বাঙালি মেয়ের মধ্যে দেবী আছেন

আমার কাজের পৃথিবীটা তো পশ্চিমবঙ্গেই কাটল। বিয়ের পরপরই চলে আসি এখানে। তার পরই শুরু নাচ নিয়ে মেতে থাকার জীবন। সে ১৯৫৮ সালের কথা। দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি আমি এখানে। বাঙালিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। অনেক ভাল লাগা রয়েছে আমার এই শহর আর শহরবাসীদের ঘিরে। আমাকে মুগ্ধ করেছে বাঙালি মেয়েরা। কারণ, সেই মেয়েদের মধ্যে স্বয়ং মা দুর্গাকে দেখেছি আমি বারবার। এখনও দেখেই চলেছি!

Advertisement

থাঙ্কমণি কুট্টি

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

আমার কাজের পৃথিবীটা তো পশ্চিমবঙ্গেই কাটল। বিয়ের পরপরই চলে আসি এখানে। তার পরই শুরু নাচ নিয়ে মেতে থাকার জীবন। সে ১৯৫৮ সালের কথা। দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি আমি এখানে। বাঙালিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। অনেক ভাল লাগা রয়েছে আমার এই শহর আর শহরবাসীদের ঘিরে। আমাকে মুগ্ধ করেছে বাঙালি মেয়েরা। কারণ, সেই মেয়েদের মধ্যে স্বয়ং মা দুর্গাকে দেখেছি আমি বারবার। এখনও দেখেই চলেছি!

Advertisement

কত ছোট্ট ছোট্ট মেয়ে নাচ শিখতে আসে আমার কাছে। জানেন, ওই অতটুকুনি বাচ্চাদের মধ্যেও আমি দেবীত্ব খুঁজে পেয়েছি। নাচের মঞ্চে তো বিভিন্ন সময় কত দেবীর রূপই ফুটিয়ে তুলতে হয়। দুর্গা, পার্বতী, লক্ষ্মী, সরস্বতী... কত রকম প্রণামের ভঙ্গি, কত রকমের রূপ— কখনও রূদ্র, কখনও কোমল, কখনও বেদনাময়ী। এই বাচ্চারা কিন্তু ভারী অনায়াসে সেই সব মুদ্রা ফুটিয়ে তোলে। আমিই অবাক হয়ে যাই। জীবনের এত স্তর ওরা দেখল কবে? কোথায় পেল এত পরিণত বোধ? তখন তাদের দেখে মনে হয় ওরা শক্তিরই অংশ! তাই এত অনায়াসে পারছে সব কিছু! দেবীপূজার সময়ে কুমারীপুজোর যে প্রথাটা আছে, তাতে কি মৃন্ময়ী আর চিন্ময়ী দেবীকে আলাদা করা যায়? ছোট্ট মেয়েগুলো যেন প্রতিমার আয়না-ছবি হয়ে দাঁড়ায়। ওই রকম মাধুর্য, ওই রকম গাম্ভীর্য, মায়া, মমতা, মাতৃত্ব। মনে হয় দেবীই মেয়েটির বেশে নেমে এসেছেন মর্তে। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয় একেবারে। কী অদ্ভুত না, যে একটি প্রদেশের নারী মাত্র দেবীর অবতার? এ তো এক আশীর্বাদ!

সত্যি, শুধু ছোট মেয়েরাই নয়, এই দৈবরূপ আমি দেখেছি বড় মেয়েদের মধ্যেও। এমনকী বয়স্কদের মধ্যেও। সকলের মধ্যে মা দুর্গার প্রভাব রয়েছে। ওই শরীরী বিভঙ্গে, সকলকে নিয়ে চলার সৌষ্ঠবে, লাবণ্যে, স্নানের পরের এলোকেশে, আর হ্যাঁ, চোখে। কী সুন্দর আয়ত নেত্র হয় বাঙালি মেয়েদের। ওই বড় বড় চোখেই ত্রিনয়ন দেখেছি আমি। ঘরে বাইরে সংসার সামলানোর মধ্যে দেখেছি দশ হাত। কোনও অন্যায় দেখলে যখন বাঙালিনি গর্জে ওঠে তখন দেখেছি তার হাতের ত্রিশূল।

Advertisement

তবে শিবঠাকুরকে দেখতে পাইনি। জন্মসূত্রে তো আমি কেরলের মানুষ। ওখানে আবার দেবতার আধিপত্য। পুরুষ ভগবান, নটরাজ। কেন জানি না, অনেক দক্ষিণী ছেলের মধ্যে কিন্তু আমি এই নটরাজ-রূপ দেখতে পাই। কোনও তুলনায় যাচ্ছি না, তবে বাঙালি ছেলের মধ্যে কিন্তু সে ভাবে এই ‘ডিভিনিটি’ চোখে পড়েনি আমার। কিন্তু বাংলার মেয়ে-বউ-মা সবাই কিন্তু ‘গডেস’। কোনও মন্দিরের গভর্গৃহে, কোনও বিশেষ ঋতুর জাঁকজমকে নয়, এখানে ভগবতী নিশ্বাস নেন প্রতিটি ঘরের কোণে, প্রতিটি দিনে, প্রতিটি মুহূর্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন