নানা রকম...

অনুভবের যে বৈভব

শিখা বসুগোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে একক গানে শিল্পী অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুচিত্রা মিত্রের ছাত্র অগ্নিভকে এত দিন জানা ছিল মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বলে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে একক গানে শিল্পী অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুচিত্রা মিত্রের ছাত্র অগ্নিভকে এত দিন জানা ছিল মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বলে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল, বিবেকানন্দের গান থেকে পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের সুরে বন্দেমাতরম, কমলাকান্তের গান থেকে নিজের সুরারোপিত শ্যামাসঙ্গীত, নানা ধরনের গানে সুর ও গায়কি অনুভবের যে বৈভব আর লাবণ্য নিয়ে গান করলেন ওই সন্ধ্যায়, সে এক অন্য অগ্নিভ।

Advertisement

প্রথম নিবেদন অবশ্যই রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। একে একে ‘জগতের আনন্দযজ্ঞে’, ‘অন্তরে জাগিছে অন্তর্যামী’, ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’, ‘শুভ দিনে এসেছি দোঁহে’, ‘এ কী সুন্দর শোভা’। প্রতিটি গানই একবার শুনে আশ মেটে না। সুরে, অনুভবে, চিত্রময়তায় অসামান্য। মিশনের প্রেক্ষাগৃহে বসে স্বামী বিবেকানন্দের গাওয়া ‘মন চল নিজ নিকেতনে’-র মতো তুলনাহীন নিবেদন আর কী বা হতে পারে। রবীন্দ্রগায়কী থেকে অগ্নিভ কী অনায়াসে চলে গেলেন বিবেকানন্দের গানে। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে একদা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র গাওয়া সেই চিরকালীন গান ‘ওই মহা সিন্ধুর ওপার থেকে’ শিল্পীর গায়নে আশ্চর্য এক ভাবগম্ভীর মর্যাদা পেল। রবীন্দ্রগানের পাশে শ্যামাসঙ্গীত বা ভক্তিগীতি যে সমান শ্রুতিসুখকর হয়ে উঠতে পারে, এ কথা অনায়াসে প্রমাণ করলেন শিল্পী ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’ আর কমলাকান্তের সেই বিখ্যাত রচনা ‘মন রে কৃষি কাজ জান না’ গানে। স্বসুরারোপিত ‘তারাপীঠ যাইনি আমি/ তারাপীঠ মনের মাঝে/ সেথায় আমার তারা মা বিরাজে’ রঙে রূপে যে কোনও প্রাচীন শ্যামাসঙ্গীত থেকে কম সুখশ্রাব্য নয় ভক্তির গভীরতায়। এই অনুভবের প্রকাশেই অগ্নিভ সেদিন বারবার উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলেন। শেষ করলেন বন্দেমাতরম দিয়ে এই প্রতিবেদকের শ্রবণে যার অণুরণন এখনও বহমান।

Advertisement

ওগো বৃষ্টি আমার...

পিনাকী চৌধুরী

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ‘আস্থায়ী’র অনুষ্ঠানের শুরুতেই সুকুমার রায়ের ‘শব্দকল্পদ্রুম’ পাঠ করে সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা। পরে রঞ্জন চৌধুরীর কবিতা ‘ভুলোবাবু’ পাঠ করলেন সৌমিত্র মণ্ডল, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘জলসা’ পাঠ করলেন অন্বেষা সাহু। নজরুলের ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ পাঠ করেন শিক্ষা সরকার, রীনা রায় প্রমুখ। দ্বিতীয় পর্বে ছিল দুটি শ্রুতিনাটক। প্রথমটি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ছন্দপতন’। দ্বিতীয়টি হল সমীর দাশগুপ্তের ‘তৃতীয় আর এক জন’। স্বামী-স্ত্রীর সুখী দাম্পত্যে যখন তৃতীয় এক জনের আগমন ঘটে এবং দাম্পত্যে চিড় ধরে, তাই নিয়ে নাটক। অংশগ্রহণে ছিলেন অমলেন্দু ভট্টাচার্য এবং সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে একক আবৃত্তিতে ছিলেন সুদর্শনা ভট্টাচার্য। সব শেষে ছিল হৈমন্তী শুক্লর গান। প্রথমে সরস্বতী বন্দনা, পরে মীরার ভজন ‘আপনে মন্দির মে’। ‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না’ এখনও কত দরদ দিয়ে গাইলেন শিল্পী।

বিবেকের পথে

অম্বালী প্রহরাজ

জিডি বিড়লা সভাঘরে মঞ্চস্থ হল ‘বিবেকের পথে’। আয়োজক কলামণ্ডলম কলকাতা। নৃত্যনির্মিতি থাঙ্কমণি কুট্টি। বিবেকানন্দের শৈশব থেকে সন্ন্যাসধর্ম পর্যন্ত বিভিন্ন শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর মাধ্যমে নিবেদিত হল ‘বিবেকের পথে’। তাঁর ছোটবেলা, শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে পরিচয়, পরিব্রাজক জীবন, দৈব আহ্বান এবং শিকাগোতে বিশ্বধর্মসভা প্রত্যেকটি পর্বের স্মরণীয় মুহূর্তগুলি মঞ্চের পর্দায় ভেসে ওঠে। এবং ঘটনাসমূহের রস অনুযায়ী শাস্ত্রীয় নৃত্য উপস্থাপিত হয় বিভিন্ন গানের মাধ্যমে। ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ গানে সুবিকাশ ভট্টাচার্যের ওড়িশি ভালো লাগে। কথাকলি অংশে গৌতম ভট্টাচার্য এবং তাঁর তিন জন সহযোগীর আহার্য এবং মুখজ অভিনয়ের এক অনবদ্য মিশেল ঘটে। কত্থক শৈলী পরিবেশন করেন জলসা চন্দ। ‘উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে’ গানটির সঙ্গে কলামণ্ডলম শিল্পীবৃন্দের দলগত ভরতনাট্যম পরিবেশনাটি মনকে স্পর্শ করে। ঝিনুক, তানিয়া, শিবাঙ্গী, ইলিনা প্রমুখ নৃত্যশিল্পীর পরিমার্জিত অংশগ্রহণ প্রযোজনাটিকে অনেক গুণ এগিয়ে রাখে। সামগ্রিক পরিচালনায় সোমনাথ জি কুট্টি। আবহসঙ্গীত স্বপন পাকড়াশি। কণ্ঠে ইন্দ্রাণী সেন, মনোময় ভট্টাচার্য, অলক রায়চৌধুরী, প্রবুদ্ধ রাহা। অনুষ্ঠানের সুসমাপ্তি ঘটে সিদ্ধার্থ বসুর সরোদ বাজনায় এবং তবলায় সুরজাত রায়।

গানে ভাষ্যে পঞ্চকবি

সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে নিবেদিত হল ‘পঞ্চকবি’র গান। শিল্পী ছিলেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ১৫০ বছরের জন্মবর্ষে তাঁর ছবি সংবলিত রৌপ্যমুদ্রা প্রকাশ করলেন ‘স্টেপ ফর মিউজিক’। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত ও অতুলপ্রসাদ। পাঁচ জনের সংকলন যেন নতুন মাত্রা পেয়ে গেল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষ্যপাঠে। অসাধারণ তাঁর কণ্ঠশৈলীতে যেন শ্রোতাদের আবেগে শিহরিত হতে হয়। ঋদ্ধির গানেও ধরা পড়ে সাঙ্গীতিক দক্ষতা। ‘আমায় রাখতে যদি আপন ঘরে’, ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, ‘তাই তোমার আনন্দ’, ‘চাঁদ হেরিছে’ গানগুলি প্রশংসনীয়।

পরিপূর্ণতায় ভক্তিরস

শ্যামাসঙ্গীত ও দাদাঠাকুরের গান শীর্ষক অনুষ্ঠানের শিল্পী ছিলেন গানে দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় এবং ভাষ্যপাঠে জগন্নাথ বসু। প্রথম পর্বে ছিল আটটি শ্যামাসঙ্গীত। দেবশ্রীর কণ্ঠে প্রতিটি গানেই পরিপূর্ণতা পায় ভক্তিরস ও আবেগ। কাহারবা আধারিত ‘রাঙা পায়ে রাঙা জবা’, একতালে ‘শ্মশানে বলো কী হয়’, রাগ পুরিয়া কল্যাণে ‘ঘুম থেকে মা উঠে দেখি’ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয় পর্বের দাদাঠাকুরের গানেও শিল্পীর যোগ্যতা পরিস্ফূট হয় নয়টি গানে। তবে এদিনের সেরা গান ‘সাবধানে আসিস মা তারা’। জগন্নাথ বসুর ভাষ্যে এবং গানের সংমিশ্রণে অনুষ্ঠানটি একটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে। আয়োজক সোহিনী।

হৃদয় ভরে

কল্যাণ গুহের ভাবনায় রোটারি সদনে অনুষ্ঠিত হল ভাস্বতী দত্তের একক ‘হৃদয় ভরে দাও’। বাইশটি পূজা পর্যায়ের গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মহারাজ কী সাজে’, ‘শূন্যহাতে ফিরি হে নাথ’ প্রভৃতি গানগুলি। গানের সঙ্গে ছিল নৃত্যও। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী রাহিমা আলির নৃত্য-ভঙ্গিমা মনে রাখার মতো। এ দিন প্রধান অতিথি ছিলেন পূরবী মুখোপাধ্যায়। শুরুতেই ছিল উদ্বোধনী সঙ্গীত দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘পুনশ্চ’।

রোদনভরা..

প্রেম ও বসন্তের গানে সম্প্রতি কলামন্দিরে গাইলেন কাকলী দাস। বেশ কিছু বাছাই গানের মধ্যে তাঁর নিবেদনে ছিল ‘ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী’, ‘আহা আজি এ বসন্তে’, ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, ‘সহে না যাতনা’, ‘শুধু যাওয়া আসা’। তবে উল্লেখযোগ্য গানটি হল ‘রোদনভরা এ বসন্ত’। শিল্পীর সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (কী বোর্ড), সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য (তবলা)। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলেন অরূপবীণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন