ছাতার তলায় লাভের হদিস

তুলনায় নিরাপদ বলেই পরিচিত। বাজারে আরও সুদ কমার সম্ভাবনায় এ বার রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ছে। ফলে গিল্ট ফান্ডে লগ্নিকারীদের এখন পৌষ মাস।তুলনায় নিরাপদ বলেই পরিচিত। বাজারে আরও সুদ কমার সম্ভাবনায় এ বার রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ছে। ফলে গিল্ট ফান্ডে লগ্নিকারীদের এখন পৌষ মাস।

Advertisement

নীলাঞ্জন দে

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:২২
Share:

মূলধনের নিরাপত্তা ও ভাল রিটার্ন। লগ্নির দুনিয়ায় এই জুটি দুর্লভ। বেশির ভাগ মানুষই এটা চান, কিন্তু সহজে পান না। তবে সাম্প্রতিক কালে মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায় এই দুর্লভ জুটির দেখা মিলেছে। সৌজন্যে গিল্ট ফান্ড। অর্থাৎ গিল্ট বা সরকারি ঋণপত্রে তহবিল খাটায় এমন ফান্ড। হালে এই ফান্ডের ন্যাভকে দ্রুত বাড়তে দেখা গিয়েছে। চোখে পড়ার মতো বেড়েছে তার রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতা। এবং আশা, আগামী দিনে আরও বাড়বে। অথচ অন্যান্য অনেক লগ্নি-মাধ্যমের তুলনায় বেশি সুরক্ষিত হলেও রিটার্নের নিরিখে এমনিতে গিল্ট নিতান্তই সাধারণ। ফলে শুধুমাত্র এতে তহবিল খাটায় এমন ফান্ডের গতিপ্রকৃতিও তেমন উল্লেখযোগ্য হতে দেখা যায় না। ফলে এখন প্রশ্ন জাগছে, হঠাৎ গিল্ট ফান্ডের রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতা কেন এবং কী ভাবে বাড়ল? আগামী দিনে এই জোট-শক্তির শরিক হতে চাইলে আপনাকেই বা কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে? চলুন, আজ এগুলো নিয়েই আলোচনায় বসি।

Advertisement

মাথা বাঁচিয়ে লাভ

Advertisement

গিল্ট ফান্ড লগ্নির নিরাপত্তা এবং ভাল রিটার্নের শর্ত দু’টি একসঙ্গে পূরণ করছে বলেই না তাকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল বাধ মানছে না। তাই প্রথমে আসি এখানে লাগানো টাকা খোওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকা, অর্থাৎ লগ্নির সুরক্ষার কথায়।

লগ্নি নিরাপদ কেন? গিল্ট ফান্ড তার তহবিল খাটায় মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদের সরকারি ঋণপত্র বা সিকিউরিটিতে। এই সব সিকিউরিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট সুদে বাজার থেকে ধার নেয়। যেহেতু সরকারই এখানে ঋণগ্রহীতা, তাই সুদ দিতে না-পারা বা মেয়াদ শেষে ঋণের মূল টাকা না-ফেরানোর সম্ভাবনা এখানে অনেক কম।

বস্তুত, শেয়ার বাজারে লগ্নি করলে ফান্ডের তহবিল যতটা বাড়ার সম্ভাবনা, ঋণপত্রে লগ্নি করে ততটা বাড়ানো হয়তো শক্ত। কিন্তু তেমনই সামাজিক-রাজনৈতিক স্তরে কোনও উথাল-পাথাল বা দেশের অর্থনীতি রসাতলে যাওয়া মতো কিছু না-ঘটলে, রাতারাতি সুদ বাদ পড়া বা লগ্নি করা টাকা ফেরত না-পাওয়ার মতো নাটকীয় সমাপতনের সম্ভাবনা সরকারি ঋণপত্রের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।

যে কারণে, ঝুঁকির মাপকাঠি হিসেবে এই ঋণপত্রগুলির সাধারণত ‘সভরিন’-এর মতো সর্বোচ্চ রেটিং হয়। যার মানে, এগুলিতে টাকা খাটানো অত্যন্ত নিরাপদ। ফলে যে সব ফান্ড শুধুমাত্র সরকারি ঋণপত্রেই তার তহবিল লগ্নি করে, সেগুলিও তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত।

এ বার কৌতূহলের দ্বিতীয় পর্ব, গিল্ট ফান্ডে লগ্নিকারীদের আচমকাই কপাল খোলার প্রসঙ্গে আসি।

কেন বাড়ছে ন্যাভ? এক কথায় বলা যায়, বাজারে যবে থেকে সুদ কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তবে থেকেই নজর কাড়তে শুরু করেছে এই ফান্ড।

মনে রাখবেন, বাজারে সুদ বাড়লে বা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে হাতে থাকা সিকিউরিটির দাম কমে। আবার সুদ কমলে বা আগামী দিনে কমার কোনও ইঙ্গিত পেলেই ওই সিকিউরিটির দাম বেড়ে যায়। এই দাম কতটা উঠবে বা নামবে, সেটা নির্ভর করে সিকিউরিটির সুদের হার (রেট) এবং তার মেয়াদের (ম্যাচিওরিটি) উপর। ডেট ফান্ডের (যে কোনও ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ড) এই চরিত্রটাই বর্তমানে গিল্ট ফান্ডের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বহু দিন ধরেই বাজারে সুদের হার কমানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে তদ্বির করে আসছে সরকার ও শিল্পমহল। মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি থাকার দরুন যে দাবি থেকে একটা সময় পর্যন্ত মুখ ফিরিয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ওই হার কমলে সুদ কমানোর পথে হাঁটা হবে। এ বার ধীরে ধীরে মূল্যবৃদ্ধির হার নামতে শুরু করায় সেই সম্ভাবনা আরও চাঙ্গা হয়েছে।

যে কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর আগে দু’বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েওছে। এমনকী মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকলে আগামী দিনে হয়তো ওই হার আরও কমানো হবে। আর এটাই অক্সিজেন জোগাচ্ছে গিল্ট ফান্ডে। অতি সুরক্ষিত এই ঋণপত্রের দর ওঠার পথ ধরেছে বাজার কম সুদের জমানায় ঢুকে পড়তে পারে, এই ইঙ্গিত পাওয়ার পর থেকেই। গিল্টের দাম বাড়ছে বলেই বেশি লাভের গুড় খাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে থাকা ফান্ড। বাড়ছে ফান্ডের তহবিল। উঠছে ন্যাভ। সব মিলিয়ে বেশি রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে গিল্ট ফান্ডের।

গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে বেশ কিছু গিল্ট ফান্ড গড়ে প্রায় ২০ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে।
এর মধ্যে আইসিআইসিআই, ইউটিআই, বিড়লা সান লাইফ, ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন ও কোটাকের মতো সংস্থা পরিচালিত ফান্ড রয়েছে। তবে মনে রাখবেন, এই নামগুলো কিন্তু স্রেফ উদাহরণ দেওয়ার জন্যই উল্লেখ করা। আমি কিন্তু এখানে কোনও ফান্ড কেনার জন্য সুপারিশ করছি না এখানে।

মাথায় রাখুন

এই পরিস্থিতিতে মুনাফার শরিক হতে চোখ-কান খুলে, বুঝে-শুনে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা অবশ্যই জরুরি। যেমন—

অন্তত কিছু দিন ধরে রাখার মতো টাকা হাতে থাকলে, কোনও গিল্ট ফান্ড কেনার কথা ভেবে দেখতে পারেন। তবে রাতারাতি লাভ করার আশা করবেন না। কিছু দিনের জন্য টাকা লাগিয়ে নজর রাখুন সুদের হার কোন দিকে যাচ্ছে বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার উপর।

আপনাকে যে ১০০ শতাংশ সরকারি ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডই যে কিনতে হবে, তার কোনও মানে নেই। অনেক ডেট ফান্ড রয়েছে, যেখানে তহবিলের বড় অংশ গিল্টে লগ্নি করা হয়। খোঁজখবর নিয়ে সেই ধরনের ফান্ডেও টাকা ঢালার কথা ভেবে দেখতে পারেন।

পুরোপুরি গিল্ট ফান্ডই হোক বা আংশিক তহবিল গিল্টে খাটে এমন ফান্ড, কেনার আগে ভাল করে দেখেশুনে নিন। সে ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারদের অতীত রেকর্ড খতিয়ে দেখতে পারেন। চাইলে কোনও পেশাদার উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন। ভাল করে বুঝে নেবেন ফান্ডটির তহবিল বণ্টনের প্রক্রিয়া।

তবে একটা কথা, গিল্ট ফান্ড এখন ভাল করছে বলেই যে আগামী দিনেও তার এই ধারা বজায় থাকবে, তা না-ও হতে পারে। এই ধরনের লগ্নিতে গ্যারান্টি বলে কোনও বস্তু নেই।

পরামর্শদাতা মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন