মাস্টারমশাই

আজকের দিনে আমার ভোকাল টনিক চলত না

মহাকাব্যিক পঁচিশ বছর! কখনও লাল-হলুদ, কখনও সবুজ-মেরুন। কখনও নীল জার্সির ভারত। কোচ হিসেবে পুরনো সেই সাম্রাজ্য বিস্তার আর তার ভাঙাগড়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি নিয়ে দীর্ঘ এত বছর বাদে অকপট স্বয়ং প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে প্রথম কিস্তি।মহাকাব্যিক পঁচিশ বছর! কখনও লাল-হলুদ, কখনও সবুজ-মেরুন। কখনও নীল জার্সির ভারত। কোচ হিসেবে পুরনো সেই সাম্রাজ্য বিস্তার আর তার ভাঙাগড়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি নিয়ে দীর্ঘ এত বছর বাদে অকপট স্বয়ং প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে প্রথম কিস্তি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share:

মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল, গোলমুখে লড়াই

ক্ষুদিরাম গ্যাস খেয়ে মরেছিল! আমরা মরতে চাই না।”

Advertisement

তেত্রিশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তিন-তিনটে যুগ। কিন্তু কথাটা এখনও ভাবলে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে।

আমার এক ফুটবলারের মুখে কিনা এমন বিশ্রী কথা! জঘন্য উপমা!

Advertisement

বিরাশির দিল্লি এশিয়াডের আগে সল্ট লেক স্টেডিয়ামের জাতীয় ক্যাম্পে তখনকার এক বিখ্যাত মিডফিল্ডার, যে দু’টো পায়েই সমান নিখুঁত পাস বাড়াতে পারত, তার আমাকে বলা ওই টিপ্পনী বোধহয় ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে ঢুকে গিয়েছে।

তার পর জাতীয় ক্যাম্প ছেড়ে চলে গিয়ে ফুটবলারদের সেই ঐতিহাসিক বিদ্রোহ।

ফেডারেশনের বিরাট প্রভাবশালী কর্তা অশোক ঘোষের, “বাবা পিকে, প্রাইম মিনিস্টার পর্যন্ত ব্যাপারটা কী জানতে চেয়েছেন আমাদের কাছে। তুই-ই দিল্লি গিয়ে ইন্দিরা গাঁধীকে যা বোঝানোর বোঝা,” বলেটলে আমাকে ম্যাডাম গাঁধীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। কত নাটক!

কিন্তু আজ দু’হাজার চোদ্দোয় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, সে দিনের পরিস্থিতির বিচারে ওই বিশ্রী টিপ্পনীটা পুরোপুরি মিথ্যেও ছিল না! আর এখন তো ক্ষুদিরাম মানে মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে ‘বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী’!

সেবার মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো বড় ক্লাবগুলোকে মরসুমের মধ্যেই ফেডারেশনের ফতোয়ায় জাতীয় ক্যাম্পে ফুটবলার ছেড়ে দিতে হয়েছিল, ঘরোয়া ট্রফি জেতার জন্য প্রচুর টাকা দিয়ে প্লেয়ার সই করানো সত্ত্বেও।


শ্যাম থাপার সঙ্গে ডুয়েলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

ফলে জাতীয় দলের ফুটবলারদের পিছনে আর গ্যাঁটের কড়ি ক্লাবগুলো এশিয়াড ক্যাম্প তার পর দিল্লি গেমস শেষ হওয়া পর্যন্ত খরচ করতে রাজি হয়নি।

ক্লাব থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফুটবলারদের। অথচ ফেডারেশনও ছেলেদের সেটা পুষিয়ে দেয়নি।

এশিয়াডে খেলার শেষমেশ সুযোগ মিলবে কি মিলবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। অথচ তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পে কাটাতে বাধ্য হয়ে ‘আমও গেল, ছালাও গেল’-র অবস্থা তখন ফুটবলারদের।

ক্লাবের পেমেন্ট বন্ধ। ফেডারেশন থেকেও এক কানাকড়ি নেই। কেন প্লেয়াররা শুধু আমার মুখের কথায়, আমার বড় বড় ভাষণে দেশের জন্য প্রাণপাত করবে? সে আমি যত বড়ই কোচ হই না কেন!

কিন্তু তা বলে কি ভোকাল টনিক মূল্যহীন?

তা হলে বিশ্ব ফুটবল এত অত্যাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরেও কেন মাসখানেক আগেই বিশ্বকাপ ফাইনালে মারিও গোটজেকে পরিবর্ত নামানোর সময় জার্মান কোচ জোয়াকিম লো ছেলেটার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, “যাও, মাঠে নেমে দেখিয়ে দাও, তুমি মেসির চেয়েও বড় ফুটবলার!” এটা নিছক ভোকাল টনিক ছাড়া আর কী?

আরে, গোটজে-লো কেন, ওদের বাপ-ঠাকুর্দাও খুব ভাল করে জানে মেসি কে! অথচ সেই গোটজেই ফাইনালের একমাত্র গোলটা করে জার্মানিকে চব্বিশ বছর পর বিশ্বকাপ এনে দিল!

ভোকাল টনিক ব্যাপারটার সঙ্গে আমার নিজের প্রথম পরিচয়ের অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব কষ্টের। আঠারো বছর বয়স তখন আমার। পঞ্চাশের দশকের মোটামুটি গোড়ার দিক। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বিহারের কাটিহার থেকে কলকাতার ক্লাবে খেলতে এসেছি। তো সেই এরিয়ানের দাশু মিত্র মহাশয় এক দিন আমাকে সব ফুটবলারের সামনে “বড় আমার বিহারীবাবু কলকাতা ফুটবলে হিরো হতে এয়েচেন” বলে বসলেন!


ট্রফি হাতে সুব্রত ভট্টাচার্য ও গৌতম সরকার।

কান্নাটা সব টিমমেটের সামনে এলেও সেটাকে কোনও রকমে আটকে ক্লাব টেন্টের বাথরুমে গিয়ে চোখের জল ফেলেছিলাম সে দিন। পরে জানলাম, কথাটা নাকি দাশু মিত্র আমাকে তাতাতে বলেছিলেন।

আর অনেক বছর পরে বুঝেছিলাম, ওটাই ভোকাল টনিক। আসলে ফুটবলারজীবন থেকেই এই খেলাটার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজ নেওয়াটা যেন আমার রক্তে ছিল। কোচ, কর্তা, সতীর্থ ফুটবলার, পারলে ক্লাবের মালি পর্যন্ত কাউকে ‘রেহাই’ দিতাম না। অস্বীকার করব না, প্রশ্ন করে করে এক-এক সময় বিরক্তও করে তুলেছি তাদের। কিন্তু মাঠ থেকে সম্পূর্ণ অবসর নেওয়া এই প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে বারবার মনে হয়, বছরের পর বছর সবার থেকে সেই প্রশ্রয়টা পেয়েছিলাম বলেই ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে আমি এই ‘পিকে’ হয়ে উঠতে পেরেছি।

কোচ হিসেবে নিজের দলকে ভোকাল টনিক দেওয়ার প্রথম বড় রেজাল্ট পাই ছিয়াত্তরে। তার আগে ইস্টবেঙ্গলের টানা ছ’বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শেষ চার বারের আমি কোচ। মোহনবাগানকে শেষ সাক্ষাতে পঁচাত্তরের শিল্ড ফাইনালে আমার ইস্টবেঙ্গল পাঁচ গোল দিয়েছে। তার পর কতকটা নাটকীয় ভাবে (সেই কাহিনি পরের কোনও কিস্তিতে শোনাব) কয়েক মাসের মধ্যেই মোহনবাগান কোচ হয়ে যাওয়া আমার।

সে বারের লিগে বড় ম্যাচ নিয়ে ময়দানে যা আলোড়ন উঠেছিল, অবিশ্বাস্য! ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারতে হারতে হয়রান মোহনবাগান উঠে দাঁড়াবার স্বপ্নে বিভোর এমন একটা লোকের উপর অগাধ বিশ্বাস নিয়ে, যে কিনা তাদের এত বার হারের নেপথ্যে। তো সেই আমি ছিয়াত্তরের লিগে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের দিন খেলা শুরুর অনেক আগে মোহনবাগান টেন্টে সমস্ত ফুটবলারকে আসতে বলে দিলাম। আর সুব্রত-প্রসূন-ভৌমিক-হাবিব-আকবররা সবাই আসতে গোটা টিম নিয়ে সটান ক্লাবের বড় হল-টায় শিবদাস-বিজয়দাস ভাদুড়িদের ছবির সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলাম।

তার পর ছবিগুলোর দিকে আঙুল তুলে আমার টিমকে বলেছিলাম, “আজ, এঁদের আত্মা তোমাদের কাছে একটা জয় চাইছে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে গত চার-পাঁচ বছরে মোহনবাগানের একের পর এক হার দেখতে দেখতে মহান মোহনবাগানি শিবদাস-বিজয়দাসদের আত্মা দুঃখে কাঁদছে। এঁদের আত্মা আজ অতৃপ্ত। তোমরাই পারো, ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আজই এঁদের আত্মাকে শান্তি দিতে। কী বলো, পারবে না!”

পাঠক, বিশ্বাস করুন। পুরোটাই আমার পূর্ব পরিকল্পিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু কথাগুলো বলতে বলতে কেমন যেন নিজের শরীরের মধ্যেও একটা অদ্ভুত রকমের শিরশিরানি অনুভব করছিলাম! তার পর সেই ঐতিহাসিক সতেরো সেকেন্ডের গোল আকবরের।

এখানে একটা ব্যাপার জানাই। যেটা আজ আটত্রিশ বছরেও কোথাও বলিনি বা লিখিনি।

ছিয়াত্তরের লিগের বড় ম্যাচের বেশ কিছু দিন আগে আমি আমার পুরনো ক্লাবের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে গোপনে একটু বেশি যোগাযোগ রাখা শুরু করে দিয়েছিলাম। ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে এলেও ওখানে চার বছরে কিছু ভাল বন্ধু তো হয়েছিল আমার। আসলে তাদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছিলাম, পিকে-র মোহনবাগান ম্যাচ নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের মানসিকতাটা ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে! তো যা বুঝেছিলাম, ওরা ‘ঠিক স্টেজে মেরে দেব’... ‘আরে, আমরা ইস্টবেঙ্গল, ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন’ গোছের উড়ো-উড়ো অবস্থায় রয়েছে।

বড় ম্যাচের আগে প্র্যাকটিসে হার্ড ট্রেনিংয়ের বদলে নাকি হাসি-ঠাট্টাই বেশি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলে! সে জন্য ছিয়াত্তরের লিগের বড় ম্যাচে আমার স্ট্র্যাটেজিই ছিল, যদি কিক-অফ আমরা পাই, তা হলে ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে-সঙ্গে একটা লম্বা পাস লেফট উইংয়ে বাড়াতে হবে। কারণ ওদের রাইট ব্যাক সুধীর কর্মকার আগের চেয়ে একটু হলেও স্লো হয়েছে। এ ধরনের ফুটবলার ম্যাচের প্রথম মিনিটে অবশ্যম্ভাবী একটু জড়োসড়ো থাকে। সেই সুযোগ নিয়ে উলগানাথন যদি সুধীরকে টপকে টাচলাইন থেকে ভাল ক্রস রাখতে পারে ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি বক্সে, তা হলে আকবর-হাবিব-প্রসূন, তিন জন বলটা ফলো করে হেড বা শট নেবে গোলে।

কপাল ভাল। পুরো প্ল্যানটাই ঠিকঠাক খেটে গিয়েছিল! তা ছাড়া, প্রথম মিনিটেই ওই রকম একটা অ্যাটাকের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম তার আরও একটা কারণ, তার ঘণ্টাকয়েক আগেই টিমকে ভোকাল টনিক দিয়েছিলাম। শুরু-শুরুতে তাই দলটা বাড়তি তেতে থাকবেই। এবং সেই প্ল্যানটাও খেটে গিয়েছিল সে দিন।

সেই আটত্রিশ বছর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে আমার গোপনে খোঁজখবর নেওয়ার পরিকল্পনাটা এখনও আধুনিক ফুটবলেও কোচেদের একটা বড় অস্ত্র। এ বারের বিশ্বকাপেই তো প্রি-কোয়ার্টারে চিলির কঠিন চ্যালেঞ্জ টপকানোর প্রস্তুতিতে ব্রাজিল ওদের দু’জন প্রাক্তন ফুটবলারকে গোপনে বিপক্ষের প্র্যাকটিস দেখতে পাঠিয়েছিল। এ বারই কলকাতা লিগে টালিগঞ্জের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে ওদের একটা আস্ত ম্যাচই গোপনে দেখতে নিজের সহকারীকে পাঠিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগান কোচ সুভাষ ভৌমিক। ভোম্বলবাবু বরাবরই আমার কোচিংয়ের ভক্ত। অনেক কিছুই অনুকরণ করে রেজাল্ট পেয়েছে। বিপক্ষের উপর গোয়েন্দাগিরিটাও রপ্ত করে ফেলল।

অলংকরণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সাতাত্তরে পেলে ম্যাচের আগে আবার মোহনবাগান দলকে একটু অন্য ভাবে তাতিয়ে ছিলাম। জানতাম, ছেলেদের যে কথাগুলো বলছি, সেগুলো ফুটবল খেলাটার ট্যাকটিক্স-টেকনিকের পরিপ্রেক্ষিতে অযৌক্তিক। কিন্তু প্রতিবন্ধীও তো পাহাড় অতিক্রম করে। অসাধ্যসাধন তো সেটাকেই বলা হয়।

কসমস ম্যাচ আমার কোচিং জীবনে একটা বিরাট প্রাপ্তি। সে দিন সত্যিই মনে হয়েছিল, ইস্টবেঙ্গলের স্বর্ণযুগ ছেড়ে মোহনবাগানের কোচ হয়ে এসে আমি মোটেই ভুল করিনি। নইলে পেলে ফুটবলসম্রাটের বিরুদ্ধে দল নিয়ে নামার এত বড় সৌভাগ্য আমার জীবনে আসত না। পেলের বিরুদ্ধে কোনও স্ট্র্যাটেজি খাটে না। তাও আবার একটা ভারতীয় ক্লাবের! তাই সোজা ভোকাল টনিকে চলে গিয়েছিলাম ম্যাচের দিন কয়েক আগে থেকেই। শিবাজিকে বলেছিলাম, “লেভ ইয়াসিন-ও তোর মতো ভাল গোলকিপার ছিল না।” ও প্রথমে খানিকটা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর হেসে ফেলল। কিন্তু আমি এতটুকু না দমে ফের বললাম, “হ্যাঁ, সত্যি বলছি, বিশ্বাস কর। তোর কিপিংয়ে একটা ব্যাপার আছে যেটা লেভ ইয়াসিনের মধ্যেও এতটা বেশি নেই।” গৌতম সরকারকে বলেছিলাম, “তুই বিশ্বের এক নম্বর মিডফিল্ডার!”

“ধ্যাৎ, প্রদীপদা কী আবোলতাবোল বকছেন,” পাল্টা বলেছিল আমার চিরকালের বিচ্ছু শিষ্য গৌতম। কিন্তু আমি সব জেনেবুঝেও নাছোড় সে দিন। “ইয়ার্কি মারছি না রে। তোর ট্যাকল, বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা, আবার একই সঙ্গে কাউন্টার অ্যাটাক শুরু করা বিশ্বে ক’জনের আছে বল!”

গোটা ম্যাচে পেলের থেকে সত্যিই গৌতম অন্তত দশ বার বল কেড়ে নিয়েছিল কসমস বনাম মোহনবাগান ২-২ লড়াইয়ে!

আসলে ভোকাল টনিক অনেকটাই যে পুজোর মন্ত্র গোছের ব্যাপার। যখন অপার্থিব কিছু বলার দরকার, তোমার টিমকে তাতানোর জন্য সেটাই বলতে হবে কোচকে। দিনের শেষে সেই উপমাগুলো হাস্যকর শোনালেও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে সেটাই প্লেয়ারের মনের ভেতর, গোটা টিমের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে তোলে। আর সেই আগুনই পুড়িয়ে খাঁক করে দেয় সুপার হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীকেও। নইলে ইমরান খান কেন বলত, আমার টিমের তৌফিক আমেদ বিশ্বের এক নম্বর অফস্পিনার! কিংবা ইনজামাম-উল-হক সচিন তেন্ডুলকরের চেয়েও অনেক বেশি প্রতিভাবান! আসলে এগুলো নিজের দলের মানসিকতা সব সময় টগবগে রাখার ট্যাকটিক্স। টিমও মনে করবে, দ্যাখো, কোচ বা ক্যাপ্টেনের আমাদের উপর কী বিরাট বিশ্বাস। অপরিসীম আস্থা।

তবে আমার ক্লাব কোচিং জীবনের দু’টো অধ্যায় গত শতাব্দীর দু’টো ভিন্ন দশকে বলে ভীষণ ভাবে অনুভব করেছি, মাঝের দশ-বারো বছরে ভোকাল টনিকের রকমফের ঘটে গিয়েছে। সত্তর দশকে গৌতম-সুভাষ-সুরজিৎ-হাবিব-শ্যাম থাপাদের জন্য যে ভোকাল টনিক কাজ দিত, আটের দশকে কৃশানু-বিকাশ-মনোরঞ্জন কিংবা তারও পরে নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ভাইচুংদের জন্য সেটা বেকার। আশির দশকে ময়দানে উত্থান ঘটিয়ে যে সব ফুটবলার আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে উঠেছিল, তাদের বিশেষ কোনও ম্যাচের আগে উদ্দীপ্ত করতে গিয়ে দেখেছি ভোকাল টনিকের ভাষা পুরো পাল্টে ফেলতে হচ্ছে। ছেলেদের অনেক বেশি জাগতিক প্রাপ্তি, লাভ-লোকসানের কথা শোনালে তবেই ড্রেসিংরুমে আমার কথা শুনতে তারা আগ্রহী। এক দশক আগের মতো ‘ফুটবলের মাঠ তোমার মাতৃভূমি”... “ফুটবলটা তোমার মায়ের আঁচল”... ‘যা দিয়ে তোমার ফুটবল-মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিতে হবে তোমাদেরই,’ মার্কা ভোকাল টনিক আমার ক্লাব কোচিংয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের হাতেনাতে বুঝেছিলাম আর কাজে লাগার নয়। তখন অন্য রাস্তা নিয়েছিলাম। তা ছাড়া শুধু টিমই নয়, ব্যক্তিগত ভাবে সুভাষ-গৌতমকে যে ভোকাল টনিকে চাঙ্গা করতে পেরেছিলাম, সেই একই কাজ কৃশানু-বিকাশদের জন্য করতে গিয়ে অন্য রকম ভোকাল টনিকের দরকার পড়েছিল। সেটা আবার অন্য গল্প!

(চলবে)

অনুলিখন: সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

পরের শনিবার আমি বনাম অমল দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন