পি এস এ: তিন অক্ষরের ভয়ঙ্কর এক শব্দ

চল্লিশোর্ধ্ব? তা হলে এই মারণ রোগের কথা আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে। রুমি গঙ্গোপাধ্যায়কে বললেন ডা. অমিত ঘোষ।প্রস্টেট ক্যানসার পুষে রাখলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। তবে বলতে পারি এই ক্যানসারের চিকিৎসা আছে। তা সে প্রথম অবস্থায় ধরা পড়ুক বা দেরি করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৩০
Share:

প্র: পিএসএ পরীক্ষাটা আজকাল প্রায়ই করতে বলা হয়। কেন?
উ: এটা থেকে বোঝা যাবে প্রস্টেটের ক্যানসার হয়েছে কি না। পিএসএ-র মাত্রা ৪ অবধি হলে ঠিক আছে। তার বেশি হলে মুশকিল।

প্র: তার বেশি মানেই ক্যানসার?
উ: সব সময় নয়। প্রস্টেট বড় হয়ে গেলে বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও পিএসএ-র মাত্রা বেশি হতে পারে।

প্র: ধরুন এই দুটো সমস্যা নেই। অথচ পিএসএ বেশি। তখন?
উ: তখন সিরিয়াল পিএসএ করতে হবে। মানে প্রতি মাসে এক বার করে পরীক্ষা। যদি দেখা যায় পিএসএ খুব বেশি বাড়ছে না, তবে নিয়মিত পরীক্ষা করে যেতে হবে। প্রয়োজনে বায়োপসি করে দেখতে হতে পারে। বায়োপসিতে তেমন কিছু না পেলে এমআরআই-ও করতে হতে পারে। আর পিএসএ যদি অনেকখানি বেড়ে যায়, সেটা ক্যানসার।

প্র: শুনেছি অন্য সব ক্যানসারের তুলনায় প্রস্টেট ক্যানসার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ?
উ: না, এটা ঠিক নয়। প্রস্টেট ক্যানসার পুষে রাখলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। তবে বলতে পারি এই ক্যানসারের চিকিৎসা আছে। তা সে প্রথম অবস্থায় ধরা পড়ুক বা দেরি করে।

প্র: দেরি করে ধরা পড়লে তো ক্যানসার আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখনও চিকিৎসা করে ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে?
উ: হ্যাঁ। আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে তখন আর প্রস্টেট বাদ দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি আর প্রয়োজন মতো কেমোথেরাপি করে ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়।

প্র: হরমোন থেরাপি করলে কোনও সমস্যা হয় না?
উ: মেনোপজের পর মহিলাদের যেমন হট ফ্লাশ হয়, সে রকম হতে পারে। এর বেশি কিছু না।

প্র: তার পর স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাবে?
উ: হ্যাঁ। পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত অনেক রোগীই ভাল থাকেন।

প্র: আর একেবারে প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে কি ওষুধেই সারবে?
উ: প্রস্টেটের খুব ছোট্ট অংশে ক্যানসার হলে সেই জায়গাটুকু রেডিয়োথেরাপি করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বা পুরো প্রস্টেটটাই বাদ দিয়ে ক্যানসার মুক্ত করা হয়।

প্র: অপারেশনের পর কি স্বাভাবিক যৌনজীবন যাপন করা যাবে?
উ: প্রস্টেট অপারেশনের জন্য এখন রোবটিক সার্জারি করা হয়। এই আধুনিক পদ্ধতিতে অপারেশনের ঝুঁকি অনেকটা কমেছে। আর পরবর্তী কালে স্বাভাবিক যৌনজীবন যাপন করা যায়।

প্র: সে তো নিশ্চয়ই বিশাল খরচ?
উ: খরচ সাধারণ অপারেশন থেকে খানিকটা বেশি। তবে রোবটের আর্মসগুলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারায় অপারেশনটা ভাল হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাও সহজ হয়।

প্র: প্রস্টেট ক্যানসার যাতে না হয়, তার জন্য কী করবে?
উ: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। তা ছাড়া পরিবারে অন্য কারও হয়ে থাকলে প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য পঞ্চাশের পর থেকে বছরে এক বার পিএসএ পরীক্ষা করে নিতে হবে। আর ফ্যাটযুক্ত খাবার বেশি খেলেও প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। সুতরাং সে রকম খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।

প্র: কোনও সমস্যা না থাকলেও পিএসএ করিয়ে যেতে হবে?
উ: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থায় কোনও রকম উপসর্গ থাকে না। ক্যানসার অনেকখানি ছড়িয়ে পড়লে তবে নানা রকম উপসর্গ দেখা যায়। সেই সব সমস্যা শুরু হলে তবে টনক নড়ে। আগেভাগে ধরতে হলে নিয়মিত পিএসএ করানো খুব দরকার।

প্র: ক্যানসার অ্যাডভান্স স্টেজে গড়ালে কী ধরনের সমস্যা হয়?
উ: রোগী অ্যানিমিয়াতে ভুগবেন। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে। প্রস্টেট ক্যানসার সবার আগে হাড়ে ছড়ায়। তখন হাড়ে যন্ত্রণা শুরু হবে।

প্র: বাবা! হাড়ে ছড়িয়ে গেলে তো বিপদ!
উ: তারও চিকিৎসা আছে। হাড়ের সেই জায়গাটুকুতে রেডিওথেরাপি দিয়ে হাড়ের ব্যথা কমিয়ে দেওয়া হয়। এমনও হয়েছে, হাড়ে ছড়িয়ে সেই হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে পর্যন্ত গেছে। অথচ রোগী জানেন না তাঁর প্রস্টেট ক্যানসার। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যাপারটা ধরা পড়ল। সেই রোগীও চিকিৎসা করিয়ে বছর দশেক পর্যন্ত ভাল আছেন। এ রকম হামেশাই ঘটে।

প্র: আপনি বলছেন পঞ্চাশের পর থেকে পিএসএ করাতে। কিন্তু কমবয়সিদেরও তো প্রস্টেট ক্যানসার হয়। তবে তো আরও কম বয়স থেকে শুরু করা উচিত?
উ: হ্যাঁ, কম বয়সেও হয়। তবে সেটা খুবই কম। আর কোথাও তো দাঁড়ি টানতে হবে। যেহেতু ষাট বছরের পর সম্ভাবনা বাড়ে, তাই আমরা পঞ্চাশ থেকে শুরু করতে বলি।

প্র: প্রস্টেটের সমস্যা শুরু হয়েছে এমনিতে বোঝা যাবে কী করে?
উ: যদি দেখেন ঘন ঘন বাথরুম যেতে হচ্ছে, বাথরুমে গেলেও ঠিক মতো প্রস্রাব হচ্ছে না, বাধা পড়ছে, রাতেও বারবার উঠতে হচ্ছে, নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন না তবে বুঝতে হবে সমস্যাটা প্রস্টেটের। তবে ক্যানসার হয়েছে কি না জানার জন্য পিএসএ পরীক্ষা করাতেই হবে।

প্র: প্রস্টেট বড় হলে কী করবে?
উ: ওষুধ দিয়ে প্রস্টেটের আয়তন কমিয়ে দেওয়া যায়। প্রয়োজনে মাইক্রোসার্জারিও করা হয়।

প্র: শুনেছি অত্যধিক যৌনজীবন যাপন করলে বা ভ্যাসেকটমি করালে প্রস্টেটের ক্যানসার হয়?
উ: না। এটা একেবারেই ভুল ধারণা।

Advertisement

প্রস্টেট ক্যানসার আটকাতে

Advertisement

• রেড মিট ও দুধের তৈরি খাবার কম খান, সব রকমের মাছ বেশি খেতে হবে।
• অলিভ অয়েলে রান্না করা টম্যাটো খান।
• গ্রিন টি, ফল ও শাকসব্জি উপকারি।
• ভিটামিন-‘ই’, ও ‘এ’ এবং সয়াবিন প্রস্টেট ক্যানসার রুখতে সাহায্য করে।
• নিয়ম করে রোজ একটা আপেল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
• সূর্যালোক প্রস্টেট ক্যানসার আটকাতে সাহায্য করে।
• কিছু ওষুধ আছে যা নিয়মিত খেলে প্রস্টেট ক্যানসারে সম্ভাবনা কমে।
• হাই ক্যালোরি ও হাই ফ্যাট যুক্ত খাবার প্রস্টেট ক্যানসারে ঝুঁকি বাড়ায়।

যোগাযোগ: ৯৯০৩৭৭০০০৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন