কুবের উবাচ

অভিনন্দন। সদ্য মেয়ের বাবা হওয়ার জন্য। যার উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখন থেকেই নানা পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন রবি ও তাঁর স্ত্রী। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে ভবিষ্যতে ব্যবসা শুরু করা, গাড়ি কেনার ইচ্ছাও রয়েছে।

Advertisement

শৈবাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

রবি (৩৩) • স্ত্রী (৩২) • মেয়ে (১ মাস) • বাবা (৬০) • মা (৫০)

Advertisement

বেসরকারি সংস্থার কর্মী • চাকরি সূত্রে থাকেন জেলা শহরে • কলকাতায় নিজেদের বাড়ি
• চান ব্যবসা শুরু করতে • সন্তানের উচ্চশিক্ষার তহবিল গড়তে আগ্রহী

Advertisement

অভিনন্দন।

সদ্য মেয়ের বাবা হওয়ার জন্য। যার উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখন থেকেই নানা পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন রবি ও তাঁর স্ত্রী। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে ভবিষ্যতে ব্যবসা শুরু করা, গাড়ি কেনার ইচ্ছাও রয়েছে। সংসার চালিয়ে, সঞ্চয় করে এই সব ইচ্ছাপূরণ হয় কি না, তা আজ দেখব।

বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রবি বেতন খুব একটা খারাপ পান না। সব খরচ ও লগ্নির পরেও মাস গেলে হাতে ১১ হাজারেরও বেশি টাকা থাকে। অথচ তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে, জীবনবিমা এবং পিপিএফ বাদে অন্যত্র লগ্নি করেন না তিনি। আগামী দিনে নির্মাণ ব্যবসা শুরুর কথা ভাবছেন। কিন্তু মনে রাখবেন ব্যবসা করা বেশ ঝুঁকির। ফলে যত দিন তা না-দাঁড়াচ্ছে, তত দিনের খরচের বন্দোবস্ত আগে থেকেই করে রাখতে হবে।

জীবনবিমা

রবির পাঁচটি এনডাওমেন্ট পলিসির বিমামূল্য ১৫ লক্ষ টাকা। সবগুলিই শেষ হবে ২০২৩ সালে। তিনি চাইছেন কয়েকটি বন্ধ করে দিয়ে অন্য কোনও প্রকল্পে লগ্নি করতে। আমি বলব তা একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। এ জন্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। যেহেতু তাঁর বিমার কভারেজ এমনিতেই কম, তার উপর প্রকল্প বন্ধ করলে তা আরও কমে যাবে, তাই প্রথমেই কমপক্ষে ৫০ লক্ষের টার্ম পলিসি করে রাখুন। কারণ রবির কিছু হলে তাঁর পরিবার অথৈ জলে পড়বে। বছরে টার্ম পলিসির প্রিমিয়াম পড়বে প্রায় ১১,৫০০ টাকা।

স্বাস্থ্যবিমা

টার্ম পলিসি করার পর রবির দ্বিতীয় কাজ ভাল অঙ্কের ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা কেনা। এতে মেয়ের নামও যেন অবশ্যই থাকে। আপাতত ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করুন। যার প্রিমিয়াম পড়বে বছরে প্রায় ১১ হাজার টাকা। ধাপে ধাপে যার কভারেজ বাড়াতে থাকুন।

মেয়ের উচ্চশিক্ষা

মেয়ের উচ্চশিক্ষা শুরু হতে এখনও ১৮ বছর সময় রয়েছে। এখন যদি উচ্চশিক্ষার খরচ ২০ লক্ষ টাকা ধরি, তা হলে ২০৩৩ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে প্রায় ৫৭ লক্ষে (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। এ জন্য মাসে ৫,২০০ টাকার এসআইপি করুন। ১৫% রিটার্ন ধরে প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকা জমাতে পারবেন।

মেয়ের জন্য এখন থেকেই সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে লগ্নি করুন। ১০ বছর হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। সুদও বেশ আকর্ষণীয়। বয়স ১৮ বছর হলে জমা টাকার ৫০% পর্যন্ত তোলা যায়। আর ২১ বছরে গিয়ে তা বন্ধ করা যায়। পাওয়া যায় করছাড়ও।

গাড়ি কেনা

গাড়ি কিনতে এখন থেকেই মাসে ৪,০০০ টাকার রেকারিং চালু করুন। ২-৩ বছর পরে এই খাতে যা জমবে, তা দিয়ে গাড়ির ডাউনপেমেন্ট করতে পারবেন। বাকি টাকা ঋণ নিতে হবে।

অবসরের তহবিল

চাকরিই করুন বা ব্যবসা। বেশি বয়সে পৌঁছে সংসার চালানো, সামাজিকতা রক্ষা ও চিকিৎসা-সহ অন্যান্য খরচের জন্য তহবিল রবিকে গড়তে হবে এখন থেকেই। তাঁর হাতে এখনই হয়তো বাড়তি নগদ থাকবে না। কিন্তু অবশ্যই পরিকল্পনা করে রাখুন। এ জন্য—

মাস গেলে হাতে থাকা টাকা ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে এসআইপি পদ্ধতিতে রাখুন। মেয়ের উচ্চশিক্ষা শেষের পরে সেই টাকাও এসআইপি পদ্ধতিতে জমিয়ে যেতে হবে।

গাড়ির মাসিক কিস্তি শেষ হলে সেই টাকাও রাখতে হবে কোনও ডেট বা ইকুইটি ফান্ডে।

পিপিএফে লগ্নি চালিয়ে যান।

সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার অভ্যাস বজায় রাখুন। কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা জমলে, তা স্থায়ী আমানতে জমা করুন। এ ভাবে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখলে করছাড়ের সুবিধা পাবেন।

কিনতে পারেন এনএসসি।

পিএফের টাকা তো রয়েছেই।

ব্যবসা শুরু

আবাসন তৈরির ব্যবসা শুরুর জন্য তিনি পৈতৃক সম্পত্তি ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখে ৩ কোটি টাকা জোগাড়ের কথা ভাবছেন। সাধারণত সম্পত্তির মূল্যের ৬০% পর্যন্ত ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ সম্পদের পরিমাণ ১.১০ কোটি টাকা হলে, তা থেকে ৬৬ লক্ষ ঋণ পেতে পারেন রবি। ফলে শুধু মাত্র এ ভাবে ব্যবসার টাকা জোগাড় তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই ঋণের কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধা

দেশে বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা, বিয়ে, চিকিৎসা, ব্যবসা শুরু করা ইত্যাদি নানা কাজে এই ঋণ নেওয়া যায়।

নিজের সম্পত্তি রয়েছে, সেটি বন্ধক রেখে টাকা ধার নিচ্ছেন। ফলে ব্যাঙ্কও ঋণ ফেরতের বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকে। আর ঋণগ্রহীতাকে সম্পত্তি বিক্রি করতে হয় না।

যে-বাড়ি বন্ধক রাখা হচ্ছে, সেখানেই বসবাসের সুযোগ থাকছে।

সাধারণত পার্সোনাল লোনের তুলনায় এ ভাবে সম্পত্তি বন্ধক রেখে ধার নিলে সুদের হার কম হয়।

এ ভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বছর মেয়াদের ঋণ পাওয়া যায়।

অসুবিধা

ঋণ শোধ করতে না-পারলে ব্যাঙ্ক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। অর্থাৎ রবির ব্যবসা ভাল না-চললে এই সম্পত্তির পুরোটাই হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা। তখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, তা এখন থেকেই ভেবে রাখতে হবে।

পরামর্শ

ঋণ পেলে নিয়মিত মাসিক কিস্তিও দিতে হবে। সংসার খরচ ও লগ্নি চালানোর পরে তা মেটানো সম্ভব হবে কি না, তা ভেবে দেখুন এখনই।

ব্যবসা না-চললে বিকল্প আয়ের পথ কী হবে, তা-ও চিন্তা-ভাবনা করে রাখতে হবে রবিকে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন