Al-Falah University

দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে কী ভাবে নাম জড়াল আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের? কারা পরিচালনা করে এটি? কী কী পড়ানো হয়? বিশদে খুঁটিনাটি

১৯৯৭ সালে ফরিদাবাদে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় আল-ফালাহ্‌। ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে সেটি। তার পর থেকে সেটি একটি বহু বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১৫
Share:
০১ ২১

গত সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লার কাছে একটি গাড়ির বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে ১৩ জনের। আহত বহু। এই ঘটনার তদন্তে নেমে একাধিক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে জড়িত ছিলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। নাম, আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়।

০২ ২১

দিল্লি বিস্ফোরণের পরেই তদন্তকারীদের নজরে পড়ে হরিয়ানার ফরিদাবাদের ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি। দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে ধৃত মুজ়াম্মিল আহমেদ এবং শাহিন শহিদ ওই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

Advertisement
০৩ ২১

শ্রীনগরে জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগে ধৃত আদিল মাজ়িদ রাথরের সঙ্গেও যোগ রয়েছে আল-ফালাহ্‌ মেডিক্যাল কলেজের। দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত চিকিৎসক উমর-উন-নবিও আল ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার পরে থেকেই তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়।

০৪ ২১

কারা পরিচালনা করে এই আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়? বিশদে জেনে নেওয়া যাক বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস এবং এর সঙ্গে জঙ্গি মডিউলের যোগ থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে।

০৫ ২১

হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়। ‘হোয়াইট-কলার সন্ত্রাসী মডিউল’-এর সঙ্গে জড়িত তিন চিকিৎসককে গ্রেফতার এবং দিল্লির লালকেল্লার কাছে মারাত্মক বিস্ফোরণের পর তদন্তের মুখে পড়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

০৬ ২১

মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ ধৌজ গ্রামে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিতেরা পাকিস্তান-সমর্থিত হ্যান্ডলারদের নির্দেশে কাজ করেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

০৭ ২১

১৯৯৭ সালে ফরিদাবাদে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় আল-ফালাহ্‌। ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে সেটি। তার পর থেকে সেটি একটি বহু বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

০৮ ২১

আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি হরিয়ানা বিধানসভা কর্তৃক হরিয়ানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম দিকের আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়কে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার মতো অন্যান্য প্রধান প্রতিষ্ঠানের বিকল্প হিসাবে দেখা হত। মানসম্মত শিক্ষার সন্ধানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

০৯ ২১

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘আল-ফালাহ্‌ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’, ‘ব্রাউন হিল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ এবং ‘আল-ফালাহ্‌ স্কুল অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’-সহ বেশ কয়েকটি কলেজ রয়েছে।

১০ ২১

আল-ফালাহ্‌ মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ফরিদাবাদে ৭৬ একর জমির উপর গড়ে ওঠা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই। ২০১৯ সালে আল-ফালাহ্‌ মেডিক্যাল কলেজে স্নাতক ডিগ্রি শুরু হয়। দু’বছর পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও চালু হয়।

১১ ২১

৬৫০ শয্যার একটি হাসপাতালও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ওই হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।

১২ ২১

আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আল-ফালাহ্‌ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। ২০১৪ সাল থেকে আল-ফালাহ্‌ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

১৩ ২১

ওই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জাওয়াদ আহমদ সিদ্দীকী এবং ভাইস-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মুফতি আবদুল্লাহ কাসিমি। ট্রাস্টের সচিব (সেক্রেটারি) পদে রয়েছেন মহম্মদ ওয়াজিদ।

১৪ ২১

আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক তথা অধ্যাপিকা ভূপিন্দর কৌর আনন্দ। অন্য দিকে, চিকিৎসক তথা অধ্যাপক মহম্মদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার পদে রয়েছেন।

১৫ ২১

ইতিমধ্যেই আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়কে কারণ দর্শানোর (শোকজ়) নোটিস পাঠিয়েছে ন্যাক (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিশন কাউন্সিল)। অভিযোগ, নিজেদের ওয়েবসাইটে অনুমোদনের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ন্যাক তাদের কোনও অনুমোদন দেয়নি।

১৬ ২১

আল-ফালাহ্কে পাঠানো শোকজ় নোটিসে ন্যাক লিখেছে, ‘ওই কলেজ কখনও অ্যাক্রিডেশন-এর (স্বীকৃতি) জন্য আবেদন করেনি। তাকে স্বীকৃতি দেয়নি ন্যাক’। তারা আরও জানিয়েছে, ওই কলেজের ওয়েবসাইটে লেখা, ‘আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয় আল-ফালাহ্‌ দাতব্য ট্রাস্টের উদ্যোগে তৈরি। এর ক্যাম্পাসে তিনটি কলেজ চালানো হয়— আল ফালাহ্‌ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (১৯৯৭ সাল থেকে রয়েছে। ন্যাক ‘এ’ গ্রেড দিয়েছে), ব্রাউন হিল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (২০০৮ সাল থেকে), আল-ফালাহ্ স্কুল অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (২০০৬ সাল থেকে রয়েছে, ‘এ’ গ্রেড দিয়েছে ন্যাক)।’

১৭ ২১

শোকজ় নোটিসে ন্যাক জানিয়েছে, নিজেদের ওয়েবসাইটে আল-ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া এই তথ্য ভুল এবং তা পড়ুয়া, অভিভাবক, অংশীদারদের ভুলপথে চালিত করছে। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা তলব করেছে ন্যাক। তাদের স্বীকৃতি নিয়ে যে তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়, তা দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছে ন্যাক।

১৮ ২১

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মুজ়াম্মিলেরা গ্রেফতার হওয়া এবং ন্যাকের শোকজ় নোটিস পাওয়ার পর থেকে ওই কলেজের পড়ুয়া বা হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই তটস্থ হয়ে আছেন। ওই মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়াদের দাবি, শুধু মুজ়াম্মিল নন, শাহিন বা আদিলের সম্পর্কেও অবগত ছিলেন না তাঁরা। এখন তাঁদের একটাই চিন্তা, এমবিবিএস শেষ করার পর চাকরি জোটাতে পারবেন তো? কেউ তাঁদের বিশ্বাস করবেন তো?

১৯ ২১

দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল ফালাহ্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়াতেই রহস্যজনক ভাবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ১৫ জনের বেশি চিকিৎসকের কোনও হদিস মিলছে না বলে তদন্তকারী এক সূত্রের খবর। ওই সূত্রের দাবি, গত দু’দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি।

২০ ২১

তদন্তকারীদের সন্দেহ, ‘নিখোঁজ’ হওয়া সেই চিকিৎসকেরা ‘ডক্টর টেরর মডিউল’-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত অথবা বিস্ফোরণকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িয়ে পড়তেই আল ফালাহে্‌র চত্বর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা।

২১ ২১

জঙ্গি কার্যকলাপের তদন্তের সঙ্গে আল-ফালাহে্‌র নাম জড়িয়ে পড়ার পরেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা নেই তো বিশ্ববিদ্যালয়টির! তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন, একসময় শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসাবে বিবেচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিৎসকেরা কী ভাবে ওই ধরনের কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়লেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement