Sam Altman Sacked

কলেজছুট, বহু সংস্থা গড়ে সফল, চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা অল্টম্যানকে কেন ছাঁটাই করল ওপেনএআই?

চ্যাটজিপিটি আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই নিজের সৃষ্টির উপর ভরসা রেখেছিলেন স্যাম। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি কৃত্রিম মেধাকে কেবল মানবিক কাজে ব্যবহার করার পক্ষপাতী এবং বিশ্বাসী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১২:০৪
Share:
০১ ২৬

ওপেনএআই সংস্থার সিইও পদ থেকে ছাঁটাই করা হল কৃত্রিম মেধা চ্যাটজিপিটি-র ‘স্রষ্টা’ স্যাম অল্টম্যানকে। ওপেনএআই ‘স্যামের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার উপর আস্থা হারানোর’ কারণেই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বলে সংস্থার তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে।

০২ ২৬

সিইও পদ খোয়ানোর পর অল্টম্যান ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গিয়ে লেখেন, “ওপেনএআই-এ আমি যে সময় কাটিয়েছি, তা ভাল ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমার জীবনে এই সিদ্ধান্ত অনেক বদল আনবে। আশা করি বিশ্বেরও কিছুটা পরিবর্তন হবে। ওপেনএআই-এ আমার সব থেকে বেশি ভাল লেগেছে প্রতিভাবান মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে। পরবর্তী কালে আমি কী করব, তা নিয়ে পরে বলব।”

Advertisement
০৩ ২৬

চ্যাটজিপিটি আবিষ্কারের পর থেকেই কৃত্রিম মেধা (এআই) নিয়ে নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল বিশ্ববাসীর মনে। কৌতূহল তৈরি হয়েছিল স্রষ্টা স্যামকে নিয়েও।

০৪ ২৬

চ্যাটজিপিটি বানিয়েই যে স্যাম সুখ্যাতির আলোকবৃত্তে এসেছেন, তেমনটা নয়। প্রায় দু’দশক ধরে তিনি সিলিকন ভ্যালির অন্যতম চর্চিত ব্যক্তি।

০৫ ২৬

কিন্তু কে এই স্যাম? কী ভাবেই বা কলেজছুট স্যাম হয়ে উঠলেন বিশ্বের অন্যতম নামী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ?

০৬ ২৬

২০০৫ সালে কলেজ ছাড়েন স্যাম। তা-ও আবার যে সে কলেজ থেকে নয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। স্ট্যানফোর্ডে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে হঠাৎই এক দিন তিনি প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

০৭ ২৬

স্টিভ জোবস এবং বিল গেট্‌সদের সমপর্যায়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকে কলেজ ছাড়ার পর মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা শুরু করেন স্যাম।

০৮ ২৬

স্যাম সেই সংস্থার নাম দেন ‘লুপ্ট’। ‘লুপ্ট’-এর মাধ্যমে যে কোনও ব্যবহারকারী তাঁদের লোকেশন অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারতেন। সেই সময়ে বাজারে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি ‘লুপ্ট’। ফলে সংস্থা বাঁচাতে ‘ওয়াই কম্বিনেটর’ নামে এক সংস্থার দ্বারস্থ হন স্যাম।

০৯ ২৬

‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর হাত ধরেই সাফল্য পেয়েছে এয়ার বিএনবি, রেডিট, ড্রপবক্স, কয়েনবেস-এর মতো স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি।

১০ ২৬

সংস্থা চালানোর জন্য ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর সাহায্যে বাজার থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার লগ্নি তোলেন স্যাম। অ্যাপল এবং ব্ল্যাকবেরি সংস্থার কাছ থেকে স্বীকৃতিও পায় তাঁর সংস্থা।

১১ ২৬

সাত বছর পর ধীরে ধীরে একই ধরনের অন্য অনেক সংস্থা বাজারে চলে আসায় ‘লুপ্ট’-এর প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে ‘লুপ্ট’ বিক্রি করে দেন আমেরিকার আর্থিক প্রযুক্তি সংস্থা ‘গ্রিন ডট কর্পোরেশন’-এর কাছে।

১২ ২৬

‘লুপ্ট’-এর মালিকানা হারানো সত্ত্বেও সেই সংস্থাই সিলিকন ভ্যালির দিকে দিকে স্যামের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছিল। ‘লুপ্ট’-এর মালিকানা গেলেও ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর সঙ্গে স্যামের সম্পর্কে ছেদ পড়েনি।

১৩ ২৬

স্যাম ২০১২ সালে ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর আগে এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট ছিলেন আমেরিকার বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী পল গ্রাহাম।

১৪ ২৬

আরও তিন বছর পর অর্থাৎ, ২০১৫ সালে আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক, লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান এবং আরও কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ‘ওপেনএআই’ নামে একটি কৃত্রিম মেধা গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন স্যাম। স্যাম সেই সময় দাবি করেন, এআই ব্যবহার করে মানব জাতির উপকার করা এই সংস্থা তৈরির মূল লক্ষ্য।

১৫ ২৬

২০১৬ সালে স্যাম ঘোষণা করেন, ‘ওপেনএআই’ এমন একটি কৃত্রিম মেধা তৈরি করছে যার বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধির সঙ্গে মেলে। সংস্থার তরফে এই কৃত্রিম মেধার নাম দেওয়া হয় জিপিটি-১।

১৬ ২৬

২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ‘ওপেনএআই’ আরও একটি কৃত্রিম মেধা ‘দাল-ই’ তৈরির কথা ঘোষণা করে যা ব্যবহারকারীর বর্ণনার ভিত্তিতে ছবি আঁকতে সক্ষম।

১৭ ২৬

গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববাজারে সকলকে চমক দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ওপেনএআই-এর কৃত্রিম মেধা ‘চ্যাটজিপিটি’। এটিই এখনও পর্যন্ত তৈরি হওয়া সবচেয়ে উন্নত মানের কৃত্রিম মেধা নির্ভর চ্যাটবট বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি আঁকা, কথা বলা, গান শোনানোর মতো একাধিক কাজ করতে সক্ষম ‘চ্যাটজিপিটি’।

১৮ ২৬

ইতিমধ্যেই চ্যাটজিপিটিতে মজেছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। লক্ষ লক্ষ মানুষ চ্যাটজিপিটি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা শুনিয়েছেন। কৃত্রিম মেধা বিশ্ববাজারে বহু মানুষের চাকরি ‘খেতে’ পারে বলেও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন অনেকে।

১৯ ২৬

এমনকি, কৃত্রিম মেধা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন খোদ কৃত্রিম মেধার ‘গডফাদার’ জিওফ্রে হিন্টন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিন্টন জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করে চলেছে সমাজের একাংশ। ভুয়ো ছবি এবং খবর তৈরিতে যে ভাবে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হিন্টন।

২০ ২৬

তিনি উল্লেখ করেছেন, এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সকলেই নতুন নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন। ফলে এর অপব্যবহারকে ঠেকানো অসম্ভব হয়ে উঠছে। তাঁর দাবি, কৃত্রিম মেধা বিশ্বকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কোনটা ‘সত্য’ আর কোনটা ‘মিথ্যা’ তা খুঁজে বার করা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়বে।

২১ ২৬

কর্মসংস্থানের উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কুপ্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্ন হিন্টন স্বীকার করেছেন, এআই-এর নিজস্ব ভাবে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। এমনকি মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। ফলে বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মীছাঁটাই বাড়তে পারে। চাকরির অভাব দেখা দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপকারিতা এবং ঝুঁকি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলার জন্য গুগল থেকে পদত্যাগও করেন তিনি।

২২ ২৬

তবে প্রথম থেকে নিজের সৃষ্টির উপর ভরসা রেখেছিলেন স্যাম। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি কৃত্রিম মেধাকে কেবল মানবিক কাজে ব্যবহার করার পক্ষপাতী এবং বিশ্বাসী।

২৩ ২৬

কৃত্রিম মেধা চ্যাটজিপিটি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অল্টম্যানেরই। তাঁকেই চ্যাটজিপিটি-র স্রষ্টা হিসাবে চেনে সারা বিশ্ব। সেই অল্টম্যানকেই সংস্থার সিইও পদ থেকে বরখাস্ত করল ওপেনএআই।

২৪ ২৬

আপাতত অল্টম্যানের দায়িত্ব সামলাবেন সংস্থারই উচ্চপদস্থ কর্তা মিরা মুরাটি। পরে স্থায়ী ভাবে সংস্থার সিইও নিয়োগ করা হবে।

২৫ ২৬

অল্টম্যানকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ওপেনএআই থেকে পদত্যাগ করেছেন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যানও। শনিবার তিনি তাঁর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। সমাজমাধ্যমে গ্রেগ লিখেছেন, ‘‘৮ বছর আগে আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সংস্থার শুরু। তার পর থেকে আমরা সবাই মিলে যা তৈরি করেছি, তার জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে অনেক কঠিন এবং ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু আজকের খবরের ভিত্তিতে আমি পদত্যাগ করলাম।’’

২৬ ২৬

অন্য দিকে ওপেনএআই-এর তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্যামকে নিয়ে অনেক পর্যালোচনার পর সংস্থার বোর্ড তাঁকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থা বলেছে, ‘‘অল্টম্যান বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ বজায় রাখেননি। এটি তাঁর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।’’ বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে, ‘‘স্যাম যে ওপেনএআই-এর নেতৃত্ব দিতে পারবেন, সে বিষয়ে তাঁর উপর থেকে আস্থা হারিয়েছে বোর্ড।’’

—ফাইল ছবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement