জন্মদাগ আমাদের শরীরেরই অংশ। বহু মানুষের শরীরেই জন্মের পর থেকে কালো বা লাল রঙের জন্মদাগ দেখা যায়। মুখে, হাতে, পায়ে প্রভৃতি স্থানে জন্মদাগ হয়ে পারে। এর কোনও নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি নেই। কারও ক্ষেত্রে এটি ছোট্ট টিপের ন্যায় হয়, কারও ক্ষেত্রে আবার বেশ বড় আকৃতিরও হতে দেখা যায়।
ভিন্ন ভিন্ন মানুষের শরীরে পৃথক পৃথক স্থানে জন্মদাগ থাকতে পারে। শরীরে থাকা জন্মদাগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের পরিচয় রক্ষা করতেও সাহায্য করে। জ্যোতিষশাস্ত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্যে মানুষের শরীরের নানা স্থানে থাকা জন্মদাগের বিচার করে তাঁদের চরিত্র, পূর্বজন্মের কথা প্রভৃতি সম্বন্ধে নানা গোপন তথ্য বলে দেওয়া যায়। স্থানবিশেষে জন্মদাগের বিশেষত্বও বদলে যায় বলে জানা যাচ্ছে। শরীরের কোন স্থানে থাকা জন্মদাগের কী অর্থ জেনে নিন।
গোড়ালি: যে সকল ব্যক্তির গোড়ালিতে জন্মদাগ থাকে, তাঁরা স্বাধীনচেতা প্রকৃতির হন। এঁরা নিজের মতো চলতে পছন্দ করেন। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়েও নিতে পারেন। এঁরা যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারেন।
এঁরা একঘেয়ে জীবন পছন্দ করেন না। কোনও বাধাধরা নিয়মে বেড়াজালে এঁদের আবদ্ধ রাখা যায় না। এঁরা সর্বদা নতুন জিনিস জানতে ও শিখতে আগ্রহী হন। এই সকল ব্যক্তি কঠিন পরিস্থিতিতেও ভেঙে পড়েন না। তবে অপরের পরামর্শ নিতেও পছন্দ করেন না। নিজের ভাবনার উপর ভর করে জটিল সময় থেকে নিজেদের বার করে আনেন এঁরা।
গাল: গালে জন্মদাগ থাকা জাতক-জাতিকারা আবেগতাড়িত হন। এঁরা যে কোনও কাজ যুক্তি দিয়ে নয়, আবেগ দিয়ে করতে ভালবাসেন। সেই কারণে এঁদের শান্তিও বিঘ্নিত হয়। তবুও এঁরা নিজেদের আবেগ আঁকড়ে বসে থাকতে পছন্দ করেন।
এই সকল জাতক-জাতিকা শান্ত জীবন কাটাতে ভালবাসেন। কিন্তু তাঁদের আবেগ সেই শান্তির মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নানা অনুভূতির ঘনঘটায় এঁরা নিজেদেরই হারিয়ে ফেলেন।
চিবুক: বহু মানুষের চিবুকেও জন্মদাগ থাকতে দেখা যায়। এই সকল ব্যক্তি অত্যন্ত দৃঢ় মানসিকতার হন। এঁরা নিজের কাজ নিজে করে নিতেই বিশ্বাসী, অপরের সাহায্য দরকার এঁদের পড়ে না। তবে অপরকে সাহায্য করতে ভালবাসেন এই সকল জাতক-জাতিকা।
কেবল সাহায্যই নয়, অপরকে অনুপ্রাণিতও করেন এঁরা। আশপাশের মানুষেরা কোনও সমস্যায় জড়ালে সাহায্যের জন্য সর্বদা এঁদের কাছেই ছুটে আসেন। এঁরা কখনও কাউকে ফেরান না। সর্বদা নিজের যথাসাধ্য দিয়ে অপরকে সাহায্য করেন। চিবুকে জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে নেতৃত্বদান করার ক্ষমতা জন্মগত ভাবেই থাকে।
নাক: নাকে জন্মদাগ থাকা জাতক-জাতিকারা সৃজনশীল প্রকৃতির হন। এঁরা বাস্তবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নারাজ। নিজের ভাবনার জগতে ডুবে থাকতেই এই সকল ব্যক্তি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দার্শনিক চিন্তাভাবনায় এঁদের জুড়ি মেলা ভার।
এই সকল জাতক-জাতিকা কৌতূহলী প্রকৃতির হন। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, জীবনের আসল মানে কী এ সকল নানা চিন্তা এঁদের মাথায় সর্বদা খেলা করে বেড়ায়। তবে সৃজনশীল যে কোনও কাজে এঁরা অত্যন্ত পটু হন। পেশা হিসাবে সৃজনশীলতার প্রয়োজন এমন কোনও ক্ষেত্র বেছে নিলে এঁরা দারুণ সফলতা পান।
ঊরু: যে সকল ব্যক্তির ঊরুতে জন্মদাগ থাকে, তাঁরা অত্যন্ত দয়ালু হন। অপরের ক্ষতি করার কথা এঁরা কখনও ভাবতেই পাবেন না। সকলকে নিয়ে চলতে ভালবাসেন এঁরা। কাছের মানুষের খেয়াল কী ভাবে রাখতে হয় তা এই সকল জাতক-জাতিকার খুবই ভাল করে জানা রয়েছে। অপরকে কষ্ট দেওয়ার মতো কোনও কাজ এঁরা করেন না।
তবে এটি ছাড়াও এঁদের আরও নানা গুণ রয়েছে। ঊরুর কোন অঞ্চলে জন্মদাগ রয়েছে সেটির উপরও অনেক কিছুই নির্ভর করে। ছেলে বা মেয়ে, উভয়েরই যদি বাঁ দিকের ঊরুতে জন্মদাগ থাকে, তা হলে তাঁরা জীবনে অনেক সাফল্য পাবেন। এঁদের ভাগ্য সর্বদা এঁদের সঙ্গে থাকবে। আর ঊরুর ভিতরের দিকে জন্মদাগ থাকে যাঁদের, তাঁদের অর্থভাগ্য খুব ভাল হয়।
হাত: হাতে জন্মদাগ থাকা জাতক-জাতিকাদের মানসিক সংযোগ খুব ভাল থাকে বলে মনে করা হয়। এমন কোনও কাজ, যা করতে হাতের বলের প্রয়োজন হয়, সে সকল কাজ এঁরা খুব ভাল করতে পারেন। এঁরা সর্বকর্ম নিপুণ হন। এঁদের হাতের কাজ খুব ভাল হয়।
হাতে জন্মদাগ থাকারও আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। কোন হাতে জন্মদাগটি রয়েছে সেটির উপর নির্ভর করে। বাঁ হাতে জন্মদাগ থাকা ছেলে-মেয়েরা দান করতে বেশি ভালবাসেন। অন্য দিকে ডান হাতে জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিরা দেওয়ার থেকে নেওয়ার ব্যাপারে বেশি এগিয়ে থাকেন বলে মনে করা হয়।
কপাল: যে সকল জাতক-জাতিকাদের কপালে জন্মদাগ থাকে, তাঁরা অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত হন। এঁরা সোজাসাপটা ভাবনায় বিশ্বাসী, মনের গহীনে প্যাঁচ কষে চলা এঁদের প্রকৃতি নয়। যে কোনও ব্যাপারে এঁদের অশেষ জ্ঞান থাকে। সেই কারণে অনেকের ভিড়েও সকলের নজর এঁদের উপরে গিয়েই পড়ে।
কপালে জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিরা বন্ধুমহলে ‘মুশকিল আসান’ হিসাবে পরিচিত। যে কোনও সমস্যায় তাঁরা এঁদের কাছেই ছুটে আসেন। এঁরাও ধৈর্য নিয়ে সবটা শোনেন এবং বন্ধুদের সমস্যার সমাধান করেন। তবে এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও দম্ভ কাজ করে না।
কান: কানে জন্মদাগ থাকা জাতক-জাতিকারা পেশাক্ষেত্রে দারুণ সফল হন। এঁরা প্রযুক্তিগত ভাবে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকেন। যে কোনও নতুন বিষয় খুব সহজেই শিখে যান কানে জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিরা। সেই কারণে কর্মক্ষেত্রে এঁরা অন্যদের ছাপিয়ে যান। কম বয়সেই সফলতার স্বাদ পান।
এই সকল ব্যক্তি অত্যন্ত দায়িত্ববানও হন। যে কোনও দায়িত্ব এঁদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। এঁরা যে কোনও পরিস্থিতিতে সহজে মানিয়ে নিতে পারেন। কখনও কোনও বিষয় নিয়ে এঁরা অভিযোগ করেন না। এই সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য এঁরা সহজেই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম।
গলা: যে সকল ব্যক্তির গলায় জন্মদাগ থাকে, তাঁরা অত্যন্ত সাহসী হন। এঁদের ধৈর্যক্ষমতা হয় অসীম। তবে গলায় জন্মদাগ থাকাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবেও মনে করা হয়। যাঁদের গলায় জন্মদাগ থাকে, তাঁরা নিজেদের সকল লক্ষ্যপূরণে সফল হন বলে মনে করা হয়।
ধৈর্যশীল হওয়ার কারণে কঠিন সময়েও গলায় জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিরা ভেঙে পড়েন না। শিরদাঁড়া সোজা রেখে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে জানেন এঁরা। সেই কারণে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে পৌঁছোতে এঁদের বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয় না।
পিঠ: পিঠে জন্মদাগ থাকা জাতক-জাতিকারাও নিজের কাজ নিজে করতে ভালবাসেন। অপরের উপর ভরসা করে থাকেন না। এঁদের অর্থভাগ্যও অত্যন্ত ভাল হয়। পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি লাভের সম্ভাবনা দেখা যায়। তবে সেটা না হলেও এঁদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, এই সকল ব্যক্তি নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করার ব্যাপারেই বিশ্বাসী।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে ভালবাসেন পিঠে জন্মদাগ থাকা ব্যক্তিরা। এঁদের ভয় একটু কম। ঝুঁকি নিয়ে কোনও কাজ করতে গিয়ে যদি বিপদের সম্মুখীন হন, তা হলেও এঁরা ধৈর্য হারান না। নিজের বলে সেই পরিস্থিতি থেকে ঠিক বেরিয়ে আসেন এঁরা।