ভাই তেজস্বী যাদব এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাঠগড়ায় তুলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য। বিহার ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই যাদব পরিবারের কোন্দল প্রকাশ্যে!
এনডিএ শিবিরে তো বটেই, আরজেডির মধ্যেও এই নিয়ে ফিসফাস চলছে। কী ভাবে পারিবারিক দ্বন্দ্ব মেটাবেন লালু, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অবশেষে কন্যার গৃহত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন আরজেডি প্রধান। স্পষ্ট জানালেন, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি আছেন। তিনিই বিষয়টি ঠিক করবেন!
এর আগে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টের পর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজপ্রতাপ যাদবকে বহিষ্কার করেছিল আরজেডি। এর পর পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজের দল গঠন করেন তেজপ্রতাপ। তখনও প্রকাশ্যে এসেছিল যাদব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের কথা।
আর লালুর কনিষ্ঠ পুত্র তথা আরজেডির অন্যতম মাথা তেজস্বী যাদবের কথা তো সবাই জানেন। সদ্যসমাপ্ত বিহার নির্বাচনে আরজেডির শোচনীয় হারের কারণ হিসাবে তাঁর দিকেই আঙুল তুলছেন অনেকে।
তবে বিভিন্ন কারণে রোহিণী, তেজপ্রতাপ এবং তেজস্বী চর্চায় থাকলেও লালু প্রসাদ যাদব এবং রাবড়ী দেবীর মোট সন্তানের সংখ্যা ৯। লালু এবং রাবড়ী বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে। তার পর থেকে একে একে ৭ কন্যা এবং দুই পুত্র— মোট ন’জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন রাবড়ী দেবী।
রোহিণী, তেজপ্রতাপ এবং তেজস্বীর বিষয়ে জানা থাকলেও অনেকেই জানেন না লালু এবং রাবড়ীর বাকি ছয় সন্তানের কথা। সারা জীবনই কম চর্চায় থেকেছেন তাঁরা। এঁদের কেউ রয়েছেন রাজনীতিতেই, আবার কেউ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে অন্য পরিচয় তৈরি করেছেন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক লালু-রাবড়ীর ন’সন্তানের বিষয়ে। যাদব দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যার নাম মিসা ভারতী। ৪৯ বছর বয়সি মিসা এক জন চিকিৎসক। রাজনীতির আঙিনাতেও অনেক আগেই পা রেখেছেন তিনি। বর্তমানে পাটলিপুত্রের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিসার স্বামী শৈলেশ কুমার পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
মিসার নামের নেপথ্যে রয়েছে এক ইতিহাস। এটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ আইন বা মেন্টেন্যান্স অফ ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (মিসা) থেকে অনুপ্রাণিত। এই আইনেই ভারতের জরুরি অবস্থার সময় জেল খাটতে হয়েছিল লালুকে। মিসার তিন সন্তান— দুর্গা ভারতী, গৌরী ভারতী এবং অধিরাজ প্রতাপ।
লালুর দ্বিতীয় কন্যা রোহিণীও এক জন চিকিৎসক। তবে রাজনীতিক হিসাবে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেননি ৪৬ বছর বয়সি রোহিণী। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার সমরেশ সিংহকে বিয়ে করেছেন তিনি। সিঙ্গাপুরে থাকেন।
লালুকে কিডনি দান করে চর্চায় উঠে এসেছিলেন রোহিণী। ভাই তেজস্বীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সম্প্রতি বাড়ি ছাড়েন তিনি। রোহনী এবং সমরেশেরও তিন সন্তান— আয়না সিংহ, আদিত্য সিংহ এবং অরিহন্ত সিংহ।
লালু এবং রাবড়ীর তৃতীয় সন্তান চন্দা সিংহ। পাইলট বিক্রম সিংহকে বিয়ে করেন চন্দা। দুই সন্তান রয়েছে দম্পতির। চন্দা বেশির ভাগ সময় চর্চার আড়ালেই থাকেন এবং সাধারণ জীবনযাপন করেন।
লালু-রাবড়ীর চতুর্থ কন্যার নাম রাগিনী যাদব। তিনি পড়াশোনা করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। পড়াশোনা শেষে সমাজবাদী পার্টির নেতা রাহুল যাদবকে বিয়ে করেন তিনি। রাহুল এবং রাগিনীর দুই পুত্র। চন্দার মতো রাগিনীও রাজনীতি থেকে দূরেই থাকেন।
লালুর পঞ্চম সন্তানও কন্যা। নাম, হেমা যাদব। জানা যায়, হেমাও বিটেক ডিগ্রিধারী। বিয়ে করেছেন তেজ যাদবকে। তিনিও সক্রিয় ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। চর্চার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন তিনিও। হেমারও দুই সন্তান বলে জানা গিয়েছে।
লালুর ষষ্ঠ কন্যা অনুষ্কা রাও পেশায় এক জন অন্দরসজ্জা শিল্পী। তবে পড়াশোনা করেছেন আইন নিয়ে। হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক চিরঞ্জীব রাওকে বিয়ে করেছেন অনুষ্কা। চিরঞ্জীবের বাবা অজয়ও হরিয়ানার একসময়ের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা। চিরঞ্জীব এবং অনুষ্কার তিন সন্তান— নন্দিনী, রাজলক্ষ্মী এবং বিক্রমাদিত্য।
লালু এবং রাবড়ীর কনিষ্ঠ কন্যার নাম রাজলক্ষ্মী। রাজলক্ষ্মীও ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক। সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন সাংসদ তেজপ্রতাপ সিংহ যাদবকে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন তিনি। দম্পতির দুই সন্তান— অভ্যুদয় প্রতাপ এবং জয় হর্ষবর্ধন।
তেজপ্রতাপ যাদব লালুর জ্যেষ্ঠ পুত্র তথা অষ্টম সন্তান। অতীতে বাবার দল আরজেডির হয়ে একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিহারের মন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও আরজেডির সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই তেজপ্রতাপের।
বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে তেজপ্রতাপকে দল এবং পরিবার থেকে বহিষ্কার করেন লালু। এর পরেই তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা নাটকীয় রূপ নেয়। ‘জনশক্তি জনতা দল’ (জেজেডি) নামে নতুন দল গড়েন তিনি।
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডির অন্যতম সর্বেসর্বা তেজস্বী যাদব, লালু এবং রাবড়ী দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান তথা কনিষ্ঠ পুত্র। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, বকলমে তিনিই এখন আরজেডির শেষ কথা।
৩৫ বছর বয়সি তেজস্বী দ্বাদশ শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে কিছু সময়ের জন্য পেশাদার ক্রিকেট খেলেন তিনি। বাল্যবন্ধু র্যাচেল গোডিনহো ওরফে রাজশ্রী যাদবকে বিয়ে করেন তেজস্বী। দম্পতির দুই সন্তান।
২০২৫ সালের বিহার নির্বাচনে তেজস্বীকেই মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে এনডিএ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে আরজেডি এবং মহাগঠবন্ধনের বাকি শরিকেরা। এই তেজস্বী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধেই হয়রানির অভিযোগ তুলে ঘর ছেড়েছেন দিদি রোহিণী।