আভিজাত্যের অন্দরে

ইন্টিরিয়রের মূল কথা স্পেস। বাড়ি হবে এমনই যেখানে থাকবে চোখের আরাম আর মনের প্রশান্তি। পাশাপাশি ততটাই গুরুত্ব রাখে রুচিবোধও।ইন্টিরিয়রের মূল কথা স্পেস। বাড়ি হবে এমনই যেখানে থাকবে চোখের আরাম আর মনের প্রশান্তি। পাশাপাশি ততটাই গুরুত্ব রাখে রুচিবোধও।

Advertisement

ঈপ্সিতা বসু

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৩
Share:

ছবি: দেবর্ষি সরকার 

ঘাসের গালিচায় মোড়া খোলা ছাদে দাঁড়াতেই এক অপূর্ব দৃশ্য। আকাশ ভেঙে ধেয়ে আসছে বৃষ্টি! কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা এলাকা ভেসে গেল বৃষ্টিতে। তার পরেই আবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে পড়ন্ত সূর্যের নরম আলো বারান্দা জুড়ে। কলকাতার বুকে বাড়িতে বসেই এমন এক সূর্যাস্তের আস্বাদ! স্বল্প–কালো চিকন মেঘের সঙ্গী হয়েই ঢুকেছিলাম আর্বানায়। ৪৪ তলায় হিমশিখা পালিত ও অনিন্দ্য পালিতের প্রায় পাঁচ হাজার স্কোয়্যার ফুটের পেন্টহাউসে এমনই চমকপ্রদ দৃশ্য!

Advertisement

প্রতিটি বাড়ির একটা নিজস্ব গল্প থাকে। এই বাড়ির গল্প শুরু খোলা ছাদেই। গল্ফগ্রিনের পৈতৃক ভিটেয় থাকাকালীন হিমশিখা-অনিন্দ্য স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক বাড়ির, যেখানে ঘরের কোণে কোণে মেঘ আর রোদ খেলা করবে। আর থাকবে প্রশস্ত জায়গা। দুই ছেলে-মেয়ে, বাবা আর আদরের পোষ্য ‘সিম্বা’কে নিয়েই তাঁদের সুখের ঠিকানা। ঘর জুড়ে ঠাসা জিনিসের বদলে মিনিমালিস্টিক সাজই পছন্দ কর্তা-গিন্নির। বাহুল্য নেই, কিন্তু পরতে পরতে আছে রুচির পরিচয়। অনিন্দ্য হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও হিমশিখার পেশা ছবি আঁকা। সাদা-ধূসরের ক্যানভাস তাঁর বড়ই পছন্দ। তাই প্রতিটি দেওয়াল আর আসবাবে সাদা, ধূসরের শেড স্থান পেয়েছে। যোগ্য সঙ্গত করেছে সোফা, কার্পেট, বেডকভারও। এই বাড়িতে রং বলতে তুঁতে নীল রঙের কুশন আর রাশি রাশি রঙিন শৌখিন শো-পিস। দেশ-বিদেশে বেড়ানোর স্মৃতি। কেরালা থেকে স‌ংগৃহীত কাঠের নৌকো আর শ্রীলঙ্কার জেলের মূর্তি চোখ টেনেছে। আবার দু’টি বেডরুমের মাঝের করিডর জুড়ে নানা রঙের মুখোশ। শুধু শ্রীলঙ্কা, বালি, সাউথ আফ্রিকা, তাইল্যান্ড থেকে কেনা, তা-ই নয়। আছে ভারতের কেরালা, পুরুলিয়ারও মুখোশও। কিন্তু মুখোশের সাজে ভারাক্রান্ত হয়নি এই দেওয়াল। বরং কৌতূহল তৈরি করেছে রাখার কৌশল।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতা থাকলে সাবেকিয়ানার ছোঁয়াও আছে অন্দরসজ্জায়। সাম়ঞ্জস্য বজায় রেখেছে ভারী কাঠের ডাইনিং টেবিল-চেয়ার। সেগুলো নিয়ে এসেছেন গল্ফগ্রিনের বাড়ি থেকেই। পুরনো বাড়ির অনেক আসবাব এখানে রাখার নিপুণতায় আর্কষণ বাড়িয়েছে। যেমন শ্বেত পাথরের কর্নার টেবিলে রাখা আছে পাথরের বুদ্ধ। আবার বর্মা টিক সেন্টার টেবিলে পুরনো আমলের টেলিফোন আর ওয়াইফাইয়ের সহাবস্থান। শিল্পীর বাড়ি হয়েও দেওয়ালে দেওয়ালে ছবির আড়ম্বর নেই! নিজের আঁকা ছবি এক মাত্র প্রবেশপথেই রেখেছেন। মেয়ের জলরঙে আঁকা ছবি দিয়ে কখনও দোতলার করিডোরের একঘেয়েমি কাটিয়েছেন, আবার কখনও শিক্ষকের আঁকা রমণীর ছবি দিয়েই ভারসাম্য বজায় রেখেছেন ডাইনিং স্পেসের ফাঁকা দেওয়ালে। এখানেই চোখে পড়ল হিমশিখার বুদ্ধমূর্তির সংগ্রহ।

Advertisement

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই আর এক চমক। একগুচ্ছ গাছ-লতা-পাতার সারি। কলোনিয়ান আইডিয়া। বাড়ির প্রতিটি কোণায় শিল্পীমনের ছাপ। নীচের ঘর থেকে যেখানে সিঁড়ি উঠেছে, তার পিছনের খালি অংশটি ঢাকা হয়েছে বার কাউন্টারের ধারণায়। বাড়ির সবচেয়ে চমকপ্রদ জায়গা মুভি স্পেস। দোতলায় ঢুকেই চোখ আটকে যায় এই স্পেসে। যেন বাড়ির মধ্যেই এক টুকরো মাল্টিস্পেস। অবসর যাপনের জন্য অনবদ্য। ওয়ালপেপার, টিভি, মুভি গ্যালারি শিল্প শৌখিনতায় জারিত রুচিবোধের প্রকাশবহ।

ছোট-বড় মিলিয়ে এ বাড়িতে বেশ কয়েকটি ঘর। তবে হিমশিখার একমাত্র কন্যা নয়নিকার ঘরটি বাকি বেডরুম থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। বেস রং সাদা হলেও কিউব প্যাটার্নে রঙিন ডিজ়াইন দেওয়াল জুড়ে। টিনএজ বয়সের চনমনে মনের প্রতিচ্ছবি যেন এই দেওয়াল। সঙ্গে আছে একটা গিটার। এটাও উচ্ছ্বল মনের প্রকাশ। ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী নয়নিকা গান শুনতে ভালবাসে বলে মায়ের এই উপহার।

খোলা ছাদেই শুরু হয়েছিল এই বাড়ির গল্প। ‘‘এখানে বসলেই, মন ভাল হয়ে যায়,’’ বললেন গৃহকর্ত্রী। রংবেরঙের টবে লিলি, নাইন ও’ক্লক, চন্দ্রমল্লিকা, বোগেনভিলিয়া, পাতাবাহার...শিল্পীমন কল্পনায় ভাসে এখানেই। পাশেই তাঁর ছবি আঁকার ঘর। নিজের ইজ়েলে কিন্তু অনেক রং। ধূসর-সাদার ক্যানভাস বলেই কি?

আভিজাত্য ও শিল্পসুষমায় ভরা বিলাসবহুল বাড়িতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হল অফুরান আলো আর হাওয়া। কিন্তু বাড়ির প্রতিটি সদস্যের আতিথেয়তা আর আন্তরিকতাই শেষ কথা...

রেশ রয়ে গেল একটা স্বপ্নে মোড়া সাধের ঠিকানার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন