সরোদ যখন গান গায়

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল চার দিনের ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন। শুনলেন বিশেষ প্রতিনিধি।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল চার দিনের ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন। শুনলেন বিশেষ প্রতিনিধি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share:

ডোভার লেন সঙ্গীত উৎসবের শেষ রাতের শেষ শিল্পী উস্তাদ আমজাদ আলি খানকে গেয়ে শোনাতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, তাঁর পিতাগুরু উস্তাদ হাফিজ আলি খাঁর শিক্ষা হল, সরোদই যেন গান গেয়ে ওঠে। সত্যিই সেদিন আমজাদ আলি খাঁর সরোদ গান গেয়েছিল। শুধু গান গায়নি, সুরে কথা বলেছিল। বাজনার কোন স্তরে পৌঁছলে টেকনিক ও ব্যাকরণ নগণ্য হয়ে যায় তাই দেখিয়ে দিল তাঁর সরোদ! উস্তাদজির আঙুল যখনই যন্ত্র স্পর্শ করছে, তখনই অবর্ণনীয় সুরের মূর্ছনায় শ্রোতারা প্লাবিত হয়েছেন। দরবারির বিরহবেদনায় রাত্রি তখন বিধুর। ভোরবেলায় স্বরচিত সোগাহভৈরবে সুখ ও দুঃখ একাসনে। সাবির খান ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের তবলা সঙ্গত যথাযথ। বিশেষ করে সাড়ে ছ’মাত্রার ‘দুর্গা’য় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতা সংবেদনশীল। নিঃসন্দেহে উস্তাদ আমজাদ আলি খাঁ এখন ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের জগতে প্রথম ও প্রধান শিল্পী।

Advertisement

এবারে ডোভার লেনে আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শেষ দিন ছাড়া অন্য তিন দিন হলে শ্রোতাদের উপস্থিতি আশানুরূপ হয়নি। স্পষ্টতই প্রায় সাড়ে তিন বছর পর উস্তাদজির বাজনাই ছিল মূল আকর্ষণ। শ্রোতাদের মধ্যে শিল্পীদের নির্বাচন নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। শিল্পীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্নই কি অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের অনুপস্থিতির কারণ?

শ্রীমতী অশ্বিনী ভিড়ে দেশপণ্ডের গান, বিশেষ করে তাঁর কণ্ঠে তিলককামোদের পরিবেশনা খুবই উচ্চমানের লেগেছে। কিরানা ঘরানার প্রবীণ শিল্পী শ্রীমতী প্রভা আত্রে ক্লান্ত কণ্ঠ নিয়েও যোগকোষে তাঁর সঠিক তালিমের নিদর্শন দেখিয়েছেন। তবে বম্বে জয়শ্রী রামনাথ, শোভা মুদগল ও সারথি চট্টোপাধ্যায়ের গান শ্রোতাদের হতাশ করে।

Advertisement

নিঃসন্দেহে কণ্ঠসঙ্গীতে এ বছরের শ্রেষ্ঠ পরিবেশনা এম বেঙ্কটেশ কুমারের। তাঁর গাওয়া ইমন, দুর্গা ও সোহিনী শ্রোতাদের মন কেড়েছে। ইমনের বহুশ্রুত ‘এরি আলি পিয়া বিনা’কে তিনি আকর্ষণীয় এক উচ্চতায় নিয়ে যান। প্রবীণ শিল্পী অরুণ ভাদুড়ি তাঁর গানে সনিষ্ঠ থাকলেও তাঁর সঙ্গীত বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি। অনুষ্ঠানে পণ্ডিত যশরাজ এবং ধ্রুপদশিল্পী গুণ্ডেচাদের গানে শ্রোতারা বিভ্রান্ত। তাঁদের পরিবেশনার কায়দাকৌশল অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে। পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীর তবলালহরায় পুরনো লখনউ ঘরানার বন্দিশ আসর মাত করেছিল। সুজাত খানের হাত মিষ্টি কিন্তু তাঁর বিলাসখানির রাগরূপে প্রাণের অভাব ছিল। সঞ্জীব শঙ্কর ও অশ্বিনী শঙ্করের সানাই, ভজন সোপোরির সন্তুর ও আবির হোসেনের সরোদ পরিবেশনায় শ্রোতাদের মধ্যে কোনও হেলদোল হয়নি। নিত্যানন্দ হলদিপুরের বাঁশিতে হেমন্ত ও কলা রামনাথের বেহালায় গোরখকল্যাণ মনোরম হলেও এস সুব্রমনিয়ম, শুভেন্দু রাও ও সসকিয়া রাওয়ের ফিউশন নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

এই অনুষ্ঠানের আর একটি প্রধান প্রাপ্তি আমান আলি খানের বাজনায় স্বকীয়তার উদ্ভাস। মালকোষের আলাপে ধ্রুপদী তালিমের পরিচয় ছিল। ছিল তিন সপ্তক তানের বাহার। কিন্তু ভোররাতে মিয়া কি টোড়ির পরিবেশনায় তাঁর সরোদও গান গেয়েছিল। শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলিষ্ঠ তবলাসঙ্গত পরিবেশনাটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন