রোদ্দুরে বেরোলে দু’ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন লাগাতেই হবে

ব্যাগে স্প্রে বোতলে টোনার ক্যারি করুন। ট্যালকম পাউডার ভুলেও ব্যবহার করবেন না। গরমে চটকদার থাকার পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা। শুনলেন অদিতি ভাদুড়ি।ব্যাগে স্প্রে বোতলে টোনার ক্যারি করুন। ট্যালকম পাউডার ভুলেও ব্যবহার করবেন না। গরমে চটকদার থাকার পরামর্শ দিলেন রূপবিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা। শুনলেন অদিতি ভাদুড়ি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০০:০০
Share:

পত্রিকা: অনেকেই তো গরমে নুডল স্ট্র্যাপড্ ড্রেস, স্লিভলেস বা শর্ট হাতা পরছেন। সানট্যান এড়াবেন কী করে?

Advertisement

শর্মিলা সিংহ ফ্লোরা: বাইরে যাঁরা বেরোচ্ছেন, তাঁরা পুরোপুরি ঢাকা পোশাক পরার চেষ্টা করুন। পারলে মাথা-মুখও ঢেকে রাখুন সুতির ওড়না দিয়ে। কলকাতার গরমে এখন লু বইছে। আর যাঁরা শুনবেন না, তাঁরা ট্যানড্ তো হবেনই। সে ক্ষেত্রে বাড়ি ফেরার পর ট্যান ক্লিয়ার স্ক্রাব নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

Advertisement

পত্রিকা: আর যাঁরা লো-কাটের ব্লাউজ পরছেন? তাঁদেরও তো পিঠের যত্ন নেওয়াটা খুব দরকার... কী করবেন তাঁরা?

শর্মিলা: ট্যান ক্লিয়ার স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। টোনার লাগিয়ে অ্যান্টি ব্লেমিশেশ ক্রিম লাগাতে হবেই। গুঁড়ো দুধের সঙ্গে পিচ, তরমুজ বা কাঁচা পেঁপের মিক্স যদি মাঝে মধ্যে লাগানো যায়, তা হলে পিঠ মসৃণ আর চকচকে তো থাকবেই। কালো দাগছোপ পড়ার চিন্তাটাও আর থাকবে না।

পত্রিকা: সমানে এসি-তে ঢুকতে-বেরোতে গিয়ে মুখের বা সারা শরীরের ত্বক অসম্ভব রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কী করা যায় এই সমস্যা এড়াতে?

শর্মিলা: নন-অয়েলি ক্রিম লাগানোটা খুব দরকার। আর বডি ময়শ্চারাইজারও লাগাতে হবে বারেবারে। পারলে ব্যাগে ক্যারি করুন। অতিরিক্ত ক্রিম, ভিজে টিস্যু দিয়ে উঠিয়ে দিতে হবে।

পত্রিকা: অল্পবয়সিরা অনেকেই ছাতা ব্যবহার করেন না। ট্যান বা র্যাশ তো সে ক্ষেত্রে অবধারিত...

শর্মিলা: দেখুন, আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে তো লাভ নেই। ছাতা ব্যবহার করতেই হবে। ছেলে হোক বা মেয়ে। না করলে তো হিট স্ট্রোকও হয়ে যেতে পারে। স্কিন র্যাশ তো সেখানে খুব সামান্য এক সমস্যা।

পত্রিকা: বছরের অন্যান্য সময় ত্বক ভাল থাকলেও এই সময়টায় অনেকেই অভিযোগ করেন ত্বকে র্যাশ নিয়ে। বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বক যাঁদের। কী করবেন তাঁরা?

শর্মিলা: প্রতিদিন মুখ ধুয়ে টোনার লাগিয়ে অ্যান্টি পিম্পল বা অ্যান্টি ব্লেমিশেশ ক্রিম লাগাতে হবে। বাজারচলতি স্কিন শাওয়ার লাগিয়ে কিন্তু সে রকম লাভ হবে না। পারলে গাজর, টমেটো, গুঁড়ো দুধ, চালগুঁড়ো, দই দিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগান। সেনসিটিভ স্কিনে দারুণ কাজ করে এই প্যাক।

পত্রিকা: বাজারে স্মাজ ফ্রি কাজল বলে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো তো গরমে ধেবড়ে যাচ্ছে। যাঁরা রোজ কাজল পরেন, কী করবেন তাঁরা?

শর্মিলা: স্মাজ ফ্রি বলে কিছু হয় না। এই কারণে বাড়ি ফেরার পর আই মেক আপ তোলাটা ভীষণ জরুরি। পরিষ্কার করে আন্ডার আই ক্রিম লাগিয়ে রাখতে হবে। চাইলে আমন্ড অয়েল বা অলিভ অয়েল দিয়েও মাসাজ করতে পারেন।

পত্রিকা: ট্যালকম পাউডার কি এত গরমে ব্যবহার করা যায়?

শর্মিলা: একেবারেই না। স্কিন পোরসগুলো বন্ধ করে দেয় ট্যালকম পাউডার। স্কিনের স্বাস্থ্যের পক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

পত্রিকা: সব সময় তো পা ঢাকা জুতো পরা যায় না। ফ্যাশনেবল স্ট্র্যাপড চটি তো অনেকেই পরেন। বিশেষ করে কলেজপড়ুয়া মেয়েরা। পা পুড়ে তখন দফারফা...

শর্মিলা: উষ্ণ গরম জলে শ্যাম্পু দিয়ে পা ডুবিয়ে পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে নিতে হবে। তার পর বডি ময়শ্চারাইজার লাগালে পা ভাল থাকবে। তবে প্রায়ই চেষ্টা করতে হবে এটা করার। একান্তই না পারলে মাসে পার্লারে একটা পেডিকিওর মাস্ট।

পত্রিকা: গলায়, পিঠে তো কালো ছোপ পড়ে যাচ্ছে গরমে। কী করা যায়?

শর্মিলা: অ্যান্টি ট্যান স্ক্রাবটা ব্যবহার করতেই হবে। লেবুর রস আর চিনি মিশিয়ে ওই অংশগুলোয় লাগালেও কিন্তু খুব ভাল কাজ হয়।

পত্রিকা: যাঁরা বাইরে ঘুরে রোদে পুড়ে কাজ করছেন, তাঁরা কী করবেন?

শর্মিলা: ওই যে আগেই বলেছি, গা-ঢাকা পোশাক পরুন। এক বার সানস্ক্রিন লাগালে কিন্তু হবে না। বাইরে ঘুরলে দু’ঘণ্টা অন্তর অন্তর মুখ ধুয়ে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। চেষ্টা করুন আউটডোর অ্যাসাইনমেন্টটা দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটের মধ্যে না রাখতে।

পত্রিকা: যাঁরা রোজ মেক আপ করেন, তাঁদের কি কিছু মেনে চলতে হবে? এত গরমে মেক আপ গলে যেতে কতক্ষণ!

শর্মিলা: তাঁদের বলব ওয়াটারবেসড মেক আপ ব্যবহার করুন। আর দামি কমপ্যাক্ট ব্যবহার করুন। বিদেশি ট্যাগ লাগানো লোকাল জিনিস নয়, আসল বিদেশি কমপ্যাক্ট। সকালে বেরোনোর আগে টোনার লাগিয়ে প্রথমে সানস্ক্রিন লাগাবেন। তার পর মেক আপ অ্যাপ্লাই করবেন।

পত্রিকা: চুল তো ঘামে ভিজে আঠা হয়ে থাকছে। চুলও পড়ছে অনেক...

শর্মিলা: প্রত্যেক দিন শ্যাম্পু করুন। তোয়ালে দিয়ে চুল শুকনো করে মুছে নিয়ে সেরাম লাগিয়ে নিন। ফাংগাল ইনফেকশন, খুশকি বা চুল পড়া কিছু নিয়েই মাথা ঘামাতে হবে না তা হলে। ফ্রিজি বা কোঁকড়ানো চুল যাঁদের, তাঁদের তো এটা মেনে চলতেই হবে। সপ্তাহে একবার দই, ডিম মিশিয়ে চুলে প্রোটিন লাগালেও চুল পড়া একেবারে কমে যাবে।

পত্রিকা: ঘামে ভেজা চুল নিয়ে তো আর পার্টিতে যাওয়া যাবে না। হয়তো শ্যাম্পু করার সুযোগও নেই। কী করা যায় তখন?

শর্মিলা: চুলটা আগে ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। ব্লো-ড্রায়ারে না শুকোনোই ভাল। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের অ্যান্টি ফ্রিজ পাউডার ডাস্ট শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সেটা লাগালে তখনকার মতো প্রবলেম সল্ভ।

পত্রিকা: এত গরম বাইরে। এ দিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টিও হচ্ছে। প্যাচপেচে বিচ্ছিরি এই আবহাওয়ায় ত্বকেরও তো দফারফা...এটা এড়ানোর কোনও উপায় আছে?

শর্মিলা: অফিসেই থাকুন বা বাইরে, টোনার লাগালেই কিন্তু সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে। দু’চামচ টোনার নিলে এক চামচ জল তার সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হবে। স্প্রে বোতলেও ক্যারি করতে পারেন ব্যবহারের সুবিধের জন্য। মুখে, গলায়, হাতে লাগিয়ে নিন টোনার। আর একটা জিনিসও খুব উপকারে দেয়। স্নানের জলে একটুকরো ফটকিরি মিশিয়ে নিলে কিন্তু গায়ে প্যাচপ্যাচে ভাবটা আসে না।

পত্রিকা: এ তো গেল ত্বকচর্চা। গরমে ত্বক ভাল রাখাতে খাওয়াদাওয়ারও তো একটা ব্যাপার আছে...

শর্মিলা: শরীরের তাপমাত্রা কম রাখাটা খুব প্রয়োজন এই সময়। লস্যি, ডাবের জল, মরসুমি ফল, সব্জি প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এখনকার গরমে ত্বকের ভেজা ভাবটাই তো হারিয়ে যাচ্ছে। লিক্যুইড ডায়েটটা তাই এই সময় খুব প্রয়োজন! শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ঘাম কম হবে। আর স্কিন তো ভাল থাকবেই।

পত্রিকা: যাদের বয়স ৪০ প্লাস তাঁদের তো ত্বকের জেল্লা উঠতি বয়সের তরুণীদের চেয়ে কমতে আরম্ভ করে। গ্রীষ্মে নিয়মিত ত্বকচর্চা করতে কী করবেন তাঁরা?

শর্মিলা: প্রত্যেক দিন উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। রাতে শোয়ার আগে অ্যান্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার করাটাও মাস্ট। প্রচণ্ড গরমে ত্বক আর্দ্রতা হারানোর পাশাপাশি খুব কুঁচকেও যাচ্ছে। চল্লিশের কোঠায় যাঁরা, তাঁদের সেটা আরও বেশিই হচ্ছে। কাজেই প্রতিদিন ভাল কোনও ক্লিনজার দিয়ে ক্লিনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিংয়ের রুটিন যদি মেনে চলা যায়, তা হলে স্কিন একেবারে ইয়াং থাকবে।মাসে একটা ফেসিয়াল করিয়ে নেওয়াটাও কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। মাসাজের ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন হয় যা ত্বক তারুণ্যে ভরপুর রাখার জন্য খুব প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন