একসময় স্কুলে ক্লাস শেষ হলে গ্যারেজে কাজ করতেন। গাড়ির ইঞ্জিনের তেল মুছে দিতেন সামান্য রোজগারের জন্য। তবে পরিশ্রম এবং কঠিন অধ্যবসায়ের জেরে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন ইরফান শেখ। যে স্কুলে তিনি পড়তেন, সেই স্কুলেরই অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দিয়েছেন।
গুজরাতের অহমদাবাদের শাহপুরে জন্ম ইরফানের। তাঁর বাবা ফলবিক্রেতা। তবে আয় হত সামান্যই। তাই ছোটবেলাতেই আর্থিক সঙ্কট এবং তার ফলে তৈরি হওয়া কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হন ইরফান।
অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারের সন্তান ইরফানের বাবা মহম্মদ ইব্রাহিম শেখ ঠেলাগাড়ি নিয়ে ফল বিক্রি করতেন। যা আয় করতেন, তাতে সচ্ছল ভাবে সংসার টানতে পারতেন না তিনি।
ফলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই গ্যারেজে কাজ করতে শুরু করেন ইরফান। সরকারি স্কুলে ছুটি হওয়ার পরেই তিনি ছুটতেন স্থানীয় গ্যারেজে। একসময় স্কুল ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি।
তবে ইরফানের মা তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ জুগিয়ে যেতেন। এর পরেই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার জেদ চেপে বসে ইরফানের মধ্যে। শিক্ষা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করে স্কুলে যেতে শুরু করেন।
ইরফান যে শুধু নিজে পড়াশোনা করতেন সেটাই নয়, ভাইবোনদেরও পড়াশোনা করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতেন। পাশাপাশি বাবার কষ্ট লাঘবের জন্য করতেন গ্যারেজের কাজও।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ইরফান কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই। পড়াশোনায় ভাল হওয়ার জন্য গবেষণা করারও সুযোগ পেয়ে যান।
এর পর অবস্থা ফেরে ইরফানের। যে স্কুলে পড়তেন এক সময়, সে স্কুলেই পড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সেই স্কুলের অধ্যক্ষও হন।
শিক্ষকতা করতে এসেও থেমে যায়নি ইরফানের পথ চলা। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার পর তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই পড়া বোঝার পরিবর্তে মুখস্থ করার প্রবণতা রয়েছে।
ফলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পড়াশোনার ধরন পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করেন। আর সেই ভাবেই গুজরাত বিদ্যাপীঠে পিএইচডি করার সুযোগ আসে তাঁর কাছে। ৩ডি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শেষ করেন ইরফান।
গবেষণার ফলাফলও আশ্চর্যজনক ছিল। তিনি দেখেন, বিভিন্ন স্কুলে ৩ডি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল গতানুগতিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা পড়ুয়াদের থেকে ভাল হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ইরফান, অবশেষে সার্থক হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর গুজরাত বিদ্যাপীঠের ৭১তম সমাবর্তনে ইরফানের হাতে পিএইচডি ডিগ্রি তুলে দিয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
সম্প্রতি নিজের জীবন নিয়ে কথা বলার সময় এক সংবাদমাধ্যমকে ইরফান বলেছেন, ‘‘আমি অহমদাবাদে এএমসি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছি। এর পর আমি পিটিসি করেছি। একই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’’
তবে তাঁর সাফল্যের জন্য অধ্যাপক, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইরফান। তাঁর সাফল্যকে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ইরফানের কথায়, ‘‘এই সাফল্যে আমি খুবই খুশি। এর জন্য আমি আমার অধ্যাপক, বন্ধু এবং বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানাই।’’ ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত পড়ুয়াদের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার কাজে হাত লাগাতে চান বলেও তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি, তাঁর ভাইবোনদেরও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন ইরফান। তাঁর ছোট ভাই গুজরাত হাই কোর্টের এক জন আইনজীবী।