শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক সপ্তাহ আগে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। বয়সজনিত অন্যান্য অসুস্থতাও ছিল। সোমবার আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে আসেন অমিতাভ, সলমন, শাহরুখের মতো বলিউডের তাবড় তারকারা।
এর পর মঙ্গলবার এমনও রটে যে, মৃত্যু হয়েছে ধর্মেন্দ্রের। কিছু ক্ষণ পর তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়, অভিনেতার মৃত্যুর খবর ভুয়ো। এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়। এর পর অসুস্থতাকে হারিয়ে বুধবার বাড়ি ফিরেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা।
ধর্মেন্দ্র, তাঁর দুই স্ত্রী, দুই পুত্র, চার কন্যা— এঁদের নিয়ে তো প্রায় সকলেই জানেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন তাঁরা।
ধর্মেন্দ্রের ভাইপো তথা বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা অভয় দেওলের কথাও অনেকেই জানেন। তবে অনেকেই জানেন না ধর্মেন্দ্রর ভাই তথা অভয়ের বাবা অজিত সিংহ দেওলের কথা।
অভয়ের মতো তাঁর বাবা অজিতও ছিলেন অভিনেতা। পরিচালক এবং প্রযোজকও ছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন বলিউডের কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্রের ছোট ভাই হিসাবে।
হিন্দি এবং পঞ্জাবি— উভয় সিনেমাজগতেই অবদান ছিল অজিতের। হিন্দি এবং পঞ্জাবি মিলিয়ে ২৫টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে তাঁর বেশি অবদান ছিল পঞ্জাবি চলচ্চিত্রে।
‘মেহরবানি’, ‘বীরতা’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘রেশম কী ডোরি’, ‘কহানি কিসমত কী’, ‘রাজিয়া সুলতান’, ‘বরসাত’ এবং ‘ইনসাফ কা সুরজ’-এর মতো একগুচ্ছ হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অজিত। অভিনয়ের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করলেও সে ভাবে সুযোগ পাননি।
বলি বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, দাদা ধর্মেন্দ্রের খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়েছিলেন অজিত। আর সে কারণেই, অসংখ্য নামী অভিনেতা-পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেও অভিনয়ের দিক থেকে সে ভাবে সাফল্য অর্জন করতে পারেননি অজিত। ‘সুপারস্টার’ তকমাও জোটেনি তাঁর কপালে। সহশিল্পী হিসাবেই থেকে গিয়েছিলেন।
অনেকে আবার মনে করেন, ধর্মেন্দ্রের ভাই হওয়াই ছিল তাঁর জীবনের ‘অভিশাপ’। প্রতি মুহূর্তে দাদার সঙ্গে তুলনা করা হত তাঁর।
আবার অনেকের মতে, ধর্মেন্দ্রের মতো দেখতে ছিলেন এবং অভিনয়ের ধরনও তাঁর মতো ছিল বলেই অজিতকে ছবিতে নিতে চাইতেন না পরিচালক-প্রযোজকেরা।
যদিও সিনেমাবোদ্ধাদের একাংশের মতে, সুপারস্টার হওয়ার উদ্দেশ্য কোনও দিন ছিল না অজিতের। বরং, পরিচালক হিসাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন তিনি।
ছবি পরিচালনার কাজে হাতও পাকিয়েছিলেন অজিত। ১৯৮৩ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘পুট জট্টন দে’র মাধ্যমে পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। ছবিটি সেই সময়ের অন্যতম হিট হিসাবে গণ্য হয়।
১৯৭৬ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘সান্টো বান্টো’ পরিচালনা করেন অজিত। ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র ও শত্রুঘ্ন সিন্হা। ১৯৮২ সালে ‘মেহেরবানি’ নামে একটি হিন্দি ছবিও পরিচালনা করেন অজিত। সেই ছবিতে অভিনয় করেন মহেন্দ্র সান্ধু এবং সারিকা।
১৯৭৫ সালের অ্যাকশন-কমেডি ছবি ‘প্রতিজ্ঞা’ প্রযোজনা করেন অজিত। ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনী অভিনীত ছবিটি সুপারহিট হয় সে সময়।
দুই ভাইপো সানি দেওল এবং ববি দেওলের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন অজিত। ১৯৯৩ সালে সানির অ্যাকশন ঘরানার ছবি ‘বীরতা’ প্রযোজনা করেন অজিত। ১৯৯৫ সালে ববি অভিনীত ‘বরসাত’ ছবিতে অভিনয় করেন।
দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০১৫ সালে মারা যান অজিত। পিত্তথলি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দীর্ঘ দিন প্রচারের আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন অজিত।
অজিত সে ভাবে সাফল্যের মুখ না দেখলেও তাঁর পুত্র অভয় বলিউডে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে তাঁকে অন্যতম প্রতিভাবান ধরা হয়। ‘মনোরমা সিক্স ফিট আন্ডার’, ‘ওয়ে লাকি! লাকি ওয়ে!’, ‘দেব ডি’, ‘জ়িন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ এবং ‘সাংহাই’য়ের মতো জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভয়।