কুবের উবাচ

শৈবাল বিশ্বাসআজকের যুগে নানা সময়েই আমরা খবরে দেখি, সন্তান নিজের বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। যার জল আদালত পর্যন্তও গড়ায় কিছু ক্ষেত্রে। এই অবস্থায় যখন এমন কোনও প্রোফাইল আমার সামনে আসে, যেখানে সন্তান বাবা-মায়ের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা, বিশেষ করে তাঁদের জন্য সঞ্চয়ের কথা ভাবছেন, তখন সত্যিই ভাল লাগে। ঈশিতার প্রোফাইল সে রকমই একটি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৬
Share:

Advertisement

ঈশিতা (২৭) • বাবা (৬২) • মা (৫৩)

সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক • থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে • নিজেদের বাড়ি • লক্ষ্য পরিবারের জন্য সঞ্চয় • ফ্ল্যাট কিনতে চান

Advertisement

আজকের যুগে নানা সময়েই আমরা খবরে দেখি, সন্তান নিজের বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। যার জল আদালত পর্যন্তও গড়ায় কিছু ক্ষেত্রে। এই অবস্থায় যখন এমন কোনও প্রোফাইল আমার সামনে আসে, যেখানে সন্তান বাবা-মায়ের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা, বিশেষ করে তাঁদের জন্য সঞ্চয়ের কথা ভাবছেন, তখন সত্যিই ভাল লাগে। ঈশিতার প্রোফাইল সে রকমই একটি।

মাত্র মাস ছ’য়েক হয়েছে সরকারি বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। নিজের বিচার বুদ্ধিমতো সামান্য সঞ্চয়ও শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও অনেক পথ যাওয়া বাকি। বাবা-মায়ের অবসর জীবন ছাড়াও তাঁর নিজের সারা জীবন পড়ে রয়েছে। বিয়ে, সংসারের কথাও তাঁকে ভাবতে হবে। এই অবস্থায় ঈশিতার বেতন কতটা সাহায্য করতে পারে, তা-ই দেখব।

বাড়িভাড়া ও বাবার পেনশন থেকে থেকে যা আয় হয়, তা খুবই সামান্য। সেই টাকা দিয়ে তিন জনের সংসার চালানো কিছুটা হলেও অসুবিধার। যে- কারণে ঈশিতা তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

বাবা-মাকে নিয়মিত টাকা দেওয়া ছাড়াও, সংসারের খরচও দেন তিনি। সব জমা-খরচের পরে ঈশিতার হাতে প্রায় ৭,০০০ টাকা থাকে। আসুন দেখি, সেই টাকা কী ভাবে তিনি কাজে লাগাতে পারেন।

প্রথম কাজ জীবনবিমা

ঈশিতার পরিবারে তিনিই একমাত্র চাকরি করেন। সেই কারণে তাঁর কিছু হলে পরিবার সমস্যায় পড়বে। এই কথা মনে রেখে তাঁকে এখনই কমপক্ষে ২৫ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি করতে বলব। অবশ্যই যেন তার সঙ্গে দুর্ঘটনা রাইডার থাকে। ঈশিতার কিছু হলে সেই টাকা ৮% সুদের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রেখে মাসে মাসে পাওয়া যাবে ১৬,৬৬৭ টাকা। এর সঙ্গে পেনশন ও বাড়িভাড়া যোগ করলে তাঁর বাবা-মায়ের চলে যাবে।

পরিবারের স্বাস্থ্যবিমা

বাবা-মায়ের জন্য এখনই পাঁচ লক্ষ টাকার ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা কিনুন। তাঁদের বয়স বেশি হওয়ার কারণে এই খাতে ঈশিতার খরচ তুলনায় বেশি। কিন্তু আগামী দিনে নিশ্চিন্তে থাকতে অবিলম্বে তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা কেনার পক্ষপাতী আমি। পাশাপাশি, ঈশিতার উচিত নিজের জন্যও আলাদা ভাবে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা কেনা। তাঁর ক্ষেত্রে খরচ তুলনায় কম।

বাবা-মায়ের জন্য সঞ্চয়

আগামী কয়েক বছরে নিশ্চয়ই বিয়ের কথা ভাববেন ঈশিতা। ফলে তার জন্য টাকা তো লাগবেই। পাশাপাশি বিয়ের পরেও বাবা-মায়ের খরচ দিতে হবে তাঁকে। ফলে তাঁর উচিত হাতে যে-সময় রয়েছে, তার মধ্যেই পরিবারের জন্য সঞ্চয় করা। এ জন্য আমার পরামর্শ—

ইতিমধ্যেই আপনি যে-রেকারিং শুরু করেছেন, তা চালিয়ে যান।

এর পাশাপাশি, ৩,৫০০ টাকা আপনি ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে লগ্নি শুরু করুন। আগামী দিনে এই খাতে লগ্নি আপনাকে ভাল রিটার্ন দেবে।

পাঁচ বছর পরে এই দুই খাতে প্রায় ৫.৮৬ লক্ষ টাকা জমবে। তার সঙ্গে আরও কিছু টাকা দিলে তা ৬ লক্ষ টাকায় পৌঁছে যাবে।

এখন তাঁর বাবার যে-স্থায়ী আমানত রয়েছে, তা-ও চালিয়ে যেতে বলব। সেই টাকা বেড়ে প্রায় ৩ লক্ষে দাঁড়াবে।

অর্থাত্‌ এই সব মিলিয়ে ঈশিতার হাতে ৫ বছর পরে আসবে ৯ লক্ষ টাকা। এ বার সেই টাকা ৮% সুদের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রাখলে, তাঁর পরিবার পাবে মাসে ৬,০০০ টাকা। যা খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া (যা ভবিষ্যতে কিছুটা বাড়বে) এবং পেনশন মিলিয়ে বাবা-মায়ের সংসার চালাতে অসুবিধা হবে না।

নিজের জন্য জমানো

ইতিমধ্যেই নিজের জন্য একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলে বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন ঈশিতা। চাকরি করার সময়ে সুরক্ষিত এই খাতে লগ্নি করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে তহবিলের পরিমাণ অনেকটাই বাড়ে। পাশাপাশি, করছাড় মেলায় লাভ হয় লগ্নিকারীর।

ঈশিতার বয়স কম। তাই সব টাকাই সুরক্ষিত প্রকল্পে না-রেখে সামান্য হলেও ঝঁুকি নিতে বলব আমি। সে কারণে তিনি এখনই ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি শুরু করতে পারলে ভাল হয়। বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লগ্নিও বাড়াতে থাকুন। এসআইপি-র সুবিধা হল শেয়ার সূচক যে-অবস্থাতেই থাকুক, তাতে লগ্নিতে তেমন হেরফের হয় না। বরং সেনসেক্স বা নিফ্টির মতো সূচকের ওঠা-পড়ার সুযোগে ভাল পরিমাণ ইউনিট কেনা যায়, আর তার মাধ্যমে মোটা তহবিল গড়ে তোলা যায়। তবে এ জন্য নিয়মিত ধৈর্য ধরে সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

এসআইপি-র আর একটি সুবিধা হল, এতে নির্দিষ্ট মেয়াদে লগ্নিও করতে হয় না। ফলে যখন টাকার প্রয়োজন হবে, তখন এই তহবিল থেকে তুলে নেওয়া যাবে। এতে কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি লগ্নি ধাক্কা খেতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনের টাকা জোগাড় করা নিয়ে চিন্তা থাকে না। ফলে বিয়ের সময় যদি তাঁর টাকার প্রয়োজন হয়, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে কিছুটা হলেও তা তুলে নিতে পারবেন।

পরিবারের দায়িত্ব পালন এবং নিজের জন্য সঞ্চয়ের লক্ষ্যে আপাতত এই দুই খাতে লগ্নি করা ছাড়া তাঁর উপায় নেই। তবে বেতন বাড়লে অবশ্যই লগ্নি পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে হবে এবং সেই অনুসারে তা বদলাতে হবে।

নিজের ফ্ল্যাট কেনা

ঈশিতা নিজের ফ্ল্যাট কিনতে চান। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর হাতে ডাউনপেমেন্ট করা বা মাসিক কিস্তি দেওয়ার মতো টাকা নেই। আর তাঁর উপর এখন পরিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আমার মতে, বরং পাঁচ বছর পরে তিনি ফ্ল্যাটের কথা ভেবে দেখতে পারেন।

আশা করব আমাদের পরামর্শ কিছুটা হলেও ঈশিতার কাজে লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন