আবার শোকের ছায়া বলিউডে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বিখ্যাত বডিবিল্ডার তথা বলি অভিনেতা বরিন্দর সিংহ ঘুম্মনের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অমৃতসরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
মৃত্যুর সময় বরিন্দরের বয়স হয়েছিল ৪২ বছর। জানা গিয়েছে, পেশিতে আঘাতের কারণে অমৃতসরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ছোট একটি অস্ত্রোপচার হওয়ারও কথা ছিল তাঁর।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, বরিন্দরের যে অস্ত্রোপচারটি হওয়ার কথা ছিল, তা খুব সাধারণ। শীঘ্রই তাঁকে ছেড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন হঠাৎ করেই বরিন্দরের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিন্দরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন পঞ্জাবের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ সুখজিন্দর সিংহ রনধওয়া।
এক্স হ্যান্ডলে সুখজিন্দর লিখেছেন, “পঞ্জাবের বিখ্যাত বডিবিল্ডার তথা অভিনেতা বরিন্দর সিংহ ঘুম্মনের আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং দক্ষতা দিয়ে তিনি বিশ্ব জুড়ে পঞ্জাবের নাম উজ্জ্বল করেছিলন। ভগবানের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। পরিবারকেও এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন ভগবান।”
ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পার্জত সিংহও এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, “বিখ্যাত বডিবিল্ডার এবং অভিনেতা বরিন্দর সিংহ ঘুম্মন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবর। তিনি নিরামিষাশী ছিলেন। শৃঙ্খলা এবং কঠোর পরিশ্রমের সাহায্যে স্বাস্থ্য তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর আত্মাকে শান্তি দিন।’’
১৯৮৩ সালে পঞ্জাবের গুরুদাসপুরে বরিন্দরের জন্ম। খুব কম বয়স থেকেই শরীরচর্চার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তাঁর অনুপ্রেরণা ছিলেন সিলভাস্টার স্ট্যালোন এবং আর্নল্ড সোয়ার্ৎজ়েনেগারের মতো বডিবিল্ডার তথা অভিনেতারা।
অল্প বয়সেই ভারতীয় পেশাদার বডিবিল্ডিংয়ের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন বরিন্দর। ২০০৯ সালে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ হন তিনি। ‘মিস্টার এশিয়া’ প্রতিযোগিতায় অর্জন করেছিলেন দ্বিতীয় স্থান।
শরীরচর্চার জন্য প্রোটিনযুক্ত আমিষ খাবার খান বডিবিল্ডারেরা। কিন্তু বরিন্দর সেই বডিবিল্ডার ছিলেন, যিনি সুঠাম শরীর গড়েছিলেন কেবল নিরামিষ খাবার খেয়ে। বিশ্বের অন্যতম নিরামিশাষী বডিবিল্ডার হিসাবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চির বরিন্দরের ওজন ছিল ১২০ কেজি। খোদ সোয়ার্ৎজ়েনেগার তাঁর সংস্থার স্বাস্থ্য পণ্য এশিয়ায় বিক্রির জন্য বরিন্দরকে নিয়োগ করেছিলেন।
বরিন্দরই প্রথম ভারতীয় বডিবিল্ডার যিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিটনেস এবং বডিবিল্ডিং ফেডারেশন’-এর প্রো কার্ড অর্জন করেছিলেন।
শরীরচর্চার পাশাপাশি সিনেমা জগতেও প্রবেশ করেছিলেন বরিন্দর। ২০১২ সালে পঞ্জাবি ছবি ‘কবাডি ওয়ান্স এগেইন’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন তিনি। ছবিটিতে তিনিই প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয়ের পর বলিউডেও পাড়ি দিয়েছিলেন বরিন্দর। ২০১৪ সালে ‘রোর: টাইগার্স অফ দ্য সুন্দরবনস’-এর মাধ্যমে হিন্দি ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৯ সালে সিদ্ধার্থ মলহোত্র এবং রীতেশ দেশমুখ অভিনীত হিন্দি ছবি ‘মরজাওয়া’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন বরিন্দর।
বরিন্দরকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল জনপ্রিয় বলি অভিনেতা সলমন খান অভিনীত ‘টাইগার ৩’ ছবিতে। সেই ছবিতে শাকিল নামে এক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
বরিন্দর বর্তমানে জলন্ধরের মডেল টাউনে থাকতেন। সেখানে একটি জিমও ছিল তাঁর। বরিন্দরের মৃত্যুর খবরে বডিবিল্ডিংয়ের দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সমাজমাধ্যমে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তাঁর অনুরাগী এবং সহশিল্পীরা।