ছোটবেলায় পার্কে খেলতে গিয়ে দোলনায় চড়ে না, এমন বাচ্চা খুব কমই আছে। কেউ কেউ দোলনায় ভর করে মাটির ঘাসঘাসালি ছাড়িয়ে অনেক উঁচুতে পাড়ি দিতে চায়, তো কারও মন ভেজে দোলনার হালকা ছন্দোময় গতিতে। আর খেলে বেড়ানোর দিনগুলো থেকেই কেমন করে যেন প্রাণের দোসর হয়ে ওঠে দোলনা। তাই নিজের বাড়ির পরিসর এক চিলতে হোক কিংবা তাতে থাকুক ঢালাও খোলামেলা জায়গা— অনেকেরই দোলনা লাগানোর সুপ্ত ইচ্ছে থাকে। এ তো গেল শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোর ইচ্ছেপূরণ। কিন্তু দোলনা আসলে ভোল পাল্টে দিতে পারে আপনার সাধের অন্দরমহলেরও। তার জন্য চাকচিক্যময়, ভীষণ দামি দোলনারও দরকার পড়ে না।
বাড়িতে দোলনা বলতেই সবচেয়ে আগে আমাদের মনে পড়ে ভারী দোলনার কথা। যেমন দোলনা আমরা অহরহ লাগিয়ে থাকি ছাদে, বারান্দায় অথবা বাড়ির লাগোয়া বাগানে। আর যেহেতু এই সমস্ত খোলা জায়গায় রাখা দোলনার গায়ে রোদের তাপ, ঝড়-বৃষ্টির আঁচ লাগতেই থাকে, তাই এ ধরনের দোলনা সাধারণত তৈরি হয় কাস্ট আয়রন দিয়ে। যে দোলনা আবার ছায়ায় থাকে, তা কাঠের হয়। কিন্তু এই সমস্ত গতানুগতিকতার বাইরেও দোলনা হয় নানা রকম। আর বাড়ির সাজসজ্জা অনুযায়ী বদলে যেতে পারে দোলনার ধরনও।
কাঠের তক্তার উপর দামি লেদারের দোলনার কদরই আলাদা। বসার ঘরে সোফা কিংবা মোড়ার পাশাপাশি এ ধরনের দোলনা লাগাতে পারেন। দেওয়াল এবং আলোর রং অনুযায়ী বদলে যাবে দোলনার রং। আবার ইচ্ছে হলে বসার জন্য এক দিকে পুরোপুরি পাকা ব্যবস্থা করতে পারেন দোলনার মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে কাঠের চওড়া দোলনাই শ্রেয়। উপরে কয়েকটা মখমলি বালিশ রাখতে ভুলবেন না যেন!
স্বল্প জায়গায় বসার ঘরে দোলনা
বাচ্চাদের ঘরের জন্য দোলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবার প্রাথমিক বিষয়টাই হল নিরাপত্তা। এমন দোলনা বাছতে হবে, যাতে দৌড়োদৌড়ির মাঝে ধাক্কা লেগে বাচ্চারা যেন আহত না হয়। সে ক্ষেত্রে কাপড়ের দোলনা খুব ভাল। দোলনার উচ্চতা মাটি থেকে যেন খুব বেশি না হয়। এ ছাড়াও দোলনার নীচে ভারী, পুরু গালচে রাখা থাকলে, দুলতে দুলতে বাচ্চা দোলনা থেকে পড়ে গেলেও আঘাত গুরুতর হবে না।
কখনওই কি রান্নাঘরে দোলনা লাগানোর কথা ভেবেছেন? শুনতে অবাক লাগলেও রান্নাঘরে দোলনা এখন নতুন ট্রেন্ড। এখনকার অনেক ফ্ল্যাটে কিচেনের সঙ্গেই ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা থাকে। তারই মাঝে এক জায়গায় লাগিয়ে ফেলুন দোলনা। এমন দোলনার ব্যবস্থা করতে পারেন, যা প্রয়োজন পড়লে খুলেও রাখা যায়। আপনার রান্নার ফাঁকে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখতে খামোকা বোকাবাক্স চালিয়ে রাখতে হবে না। এ বার থেকে বরং সে মনের আনন্দে খেলা করুক আপনারই চোখের সামনে, দোলনায়।
আরামকেদারায় বসে বই পড়ার ইচ্ছে আর মেজাজটাই আলাদা। কিন্তু ভাবনাচিন্তাকে যদি আরও এক ধাপ এগিয়ে বাড়িতে রাখা যায় সুয়িং লাউঞ্জ? অর্থাৎ এমন নরম দোলনা, যাতে আয়েশ করে শুয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রাখবেন আরামে। আর সঙ্গে থাকুক পেলব রোদ।
সুয়িং চেয়ার
ইদানীং কালে আবার সুয়িং চেয়ারে মেতেছে অন্দরসজ্জা। সোজা কথায় বললে সুয়িং চেয়ার হল দোলনা আর চেয়ারের মেলবন্ধন। অর্থাৎ দোলনা দড়ি দিয়ে উপরের সিলিং বা ফলস সিলিং থেকে ঝুলবে না। বরং চেয়ারের মতো স্ট্যান্ডের উপর ভর করে থাকবে সেই দোলনা। এতে দোলনা ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকবে না।
বাচ্চার মনোরঞ্জন করতে হোক, কিংবা যুগলের শখে... দোলনা কিন্তু আপনার অন্দরমহলে এনে দেবে উৎসবের মেজাজ। আর হোক না সেই উদ্যাপন দৈনন্দিন।