Bengaluru’s paying guest crisis

বন্ধ হচ্ছে শয়ে শয়ে পিজি, ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’তে আতান্তরে পড়ুয়া থেকে চাকরিজীবীরা! কেন এমন সঙ্কট?

‘বেঙ্গালুরু পিজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে জানানো হয়েছে, বেঙ্গালুরুতে মোট পিজির সংখ্যা বর্তমানে ১২,০০০-এরও বেশি। কিন্তু এর মধ্যে বৈধ অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২,৫০০ পিজির।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ১৩:১০
Share:
০১ ১৯

কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই— সমস্ত শহরেই বাইরে থেকে আগত চাকরিজীবী এবং পড়ুয়াদের থাকার জন্য শয়ে শয়ে পিজি (পেইং গেস্ট থাকার ব্যবস্থা) রয়েছে। সব শহরেই পিজিগুলিতে থাকার নিয়ম মোটামুটি এক। অগ্রিম এক বা দু’মাসের টাকা জমা দিতে হয়, মাসে মাসে গুনতে হয় থাকার ভাড়া। খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে তার জন্য আলাদা টাকা ধার্য করা থাকে। এ ছাড়া আলাদা ভাবে বিদ্যুতের বিলও দিতে হয়। বাড়তি কোনও ঝামেলা নেই।

০২ ১৯

বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকার চেয়ে পিজিতে থাকার ঝক্কি অনেক কম। খরচও কম। আর সে কারণেই অন্য শহর থেকে আগত পড়ুয়া এবং চাকরিজীবীরা থাকার জন্য বেছে নেন পিজি-কেই।

Advertisement
০৩ ১৯

কিন্তু এ বার সেই পিজি-সঙ্কট দেখা দিল দেশের অন্যতম ব্যস্ত শহর বেঙ্গালুরুতে। গত কয়েক দিনে সেই শহরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় তিনশো পিজি। ‘বেঙ্গালুরু পিজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

০৪ ১৯

কিন্তু কেন এই অবস্থা? খবর, স্থানীয় পুরসভা ‘ব্রুহত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিক’ (বিবিএমপি) পিজি পরিচালনা নিয়ে কঠোর নিয়ম চালু করার পর পিজি বন্ধের হিড়িক শুরু হয়েছে ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসাবে পরিচিত বেঙ্গালুরু শহরে।

০৫ ১৯

‘বেঙ্গালুরু পিজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে জানানো হয়েছে, বেঙ্গালুরুতে মোট পিজির সংখ্যা বর্তমানে ১২,০০০-এরও বেশি। কিন্তু এর মধ্যে বৈধ অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২,৫০০ পিজির। ফলে সেই শহরে প্রায় ১০,০০০ পিজি চলছে যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই, ‘অবৈধ ভাবে’।

০৬ ১৯

সেই প্রসঙ্গে ‘বেঙ্গালুরু পিজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। অনুমোদন ছাড়া চলছে এমন পিজিতে বিবিএমপি যে কোনও সময় হানা দিতে পারে। পিজি ব্যবসা, যা একসময় শহরে লাভজনক রিয়্যাল এস্টেট বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হত, তা পতনের দিকে যাচ্ছে।’’

০৭ ১৯

এ সবের সূত্রপাত হয়েছে গত বছর। বেঙ্গালুরুতে পেইং গেস্ট থাকার জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছিল বিবিএমপি। সেই সব নিয়মের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সমস্ত পিজিতে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করা। পাশাপাশি, সমস্ত পিজিতে প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য নির্দিষ্ট দরজা রাখার কথাও বলা হয়।

০৮ ১৯

একই সঙ্গে ওই নিয়ম অনুযায়ী, পিজির মালিকদের প্রতি আবাসিককে কমপক্ষে ৭০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। রাখতে হবে বিশুদ্ধ জল সরবরাহের ব্যবস্থা।

০৯ ১৯

খাবার দেওয়া হয় বা রান্নার সুবিধা রয়েছে এমন পিজিগুলির জন্য, ভারতের খাদ্য সুরক্ষা ও মান কর্তৃপক্ষের থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

১০ ১৯

পিজি নিয়ে নিয়ম কড়াকড়ি করার পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন বিবিএমপির কর্তারা। খবর, এপ্রিল মাসে মহাদেবপুরা জ়োনে ওই সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে প্রায় ১০০টি পিজির রান্নাঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

১১ ১৯

বিবিএমপি কর্তাদের মতে, এই পিজিগুলির মধ্যে অনেকগুলি আইন লঙ্ঘন করে কাজ করছিল। অন্য দিকে, বেঙ্গালুরুর বেশ কয়েক জন পিজি মালিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন বিবিএমপি-র কড়া নিয়মের জন্য তাঁদের পিজি ব্যবসা ২০-৩০ শতাংশ লোকসানে চলছে। আর সে কারণেই অনেকে পিজি বন্ধ করে দিচ্ছেন।

১২ ১৯

সাধারণ বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে যেখানে ৩-৪ শতাংশ হারে আয় হয়, সেখানে পিজির ক্ষেত্রে ফেরত পাওয়া যায় ৬-৮ শতাংশ হারে। অর্থাৎ, পিজির ব্যবসা বাড়িভাড়া দেওয়ার চেয়ে অনেকটাই লাভজনক। এর ফলে বেঙ্গালুরুর বহু মানুষ ওই খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

১৩ ১৯

‘বেঙ্গালুরু পিজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রধান এলাকাগুলিতে পিজি মালিকেরা প্রতি বিছানার জন্য আবাসিকদের থেকে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। একা বা দু’জন একটি কামরায় থাকলে খরচ ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আমরা যদি ভাড়া আরও বাড়াই, তা হলে ভাড়াটেদের পিজি ছেড়ে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

১৪ ১৯

তিনি আরও বলেন, ‘‘উপরন্তু বেঙ্গালুরুতে জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ জলের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে আমাদের খরচ বাড়ছে। লাভ কমছে। অনেক পিজি মালিক এখন লোকসানে চলছেন কারণ তাঁরা ভাড়াটেদের উপর অতিরিক্ত খরচ চাপিয়ে দিতে পারছেন না।’’

১৫ ১৯

অন্য এক মালিক আবার জানিয়েছেন, তাঁদের থেকে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুতের বিল নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বাণিজ্যিক কর আরোপ করা হচ্ছে। আর সে কারণেই অনেক পিজি মালিকের লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

১৬ ১৯

বেঙ্গালুরুতে পিজি নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনিয়ম এবং সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক বিশেষজ্ঞেরাও। পুরো ক্ষেত্রটি অত্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত এবং সমস্যাযুক্ত বলেও বর্ণনা করেছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পিজি মালিকেরা নির্মাণ আইন উপেক্ষা করে রিয়্যাল এস্টেট দালালদের সঙ্গে জোট বাঁধছেন এবং অনুমোদিত সীমার বাইরেও নির্মাণকাজ চালাচ্ছেন।

১৭ ১৯

হোয়াইটফিল্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন অনেক পিজি রয়েছে যেখানে অনুমোদিত সংখ্যার থেকে প্রায় দ্বিগুণ তলা রয়েছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, এ ভাবে যত্রতত্র আগাছার মতো গজিয়ে ওঠা পিজি স্থানীয় পরিকাঠামোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে জল সরবরাহের উপর।

১৮ ১৯

ফলে পিজি নিয়ে নিয়মকানুন কড়া করার পক্ষেই যুক্তি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘একমাত্র সমাধান আইনের কঠোর প্রয়োগ। সরকারকে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে অননুমোদিত পিজির রমরমা রুখতে হবে।’’

১৯ ১৯

যদিও পিজি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সঙ্কটের জন্য সবচেয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য অন্য শহর থেকে বেঙ্গালুরুতে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের। অনেক পিজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরের মধ্যে হন্যে হয়ে বাসস্থান খুঁজতে হচ্ছে অনেককেই।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement