এত দিন তা সীমাবদ্ধ ছিল অসম আর অহমিয়াদের মধ্যে। এ বার তা পৌঁছে গেল গোটা দুনিয়ায়। বিশ্বের দরবারে নতুন স্বীকৃতি পেল অসমের বিহু। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠল এই সাংস্কৃতিক উৎসবের।
বৃহস্পতিবার সরুসাজাই স্টেডিয়ামে বিহু নাচলেন ১১ হাজার ৩০৪ জন ছেলেমেয়ে। মেয়েদের পরনে ছিল মেখলা-চাদর। ছেলেরা পরেছিলেন ধুতি-কুর্তা। উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার দর্শক। আর সেই বিহু নাচ দেখতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সদর দফতর লন্ডন থেকে এসেছিলেন সদস্যেরা।
অসমের বিহু গানের সঙ্গে নেচেছেন ওই ১১ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে। বেজেছে ঢোল, পেপা (স্থানীয় বাঁশি)। একসঙ্গে এক প্রাঙ্গণে এত হাজার মানুষ এর আগে কখনও বিহু নাচ করেননি। সে কারণেই নজির গড়ল এই অনুষ্ঠান।
বিহু নাচের কিছু ক্ষণ পর স্টেডিয়ামে ঢোল বাজান তিন হাজার ঢুলিয়া (বিহু ঢাকি)। তৈরি হয় নতুন এক নজির। দ্বিতীয় বার নাম ওঠে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। একই স্টেডিয়ামে এত জন ঢাকি এর আগে একসঙ্গে কখনও জড়ো হয়ে ঢোল বাজাননি।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমরা বিহু নাচ এবং ঢোল বাজানো, দু’টি ক্ষেত্রেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছি।’’ সরুসাজাই স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে এই কথা জানান হিমন্ত।
অসমে শুক্রবার থেকে শুরু রঙ্গালি বিহু। তার আগে বৃহস্পতিবার নজির গড়ল তাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক বিহু নাচ। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যদিও তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি।
তবে শুক্রবার ওই একই সরুসাজাই স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর উপস্থিতিতে বিহু নাচবেন শিল্পীরা। বেশ কিছু প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করার জন্য অসমে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি।
সরুসাজাই স্টেডিয়ামে বিহু নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে চাঙ্গসারিতে অসমের প্রথম এমস উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গুয়াহাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এই এমস।
এমস উদ্বোধনের পর সরুসাজাই স্টেডিয়ামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানেই তাঁর হাতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের শংসাপত্র তুলে দিতে চলেছেন সংগঠনের সদস্যেরা।
কেন বিরাট পর্যায়ে এই বিহু অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন, তার কারণ নিজেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি জানিয়েছে, রাজ্যে পর্যটক টানতেই বিহুকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চাইছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নাগাল্যান্ডে হর্নবিল উৎসবে হাজার হাজার পর্যটক জড়ো হন। আমরাও এই বার্ষিক রঙ্গালি বিহু উৎসব নিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি।’’
বৃহস্পতিবার সরুসাজাই স্টেডিয়ামে বিহু নাচে অংশ নিয়েছেন অসমের বিভিন্ন জেলার ছেলেমেয়ে। তার আগে তিন দিন ধরে স্টেডিয়ামে এসে মহড়া দিয়েছেন তাঁরা।
বিহু নাচে সব থেকে বেশি অংশগ্রহণ করেছেন অসমের পূর্ব দিকে ডিব্রুগড় জেলা থেকে। সেখান থেকে ১,৪০০ জন যোগ দিয়েছেন বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে। শুক্রবারও প্রধানমন্ত্রীর সামনে নাচবেন তাঁরা।
সব থেকে কম অংশগ্রহণ করেছেন অসমের দক্ষিণে সালমারা জেলা থেকে। সেখান থেকে মাত্র ২০ জন যোগ দিয়েছেন বিহু নাচে।
বুধবারই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, যাঁরা সরুসাজাই স্টেডিয়ামে বিহু নাচে যোগ দেবেন, তাঁদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। বিহুর পোশাক মেখলা-চাদর এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে শিল্পীদের।
অসমে নববর্ষ উদ্যাপন করা হয় এই রঙ্গালি বিহু মাধ্যমে। শুক্রবার থেকে সাত দিন ধরে চলে অনুষ্ঠান। বিহু আসলে কৃষির উৎসব।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু হয় এই বিহু উদ্যাপন। অহমিয়ারা একে বলে ‘গরু বিহু’। এই দিন গরুকে নদী বা পুকুরে নিয়ে গিয়ে হলুদ এবং কালো মুগ দিয়ে স্নান করানো হয়।
অহমিয়া ক্যালেন্ডার মেনে বোহাগের প্রথম দিন পালন করা হয় ‘মানুহ্ বিহু’। অর্থাৎ মানুষের বিহু। এই দিন অহমিয়ারা পরস্পরকে গামুসা (অসমে তৈরি গামছা) দেন। এই উপহারকে বলে ‘বিহুয়ান’।
অসমে তৈরি মুগা সিল্কের তৈরি মেখলা-চাদরই মূলত পরেন অহমিয়ারা। ছেলেরা পরেন ধুতি-কুর্তা। মোষের সিংয়ের তৈরি পেপা এবং ঢোল বাজিয়ে বিহু নাচের প্রথা রয়েছে। রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়া বলেন, মূলত অসমের লোকসংস্কৃতিকে মেলে ধরাই এই বিহু উৎসবের উদ্দেশ্য।