনে’ শুনতে ভাল লাগে। সুচিন সিংহের মুক্ত ছন্দে- ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’ গানটির কাব্যিক ভাবটি ধরা পড়ে সঠিক গায়কি ও স্বরক্ষেপণের গুণে। এ ছাড়াও অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন দীপান্বিতা ভৌমিক, মালবিকা ভট্টাচার্য, কাকলি দাস, বেলা সাধুখাঁ, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। শেষে ছিল কয়েক জনের আবৃত্তি।

গানে-গানে

চিরপ্রার্থিত

হে ক্ষণিকের অতিথি’, ‘আজি বিজন ঘরে’, ‘শুধু তোমার বাণী’, ‘তুমি কি কেবলই ছবি’, ‘যে রাতে মোর’ সহ মোট দশটি রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রকাশিত হয়েছে ‘মিউজিক ২০০০’ থেকে। ‘চিরপ্রার্থিত’ শীর্ষক সংকলনে। শিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য। শিল্পীর নিজস্ব গায়নভঙ্গি এবং গাম্ভীর্যে গানগুলি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে ‘শুধু তোমার বাণী’ এবং ‘যে রাতে মোর’। শব্দগ্রহণে নারায়ণ দে।

কবিতার কথায়

মহাজাতি সদনে বঙ্গীয় সঙ্গীত কলাকেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠানের মূল শিল্পী ছিলেন সন্তুরে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও আবৃত্তিতে বেলালউদ্দিন। দেবাশিসের যন্ত্রে ভুপালি রাগের বলিষ্ঠ সঞ্চারণ গতিপূর্ণ ও সুরেলা হওয়ায় যথেষ্ট উপভোগ্য হয়। ওপার বাংলার স্বরচিত কবিতা পাঠে বেলাউদ্দিন অনবদ্য। এ ছাড়াও শুভ্রা দে, ববিতা বসুর রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং অনুরাধা দে-র স্বরচিত কবিতা পাঠ শোনা গেল।

খাঁটুরা চিত্তপট কথা

খাঁটুরা চিত্তপট সম্প্রতি উদযাপন করল বিশ্ব নাট্যদিবস। আলোচনার বিষয় ছিল ‘বর্তমান থিয়েটারের পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনা।’ অংশ নিয়েছিলেন প্রদীপ রায়চৌধুরী, আশিস চট্টোপাধ্যায়, অভীক ভট্টাচার্য, উৎপল ফৌজদার। সঞ্চালনায় ছিলেন শুভাশিস রায়চৌধুরী। শুরুতেই গান শোনান দীপা ব্রক্ষ্ম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন