গরমে জ্বর হলে জল খান বেশি করে

সাবধান না হলেই নানা জটিলতা। কী ভাবে ভাল থাকব? পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. সুব্রত মৈত্র। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।সাবধান না হলেই নানা জটিলতা। কী ভাবে ভাল থাকব? পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. সুব্রত মৈত্র। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৮
Share:

প্র: হঠাৎ করে গরমটা এমন পড়ে গেল যে নাজেহাল অবস্থা। কী করব?

Advertisement

উ: হাল্কা জামাকাপড় পরুন। হাল্কা সহজপাচ্য খাবার খান। বাইরে বেরোলে সরাসরি রোদ লাগাবেন না।

প্র: একটুতেই ক্লান্ত লাগছে। কেমন যেন ঘুম ঘুম ভাব।

Advertisement

উ: গরমের জন্যই এমনটা হয়। বার বার জল খান। বাইরে বেরিয়ে বেশি ঘামলে নুন-জল খেতে পারেন।

প্র: তার ওপর তো জ্বরও শুরু হয়েছে। হঠাৎ গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ, তার পরই জ্বর। অনেকেরই হচ্ছে। কেন?

উ: সিজন চেঞ্জের জন্য। এই যে হঠাৎ করে গরমটা পড়ে গেল, আর তাতেই বাড়ি ফিরে স্নান, ঠান্ডা জল খাওয়া শুরু হয়ে গেল। হুট করেই রাতে আবার এসি চালিয়ে শোওয়া শুরু হয়ে গেছে। যাঁদের অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে বা সর্দি-কাশির ধাত রয়েছে, তাঁদের তো চট করে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে।

প্র: এই জ্বরে বেশ অস্বস্তি লাগে। কী করব?

উ: কিছু করবেন না। একটু বিশ্রাম নিন। বেশি করে জল খান। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খাবেন।

প্র: প্যারাসিটামল খেলে তো কিছু ক্ষণের জন্য জ্বর কমছে। তার পর আবারও বাড়ছে।

উ: দিন দুয়েক এমনটা চলবে। তার পর আস্তে আস্তে কমে যাবে, যদি জ্বরটা সিজন চেঞ্জের জন্য হয়। আর যদি দেখেন তার পরেও জ্বর থাকছে, কমার লক্ষণ নেই, তবে ডাক্তার দেখাতে হবে। সারা দিনে জ্বরটা কেমন থাকছে, তার একটা চার্ট তৈরি করে রাখুন। তাতে বোঝা যাবে ঠিক কখন জ্বরটা বেশি হচ্ছে। আসলে জ্বর অনেক কারণেই হতে পারে। সে জন্যই তৈরি থাকা।

প্র: ম্যালেরিয়া নয়তো?

উ: এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়া কেস আমরা পাইনি। আগেই বলেছি, জ্বরের নানা কারণ থাকতে পারে। সেটা কিছু রুটিন টেস্ট করলেই ধরা পড়বে। আর এ ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া কি না, তা-ও দেখে নেওয়া হয়। পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে জ্বর কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক আর অ্যান্টি অ্যালার্জিক দরকার কি না। তাই দুই দিন পরেও জ্বর না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ইউরিন আর ব্লাড টেস্ট করে নিতে হবে।

প্র: অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তো আরও কয়েক দিন কাজের দফারফা।

উ: জীবাণুর সংক্রমণের জন্য জ্বর হলে তো প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেতেই হবে। নইলে তো জ্বর নিয়ে বসে থাকতে হবে। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে কিছু ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে।

প্র: জ্বর থাকলে স্নান করা যাবে?

উ: মাথা ধুয়ে ঈষদুষ্ণ জলে গা স্পঞ্জ করে নিন। জ্বর বাড়বে না।

প্র: এই সিজন চেঞ্জে গলার অবস্থাও তো খুব খারাপ হচ্ছে।

উ: নিয়মিত নুন-জলে গার্গল করুন। তাতেই কমবে। তবে গার্গল করার পরও যদি না কমে, তবে ফ্যারিংজাইটিস বা টনসিলের সমস্যা আছে কি না, তার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে। অ্যান্টি অ্যালার্জিক খেতে হবে কি না দেখতে হবে।

প্র: খুসখুসে কাশি তো রাতে ঘুমোতেই দেয় না। রাতে যেন আরও বেড়ে ওঠে। সকালে উঠেই শরীরটা বিগড়ে যায়।

উ: অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেট বা সিরাপ খেলেই কাজ দেবে। তবে খাওয়ার আগে কোন সিরাপ বা কতটা খেতে হবে তা কিন্তু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

প্র: কিন্তু ওতে তো ঘুম পাবে। কাজ করব কী করে?

উ: সব কাশির ওষুধে ঘুম পায় না। নন সিডেটিভ অ্যান্টি অ্যালার্জিক সিরাপে ঘুম পাবে না। ওই জন্যই তো বললাম, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে ওষুধ কিনে খাবেন না। আর চেষ্টা করুন গলাকে বিশ্রাম দিতে অন্তত দু’ তিন দিন।

প্র: জ্বর যাতে না হয়, তার জন্য কী করতে হবে?

উ: বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা জলে গলা ভেজাবেন না। বাইরের গরম এড়াতে সুতির জামা পড়ুন। ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করুন। বাইরের শরবত আর কাটা ফল এড়িয়ে চলুন। ডায়রিয়া হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। বাইরে থেকে এসে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নেবেন। রাতে এসিতে ঘুমোলে যদি দেখেন গলাটা ব্যথা ব্যথা করছে, তবে এসি-তে না থাকাই ভাল।

প্র: তা কী করে হবে? দিনে সাত-আট ঘণ্টা তো অফিসের এসি-তে বসে কাজ করতে হয়?

উ: একটানা এসি চললে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে এসি-তে সমস্যা হলে গলায় মাফলার জড়িয়ে রাখবেন। সাধারণত সমস্যা হয় তখনই, যখন এসি-তে কিছু ক্ষণ থাকার পর বাইরে বেরোলেন। তাপমাত্রার এই পার্থক্যটা অনেক সময় শরীর নিতে পারে না। তাতে চট করে ঠান্ডা লেগে যায়।

প্র: কাজের প্রয়োজনে বেরোতেই হয়। সে ক্ষেত্রে কী করব?

উ: ঠান্ডা যাতে না লাগে তার জন্য আগে থেকেই সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজন মতো মাফলার ব্যবহার করুন। বাইরে বেরোলে সরাসরি রোদটা লাগাবেন না। ছাতা রাখুন।

প্র: যাঁরা অফিসে বসার সুযোগ পান না, সারা দিন বাইরে রোদে ঘুরে কাজ করতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে?

উ: সে ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সরাসরি রোদ লাগানো চলবে না। সঙ্গে জল রাখুন। মাঝে মাঝেই গলা ভিজিয়ে নিন। পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন। অন্তর্বাস নিয়মিত বদলাতে হবে। নইলে ঘাম থেকে ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। যা অনেকেরই হয়ে থাকে।

প্র: এই বিচ্ছিরি জ্বর ছেড়ে গেলেও শরীর বেশ কয়েক দিন দুর্বল থাকে।

উ: সে তো থাকবেই। সম্ভব হলে দুটো দিন বিশ্রাম নিন। শরীর আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ভাল করে খাওয়াদাওয়াও করতে হবে।

প্র: মুখে স্বাদ থাকে না। কিছু খেতেও ইচ্ছে করে না।

উ: এক বারে অনেকটা খেতে হবে না। একটু একটু করে সারা দিনে বার বার খান। আস্তে আস্তে মুখের রুচিও ফিরে আসবে। তখন আর খেতে অসুবিধে হবে না। ভিটামিন-সি খেলেও মুখের স্বাদ ফিরে আসবে।

প্র: আর কিছু?

উ: জল এই জ্বরের জন্য খুব উপকারী। বেশি করে খান। শুধু জল খেতে না ইচ্ছে করলে গ্লুকোজ জল, লিকার চা খান।

খেয়াল রাখুন

• দু’ দিনের বেশি জ্বর থাকলেই চিকিৎসককে দেখিয়ে নিন।

• জ্বর হলে বার বার জল খান।

• সরাসরি রোদ যাতে না লাগে তার জন্য প্রয়োজন মতো ছাতা আর সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

• এসি-তে অসুবিধে হলে, তা এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে মাফলার ব্যবহার করুন।

• শরীরে ঘাম বসতে দেবেন না।

• জ্বর না কমলে তাপমাত্রা দেখে বাড়িতে একটা জ্বরের চার্ট বানিয়ে রাখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন