সাত বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু। আশির দশকে জনপ্রিয় নায়িকাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু প্রযোজকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমনকি, ছবিনির্মাতাদের কাছে বিশেষ শর্ত রাখার কারণে বহু সফল ছবি হাতছাড়া হয় তাঁর। তিনি বলি অভিনেত্রী পদ্মিনী কোল্হাপুরী।
১৯৬৫ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বইয়ে জন্ম পদ্মিনীর। তাঁর বাবা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। বাব-মা এবং দুই বোনের সঙ্গে থাকতেন পদ্মিনী। তাঁর দুই বোনও পেশায় অভিনেত্রী। তাঁর দিদি শিবাঙ্গি আবার বলি অভিনেতা শক্তি কপূরের স্ত্রী। ছোটবেলা থেকে হিন্দি ছবিতে গান গাইতেন পদ্মিনী। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল তাঁর।
মাত্র ১০ বছর বয়সে দেব আনন্দের ‘ইশক ইশক ইশক’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসাবে কাজ করেছিলেন পদ্মিনী। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই ছবিতে বলি অভিনেত্রী জ়ীনাত আমনের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল পদ্মিনীকে। তার পর থেকেই বলিপাড়ায় পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
বলিউডের জনপ্রিয় ছবিনির্মাতাদের কাছ থেকে একের পর এক অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন পদ্মিনী। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইনসাফ কা তারাজ়ু’ ছবিটি পদ্মিনীর কেরিয়ার বদলে দেয়। তার পর বলি অভিনেতা রাজ কপূরের পরিচালনায় এবং প্রযোজনায় ‘প্রেম রোগ’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় নায়িকাকে। ‘প্রেম রোগ’ ছবির সাফল্যের পর আশির দশকের ব্যস্ততম অভিনেত্রীদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন পদ্মিনী।
‘প্যার ঝুকতা নহি’, ‘বিধাতা’, ‘ও সাত দিন’, ‘স্বর্গ সে সুন্দর’ এবং ‘আহিস্তা আহিস্তা’-র মতো বহু হিন্দি ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পদ্মিনী। মিঠুন চক্রবর্তী, জীতেন্দ্র, ঋষি কপূর এবং রাজেশ খন্নার মতো বিখ্যাত তারকাদের সঙ্গে বড়পর্দায় জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি যখন সাফল্যের স্বাদ উপভোগ করছেন, তখনই অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় ওঠে। বলিউডের এক প্রযোজকের প্রেমে পড়েন নায়িকা।
১৯৮৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘অ্যায়সা প্যার কহাঁ’ নামের একটি হিন্দি ছবি। সেই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন প্রদীপ শর্মা ওরফে তুতু শর্মা। সেটে প্রদীপের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল পদ্মিনীর। দু’জনের বন্ধুত্ব ক্রমে গাঢ় হতে থাকে। তাঁদের সম্পর্ক প্রেমে পরিণতি পায়।
কানাঘুষো শোনা যায়, প্রদীপের সঙ্গে সম্পর্কের কথা পদ্মিনী বাড়িতে জানালে তাঁর পরিবার আপত্তি জানায়। কিন্তু নায়িকা তখন প্রেমে পাগল। পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রদীপকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। প্রযোজকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়েও করেছিলেন তিনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, বলি অভিনেত্রী পুনম ঢিল্লোঁর সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব ছিল পদ্মিনীর। তিনিই নাকি পদ্মিনী এবং প্রদীপকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রযোজককে বিয়ে করেছিলেন নায়িকা। বিয়ের চার বছর পর ১৯৯০ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পদ্মিনী।
পদ্মিনীর পুত্রের নাম প্রিয়ঙ্ক শর্মা। বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও বলিউডে কেরিয়ার গড়ে তুলেছেন। ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’ নামের ছবিতে রাজকুমার সন্তোষীর সঙ্গে সহ-পরিচালনার কাজ করেন তিনি। ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সব কুশল মঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বলি প্রযোজক করিম মোরানির কন্যাকে বিয়ে করেন প্রিয়ঙ্ক।
পদ্মিনীর দাবি, অতীতে তাঁর ছেড়ে দেওয়া একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রেখা, শ্রীদেবী এবং রতি অগ্নিহোত্রীর মতো অভিনেত্রী। ‘এক দুজে কে লিয়ে’ ছবিতে রতি অগ্নিহোত্রীর, ‘সিলসিলা’ ছবিতে রেখার এবং ‘তোফা’ ছবিতে শ্রীদেবীর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রথমে দেওয়া হয়েছিল পদ্মিনীকে। তিনি নাকি সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করা একটি ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার আফসোস রয়ে গিয়েছে তাঁর।
এক সাক্ষাৎকারে পদ্মিনী জানিয়েছিলেন যে, ‘রাম তেরী গঙ্গা মৈলী’ ছবির নায়িকা হিসাবে পদ্মিনীই প্রথম পছন্দ ছিলেন পরিচালক রাজ কপূরের। কিন্তু চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ছবিতে একটি চুম্বনের দৃশ্য রাখা হয়েছিল। পদ্মিনী সেই দৃশ্যে অভিনয় করতে আপত্তি জানিয়ে রাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
পদ্মিনীর পরিবর্তে মন্দাকিনীকে নিয়ে ছবির শুটিং শুরু হলেও শুটিংয়ের ৪৫ দিন পরেও নাকি পদ্মিনীর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন রাজ। অভিনেত্রী নাকি দ্বিতীয় বারও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ছবি মুক্তির পর বক্স অফিসে সাফল্য দেখে পদ্মিনী তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোস করেছিলেন।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠপুত্র চার্লসকে প্রকাশ্যে চুম্বন করেছিলেন পদ্মিনী। বিদেশের নানা পত্রিকায় রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও হয়ে উঠেছিলেন অভিনেত্রী। আশির দশকে ভারত সফরে এসেছিলেন চার্লস। মুম্বইয়ে এসে হঠাৎ সিনেমার শুটিং দেখার শখ জেগেছিল তাঁর। সেই সূত্রেই পদ্মিনীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল চার্লসের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের রাজকমল স্টুডিয়োয় ‘আহিস্তা আহিস্তা’ ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন পদ্মিনী। চার্লস সেই স্টুডিয়োয় পৌঁছোলে পদ্মিনী মালা পরিয়ে তাঁকে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। তার পর সকলের সামনে চার্লসের গালে চুমু খেয়েছিলেন তিনি।
নায়িকার চুমু খাওয়ার ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন চার্লস। পরে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে পদ্মিনীর পরিচিতি হয়েছিল ‘যুবরাজ চার্লসকে চুমু খাওয়া নায়িকা’ হিসাবে। এই ঘটনাটি নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছিল। পদ্মিনী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি এক বার লন্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। তখনও নাকি তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘আপনিই কি সেই মহিলা যিনি চার্লসকে চুমু খেয়েছিলেন?’’
চলতি মাসে ৬০ বছরে পা দিলেন পদ্মিনী। ২০১৯ সালে ‘পানীপত’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। চলতি বছরে হরর ঘরানার একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় দেখা যেতে পারে তাঁর।