আপনাদের প্রশ্ন

এসআইপি পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর-পর (সাধারণত প্রতি মাসে) নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে যেতে হয় নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ ধরে। সে ক্ষেত্রে নিজের সাধ্য অনুযায়ী কিস্তির টাকার পরিমাণ স্থির করা যায়। লগ্নিকারীদের টাকায় গড়ে ওঠা ফান্ডের তহবিল বিনিয়োগের বিভিন্ন জায়গায় খাটিয়ে তার পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করেন ফান্ড ম্যানেজাররা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১৪
Share:

• আমি এসআইপি করতে চাই। আমার প্রশ্ন হল—

Advertisement

১) এসআইপি কী?

২) কোন ফান্ডে লগ্নি করব?

Advertisement

ঝুঁকি কম, অথচ রিটার্ন বেশি— এই শর্তে কোন ধরনের ফান্ডে টাকা ঢাললে সবচেয়ে ভাল হবে?

সুকান্ত কর্মকার

আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলি, এসআইপি হল মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করার একটি বিশেষ পদ্ধতি। এতে একলপ্তে থোক টাকা পকেট থেকে বার করতে হয় না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প অল্প করে টাকা জমা দিয়ে ফান্ডের ইউনিট কিনতে পারেন লগ্নিকারী। আর এ ভাবে ধীরে ধীরে বড় মাপের তহবিল তৈরি করা যায়।

এসআইপি পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর-পর (সাধারণত প্রতি মাসে) নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে যেতে হয় নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ ধরে। সে ক্ষেত্রে নিজের সাধ্য অনুযায়ী কিস্তির টাকার পরিমাণ স্থির করা যায়। লগ্নিকারীদের টাকায় গড়ে ওঠা ফান্ডের তহবিল বিনিয়োগের বিভিন্ন জায়গায় খাটিয়ে তার পরিমাণ বাড়াতে চেষ্টা করেন ফান্ড ম্যানেজাররা। দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করলে এসআইপি-তে ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আসব দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্নে।

তিন রকমের ফান্ড আছে। ইকুইটি ফান্ড, ডেট ফান্ড ও মিক্সড বা মিশ্র ফান্ড। তিনটিতে ঝুঁকি ও রিটার্নের সম্ভাবনা আলাদা আলাদা। যেমন—

ইকুইটি ফান্ড: তহবিল খাটে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে। শেয়ার বাজার লগ্নির জায়গা হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে এই ফান্ডেও ঝুঁকি অনেক বেশি। শেয়ারের দাম ওঠা বা পড়ার হাত ধরেই ইকুইটি ফান্ডের তহবিল বাড়া বা কমার পথ তৈরি হয়। এবং সেই অনুযায়ী নির্ধারিত হয় লগ্নিকারীর রিটার্ন বেশি বা কম পাওয়ার সম্ভাবনা। তবে ইকুইটি ফান্ডে ঝুঁকি বেশি হলেও সম্ভাব্য রিটার্নের নিরিখে তা অন্যান্য লগ্নির থেকে অনেকখানি এগিয়ে।

বিভিন্ন ধরনের ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ড বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এতে ফান্ডের তহবিল দিয়ে বিভিন্ন শিল্পের ভাল ভাল সংস্থার শেয়ার কেনা হয়। ফলে টাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্থায় খাটার ফলে ঝুঁকিও তুলনায় কম থাকে। এবং রিটার্ন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ডেট ফান্ড: তহবিল খাটে বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে (সিকিউরিটিজ)। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার ঋণের সূত্র এই ঋণপত্র। নির্দিষ্ট সুদের হারে বাজার থেকে এর মাধ্যমে ঋণ তোলে সরকার বা সংস্থাগুলি। এই সিকিউরিটির আওতায় পড়ে কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, সরকারি ঋণপত্র (গিল্টস) ইত্যাদি। সরকার ঋণ নিলে সেই টাকা ফেরত না-দেওয়ার বা সুদ না-মেটানোর সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। আবার আর্থিক ভাবে মজবুত সংস্থার ক্ষেত্রেও এই নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ডেট ফান্ডের লগ্নিতে ঝুঁকি তুলনায় অনেক কম। অন্য দিকে, রিটার্ন মোটামুটি ভাল হতে পারে। যদিও কখনওই ইকুইটি ফান্ডের মতো তাক লাগানো নয়। তবে ডেট ফান্ডে যে ঝুঁকি একেবারে থাকে না, তা নয়। যার অন্যতম দু’টি হল—

ক) সুদের হার সংক্রান্ত ঝুঁকি: বাজারে সুদ বাড়লে বা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ফান্ডের লগ্নি করা সিকিউরিটির দাম কমে যায়। এতে ফান্ড লোকসান করতে পারে।

খ) ঋণ সংক্রান্ত ঝুঁকি: ফান্ড যে- সংস্থার সিকিউরিটি কিনল, সেই সংস্থা আচমকা আর্থিক সঙ্কটে পড়লেও লগ্নির ঝুঁকি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে হতে পারে সংস্থাটি ওই সিকিউরিটিতে যে-সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটা দিল না। কিংবা সিকিউরিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে যে-মূলধন ফেরত পাওয়ার কথা ছিল, তা মিলল না। আবার কোনও কারণে সংস্থাটির ক্রেডিট রেটিং কমে গেলেও ফান্ড বিপাকে পড়তে পারে। ক্রেডিট রেটিং হল, কোনও সংস্থাকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন। অর্থাত্‌ রেটিং যত ভাল, ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। বিভিন্ন রেটিং সংস্থা এই মূল্যায়নের কাজ করে। সিকিউরিটি বিক্রেতা সংস্থার ক্রেডিট রেটিং কমলে আপনার ফান্ড যে-সিকিউরিটিতে টাকা ঢেলেছে, তার চাহিদা কমে যেতে পারে। ফলে পড়বে দর। যা ফান্ডটির লোকসানের কারণ হতে পারে।

মিক্সড বা মিশ্র ফান্ড: ঝুঁকি ও রিটার্নের সামঞ্জস্য রাখতে এই ফান্ডেও লগ্নি করা যায়। এতে তহবিলের টাকা কিছুটা শেয়ারে ও কিছুটা ঋণপত্রে লগ্নি করেন ফান্ড ম্যানেজার। কোন ক্ষেত্রে কত টাকা খাটবে, সেটা বিভিন্ন ফান্ডে আলাদা আলাদা হতে পারে। যে যার ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা অনুযায়ী তার মধ্যে থেকে বেছে নেন।

অতএব, এখানে বিষয়টি কম ঝুঁকিতে বেশি রিটার্ন পাওয়া নিয়ে নয়। কতটা কম ঝুঁকিতে আপনি কতটা বেশি রিটার্ন চাইছেন, সেটাই প্রধান কথা। যেমন, ইকুইটি ফান্ডে খুব বেশি ঝুঁকি থাকলেও ভাল ফান্ড আপনাকে রাজা করে দিতে পারে। আবার এই ইকুইটি ফান্ডেই দীর্ঘ মেয়াদে এসআইপি করলে বাজারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়। পাশাপাশি অনেক দিন ধরে একটু একটু করে টাকা ঢেলে বড় সঞ্চয়ও তৈরি করা সম্ভব হয়। ইকুইটি ফান্ডে ঝুঁকি কম রাখতে লোকে ডাইভার্সিফায়েড ফান্ড বাছার কথা বলেন। কারণ, একসঙ্গে সব শিল্পে দুর্দিন আসে না। একটি শিল্পের সংস্থা হয়তো ভাল রিটার্ন দিতে পারল না, কিন্তু অন্যটি তা পুষিয়ে দিল।

কিন্তু রিটার্ন যত ভাল হওয়ারই সম্ভাবনা থাক, আপনি যদি শেয়ার বাজারের ঝুঁকি নিতে আদৌ তৈরি না-থাকেন তা হলে ডেট ফান্ড আছে। কম ঝুঁকিতে রিটার্ন মন্দ হয় না। আবার কোনও ভাল মিক্সড ফান্ড বাছলে ইকুইটির তুলনায় কম ঝুঁকি ও ডেট-এর তুলনায় বেশি রিটার্ন, দুইয়েরই সুবিধা নেওয়া যায়। এ বার বিচার করে দেখুন কোন ধরনের ফান্ডে আপনার শর্ত বজায় রেখে লগ্নি করা যাচ্ছে।

পরামর্শদাতা মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন দে

• টার্ম পলিসি কী? বিশদে জানালে ভাল হয়।

রজত কুমার দাস, সিকিম

টার্ম পলিসি সেই সমস্ত মানুষের জন্য আদর্শ, যাঁরা শুধুমাত্র ঝুঁকির রক্ষাকবচ হিসেবেই জীবনবিমায় লগ্নি করার পক্ষপাতী। এই শ্রেণির মানুষেরা জীবনবিমাকে সঞ্চয় হিসেবে কখনওই দেখেন না। কারণ, টার্ম পলিসিতে গ্রাহক মারা গেলে একমাত্র তবেই এই প্রকল্প থেকে টাকা পাওয়া যায়। নইলে মেয়াদ শেষে এক পয়সাও নয়। আমাদের দেশে এ ধরনের প্রকল্প এখনও তেমন জনপ্রিয় নয়। তবে টার্ম পলিসি করলে তুলনায় অনেক কম প্রিমিয়ামে মোটা অঙ্কের কভারেজ মেলে। পশ্চিমী দুনিয়ায় জীবনবিমা বলতে কিন্তু লোকে সাধারণত টার্ম পলিসিই বোঝে।

এ ক্ষেত্রেও কত টাকার কভারেজ চান, তা প্রথমে ঠিক করতে হবে। আর দেখে নিতে হবে তার প্রিমিয়াম দেওয়া সম্ভব কি না। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, একে এনডাওমেন্ট বা ইউলিপ প্রকল্পের মতো করে না-দেখে বরং অনেকটা স্বাস্থ্যবিমার মতো ভাবতে।

এর সব থেকে বড় সুবিধা কম টাকায় অনেক বেশি অঙ্কের কভারেজ।

অনেক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞই এই গোত্রের জীবনবিমা করার পক্ষপাতী। তাঁদের মতে, বিমায় মোটা টাকা আটকে রাখা বোকামি। বরং কম টাকায় টার্ম প্রকল্প কিনে ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা করে বাকিটা মিউচুয়াল ফান্ড কিংবা অন্য কোনও চড়া রিটার্নের প্রকল্পে লগ্নি করা ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন