মিউচুয়াল ফান্ড

চাইলেই পাবেন

শেয়ার বাজার তুঙ্গে। তারই মধ্যে স্বল্প মেয়াদে লগ্নির মাধ্যম হিসেবে লিকুইড ফান্ড যে নজর কাড়ছে, সেই খবর রাখেন কি? চটজলদি ভাঙানোর এমন সুযোগ অন্যখানে পাওয়া শক্ত। লিখছেন নীলাঞ্জন দেসেভিংস অ্যাকাউন্টেই টাকাটা রাখার কথা। কিন্তু রাখলেন না। আপনি খুঁজছেন এমন জায়গা, যেখানে রিটার্ন সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের থেকে কিছুটা বেশি। টাকাটা অন্তত মাস কয়েকের জন্য জমিয়েও রাখা যাবে। এবং যে কোনও সময় প্রয়োজন পড়লে দ্রুত তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধা থাকবে না। আর এগুলোই যদি শর্ত হয়, তা হলে আপনার চাহিদা মেটাতে পারে লিকুইড ফান্ড। এই মুহূর্তে স্বল্প মেয়াদের লগ্নির মাধ্যম হিসেবে যার রিটার্ন অনেককেই রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

সেভিংস অ্যাকাউন্টেই টাকাটা রাখার কথা। কিন্তু রাখলেন না। আপনি খুঁজছেন এমন জায়গা, যেখানে রিটার্ন সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের থেকে কিছুটা বেশি। টাকাটা অন্তত মাস কয়েকের জন্য জমিয়েও রাখা যাবে। এবং যে কোনও সময় প্রয়োজন পড়লে দ্রুত তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধা থাকবে না। আর এগুলোই যদি শর্ত হয়, তা হলে আপনার চাহিদা মেটাতে পারে লিকুইড ফান্ড। এই মুহূর্তে স্বল্প মেয়াদের লগ্নির মাধ্যম হিসেবে যার রিটার্ন অনেককেই রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

চরিত্র কেমন?

• এখানে ‘লিকুইড’ শব্দটি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে লগ্নিকারী কত দ্রুত ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা ফেরত পেতে পারেন। আর সেটাই লিকুইড ফান্ডের বিশেষত্ব। অর্থাৎ এই ফান্ডের টাকা প্রয়োজন হলেই খুব তাড়াতাড়ি ভাঙিয়ে নেওয়া সম্ভব।

Advertisement

• খুব স্বল্প মেয়াদের ফান্ড এটি।

• টাকা খাটানো হয় অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদের বিভিন্ন ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে। ট্রেজারি বিল, কিছু সরকারি ঋণপত্র, কমার্শিয়াল পেপার, সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট, কল মানি ইত্যাদি।

• ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ এ ক্ষেত্রে ঋণপত্রের মূল্যের ওঠাপড়া খুবই কম হতে দেখা যায়। পাশাপাশি, ভাল রেটিং দেওয়া হয়েছে, এমন সব ঋণপত্রেই সাধারণত লগ্নি করে এই ফান্ডের তহবিল।

• স্বল্প মেয়াদের হওয়ায় বাজারে এই ফান্ডের লগ্নি করা ঋণপত্রগুলির কেনাবেচা প্রায় হয় না। এটাও ঝুঁকি কম থাকার অন্যতম কারণ।

• এগজিট লোড বাবদ কোনও খরচ নেই। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে নির্দিষ্ট করা মেয়াদের আগে ফান্ড ভাঙিয়ে বেরিয়ে গেলেও টাকা কাটা হয় না।

• স্বল্প মেয়াদে কোনও খরচ মেটানোর জন্য এই ফান্ডে লগ্নি করেন অনেকে।

• হাতে থেকে যাওয়া বাড়তি টাকা কয়েক মাসের জন্য কোথাও জমা রাখতেও এই ফান্ড বাছা যেতে পারে।

বাছবেন কেন?

ধরুন, ভাইয়ের বিয়ে। হাতে আর মাস দুই-তিন সময় আছে। নিজের সুবিধার জন্য খরচ-খরচা, উপহার ইত্যাদি বাবদ ওই খাতে একটা টাকা আপনি এখন থেকেই সরিয়ে রেখে দিলেন। এ বার প্রশ্ন হল, এই ক’টা দিনের জন্য আপনি টাকাটা রাখবেন কোথায়? সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখতে পারেন। যখনই দরকার পড়বে সেখান থেকে তুলে নিতে পারবেন। কিন্তু সেখানে সুদ খুব কম। আর এখানেই বিকল্প হিসেবে উঠে আসে লিকুইড ফান্ডের নাম। ভাইয়ের বিয়েই হোক বা অন্য কোনও স্বল্প মেয়াদের প্রয়োজন, সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতোই এই ফান্ডে টাকা রাখতে পারেন আপনি। আবার ফান্ডের টাকা প্রয়োজন হলেই ভাঙিয়েও নিতে পারবেন যে কোনও সময়। তবে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের তুলনায় লিকুইড ফান্ড থেকে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা।

কতটা পেতে পারেন

লিকুইড ফান্ড থেকে আপনি কখনওই দীর্ঘ মেয়াদি লগ্নি বা সঞ্চয়ের মতো বড় রিটার্ন ঘরে তুলতে পারবেন না। যে কারণে আমি বারে বারেই বলছি, টাকা যদি সেভিংস অ্যাকাউন্টেই ফেলে রাখবেন মনে করেন, তা হলে লিকুইড ফান্ডে রাখুন। একই রকম সুবিধা পাবেন তুলনায় একটু বেশি রিটার্ন সমেত। তবে এই রিটার্ন ঠিক কেমন হতে পারে, এ বার সেই সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। গত ৭ এপ্রিল পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই রিটার্নের বিষয়টি তুলে ধরছি আমি। যদিও রিটার্ন যে প্রতি বার একই রকম হবে, তা মনে করার কারণ নেই।

এক নজরে

• সেভিংস অ্যাকাউন্টের ভাল বিকল্প।

• তবে সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকার উপর চেক কাটা যায়, এখানে সেটা করা যায় না।

• এই ফান্ড চালানো সাধারণ মানুষের পক্ষে সুবিধাজনক।

• চাইলে যে কোনও সময় খুব দ্রুত টাকা ভাঙিয়ে নেওয়া যায়।

• ঝুঁকি অনেকটাই কম।

গত ৭ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, লিকুইড ফান্ড গত এক বছরে রিটার্ন দিয়েছে ৯.০১%। যেখানে গত এক বছরে ইনকাম ফান্ড (পুরো মাত্রায় ঋণপত্র নির্ভর ফান্ড) দিয়েছে ৪.৮৯%, শর্ট টার্ম ডেট ফান্ড (সাধারণত এক বছরের বেশি মেয়াদযুক্ত ঋ

ণপত্র ভিত্তিক ফান্ড) দিয়েছে ৭.৭৬%, শর্ট টার্ম গিল্ট ফান্ড (স্বল্প মেয়াদের সরকারি ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ড) দিয়েছে ৮.৫৮%। অন্য দিকে, যদিও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ ধার্য করার ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলিকে স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে আমরা সকলেই জানি যে, সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৪%। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একটু বেশি দেয়।

উদাহরণ—

আপনাদের কাছে যাতে এই লিকুইড ফান্ডের বিষয়টি আরও একটু পরিষ্কার হয়, সে জন্য এ বার আমি একটি উদাহরণ দেব। তবে আগেই বলে নিচ্ছি, এটাকে কিন্তু আমার কোনও বিশেষ ফান্ডের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনও পছন্দ বলে ধরবেন না। কারণ এটা শুধুমাত্র একটি উদাহরণ হিসেবেই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমি।

আমি বলছি এইচএসবিসি ক্যাশ ফান্ড-এর কথা। চালু হয়েছিল ২০০৪ সালের জুন মাসের। এই ফান্ডের তহবিল মূলত লগ্নি করে সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট, কর্মাশিয়াল পেপার ইত্যাদিতে। গত আর্থিক বছরের শেষ দিন (৩১ মার্চ) পর্যন্ত এই ফান্ডের মোট তহবিলের পরিমাণ ছিল ২৫০০ কোটি টাকার বেশি। গত এক বছরে ফান্ডটি রিটার্ন দিয়েছে ৯.৪২%।

পরামর্শদাতা মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন